ভ্রমণ

পাহাড়ি ঝরনায় গিয়ে কেন পথ হারাচ্ছেন পর্যটকরা?

এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

Advertisement

পাহাড়ি ঝরনার রানি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা। সেখানে আছে ছোট-বড় প্রায় ১০টি ঝরনা। যার মধ্যে অন্যতম হলো- খৈইয়াছড়া ঝরনা, নাপিত্তাছড়া, সহস্রধারা, মহামায়া, বাওয়াছড়া, রূপসী ঝরনা, বোয়ালিয়া ঝরনা, হরিণাকুণ্ড ঝরনা, সোনাইছড়ি ঝরনা ও মেলকুম গিরিপথ।

প্রতিদিন এসব ঝরনা দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপ্রিয় পর্যটকরা ভিড় করছেন। তবে সঙ্গে গাইড না নেওয়ায় প্রায় সময়ই পথ হারিয়ে ফেলছেন তারা। আবার ঘটছে দুর্ঘটনাও।

আরও পড়ুন: বর্ষায় ঘুরে আসুন বান্দরবানের ৪ জলপ্রপাতে 

Advertisement

সম্প্রতি মিরসরাইয়ের দুটি ঝরনার গহিন জঙ্গলে ৪টি দলের ৩০জন পর্যটক হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাদের সবাইকে উদ্ধার করা গেলেও এসব ঘটনায় চিন্তিত বন বিভাগ, ইজারাদার, পুলিশ ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, গত ২৮ জুন উপজেলার হাদিফকিরহাট সোনাইছড়ি ঝরনায় পথ হারান ১৫ জন। পরে ৯৯৯ কল দিলে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এর আগে ঢাকা থেকে আসা ৫ পর্যটক খৈয়াছড়া ঝরনার ওপরে উঠে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে দিক ভুল করে হারিয়ে যান বনের গভীরে।

পরবর্তী সময়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) খবর পেয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় তাদের উদ্ধার করে মিরসরাই থানার পুলিশ। এর আগে উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মেলকুম গিরিপথে গত ১৪ মার্চ ও ২৪ এপ্রিল পর্যটকদের পথ ভুলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন: বর্ষায় পাহাড়ে ঘুরতে গেলে যেসব বিষয়ে সতর্ক হবেন 

Advertisement

দুই দফায় হারিয়ে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধার করে জোরারগঞ্জ থানার পুলিশ। জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদ হোসেন বলেন, ‘নতুনভাবে আবিষ্কার হওয়া মেলকুম গিরিখাতটি দুর্গম এলাকায় হওয়ায় পর্যটকেরা দিক ভুল করেন।’

‘অভিজ্ঞ গাইড ছাড়া এ স্থানে না যেতে পর্যটকদের অনুরোধ করা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

এছাড়া পর্যটকরা সঙ্গে গাইড না নেওয়ার কারণে ঝরনায় প্রায় সময় দুর্ঘটনাও ঘটছে। গত ৫ বছরে ঝরনার উপর থেকে পড়ে ও পানির স্রোতে ভেসে অন্তত ১৬জন পর্যটক মারা গেছে। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক পর্যটক।

জানা গেছে, কিছু বিষয়ে সতর্ক না থাকায় অনেক সময়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। পর্যটকদের অসতর্কতার জন্যই দুর্ঘটনা ঘটছে ও তারা হারিয়ে যাচ্ছেনন। তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন মিরসরাই উপজেলা ও থানা প্রশাসন।

আরও পড়ুন: বর্ষায় মিরসরাইয়ের ৮ ঝরনায় ঢল নেমেছে পর্যটকদের 

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া খেয়ালখুশি মতো গহীন জঙ্গলসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এলোমেলোভাবে বেড়াতে গিয়ে ছিনতাইয়ের কবলেও পড়ছেন পর্যটকরা। এর জন্য অনেকেই দর্শনার্থীদের দায়িত্বহীনতা ও অসংযত আচরণকে দায়ী করছেন।

বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিএমসি) সভাপতি মো: সরওয়ার উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের জন্য সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করেছি। খৈয়াছরা, সহস্রধারা, নাপিত্তাছড়া, লবণাক্ষছড়া, বাওয়াছড়া, কমলদহছড়া, সোনাইছড়া ঝরনা এলাকায় নিরাপদে যাওয়ার জন্য ২০ জন ইকো গাইডকে নিয়োগ দিয়েছি।

পর্যটকরা যদি ঝরনা এলাকায় যাওয়ার সময় ইকো গাইডদের সঙ্গে নিয়ে যায় তাহলে হারিয়ে যাওয়া ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বারৈয়ারঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের অজ্ঞতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে যত বিপদ ঘটছে। ঝরনাগুলোয় ইজাদারদের মাধ্যমে গাইড সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকরা গাইড ছাড়াই অচেনা জায়গাগুলোয় ঘুরতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন।’

আরও পড়ুন: কলমাকান্দা গিয়ে মেঘালয় ভ্রমণ 

ফেনী সদরের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষার্থী ফয়সাল আবেদীন বলেন, ‘মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলো এখন পর্যটনের বড় জায়গা। পর্যটকদের দিকনির্দেশনা ও নিরাপত্তার জন্য এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি।’

মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়ারঢালা রেঞ্জ এলাকার খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, সহস্ররধারা, লবণাক্ষ, সোনাইছড়ি, বাওয়াছড়া ও রূপসী ঝরনা পর্যটন স্থান ইজারা দেওয়া আছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়।

বারৈয়ারঢালা রেঞ্জের সব কটি ঝরনার ইজারা পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এএইচ এন্টারপ্রাইজের তত্ত্বাবধায়ক নাজমুল হাসান বলেন, ‘ঝরনা এলাকাগুলোয় সতর্ক করে ব্যানার ও সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়েছে। তবে পর্যটকরা কোনো নিয়ম মানেন না। আমরা সবাইকে বিকেল ৫টার মধ্যে ঝরনা এলাকা ত্যাগ করতে বললেও অনেকে সন্ধ্যা করে ফিরতে গিয়ে বিপদে পড়েন।’

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘মেলকুম ট্রেইলের ব্যবস্থাপনায় কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এটিকে যথাযথ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে। তিনি পর্যটকদের সঙ্গে গাইড নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ও ঠিকাদারদের এই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এম মাঈন উদ্দিন/জেএমএস/জিকেএস