বরাবরই লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুর। সেই লিচুর জেলায় বৈরী আবহাওয়াতেও এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু গৌড়মতি আমের দাম একটু বেশি হওয়ায় স্থানীয়ভাবে এর চাহিদা কম। অপরদিকে বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় আমচাষিরা।
Advertisement
বীরগঞ্জ ও বোচাগঞ্জের দুই আম বাগান মালিকের সঙ্গে কথা বলে গৌড়মতি আম নিয়ে এমন তথ্যই জানা গেছে। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো হাতে একমাস সময় রয়েছে। বিদেশে রপ্তানি করতে না পারলেও দেশের বিভিন্ন বাজারে এই আম বিক্রি হবে।
লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে উন্নত জাতের আমচাষের উদ্যোগ নেন যুবক জাকিউর আলম জাকির। ২০১৬ সালে এক একর জায়গায় বারি-৪ আম চাষের মধ্য দিয়ে বাগান শুরু করেন তিনি। সফলতা পেয়ে আম বাগান বাড়াতে থাকেন। এখন তার আম বাগানের বিস্তৃতি ২২ একর। শখের বশে আম বাগান করে এখন প্রতি বছর আয় করেন ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: লিচুর মৌসুমে দিনাজপুরে দেড় লাখ নারীর কর্মসংস্থান
Advertisement
জাকিরের এই আম বাগানটি গড়ে উঠেছে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ২নং ইশানিয়া ইউনিয়নের পূর্ববর্ষা গ্রামের জতের ডাঙ্গায়। তার বাগানে ২২ একরের মধ্যে গৌড়মতি আমের বাগান আড়াই একর জায়গাজুড়ে।
বছরের ছয় মাসই জাকিরের বাগান আমে ভরপুর থাকে। তার বাগানে সারাবছর ১৫ জন মানুষ কাজ করেন। ২২ একর জায়গায় বারি-৪ জাতের ১৬০০, গৌড়মতি ৮৫০, কাটিমন ৮৫০, ব্যানানা ম্যাংগো ৮৫০, আম্রোপালি আমসহ অন্য প্রজাতির ৫৫০টি আমের গাছ রয়েছে।
আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহের ক্ষত লিচুতে, দাম নেমেছে অর্ধেকে
জাকিউর আলম জাকির বলেন, ‘আমি ২০১৬ সালে লেখাপড়া শেষ করে শখের বশে এক একর জায়গায় বারি-৪ জাতের আম দিয়ে শুরু করি। সফলতা পাওয়ার পর গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগো, কাটিমন জাতের চারা রোপণ করি। গৌড়মতি আম প্যাকেটজাত করা হয়। এই আম বিষমুক্ত। এবার ১৫ লাখ টাকার মতো আম বিক্রয় করেছি। গতবারের তুলনায় এবার বাজার খারাপ হওয়ার পরও ভালো বিক্রি হয়েছে। আশা করছি গৌড়মতি আম প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকায় বেচাকেনা হবে। তবে বাণিজ্যিকভাবে যদি রপ্তানির সুবিধা পাই তাহলে বেচাকেনা করতে সুবিধা হতো।’
Advertisement
তিনি বলেন, গৌড়মতি আমের দাম বেশি হওয়ায় দেশে চাহিদা কম। তাই কিছুটা হলেও গৌড়মতিসহ কাটিমন ও ব্যানানা ম্যাংগো বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় আছি। স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ আম বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকায়।
বোচাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নয়ন কুমার সাহা বলেন, উদ্যোক্তা জাকিউর আলমকে আমরা কারিগরি পরামর্শ ও সহযোগিতা করছি। তার বিদেশে আম রপ্তানির ইচ্ছা আছে। আগামীতে আম রপ্তানির জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তাকে প্রয়োজনীয় কারিগরি পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হবে।
আরও পড়ুন: প্রচারের অভাবে পরিচিতি পাচ্ছে না নওগাঁর আম
এদিকে বীরগঞ্জ উপজেলায় গৌড়মতি আমের চাষ করেন মরিচা ইউনিয়নের ডাবরা জিনেশ্বরী গ্রামের মো. গোলাম মোস্তফা। বৈরী আবহাওয়ায়ও তার বাগানে আমের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু গৌড়মতি আমের তেমন চাহিদা নেই বাজারে। তাই আম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। এখন রয়েছেন বিদেশে রপ্তানির চেষ্টায়।
মো. গোলাম মোস্তফা জানান, ২০১৭ সালে ৭৫ শতাংশ জমিতে ১৫০টি গৌড়মতি আম গাছের চারা রোপণ করেন তিনি। ২০২২ সালে গাছে ব্যাপকহারে ফলন শুরু হয়। এ বছর বাগানে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশ্যে ২৫ হাজার পিস আম ব্যাগিং পদ্ধতিতে পরিচর্যা করে বিক্রয়যোগ্য করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগ তাকে আম রপ্তানির খবর দিতে পারেনি। আমের কোনো বিদেশি গ্রাহক না পাওয়ায় গাছেই ঝুলে রয়েছে আনুমানিক গ্রায় ২০০ মণ আম।
আরও পড়ুন: লিচুর রাজ্যে আমের বাম্পার ফলন
তিনি বলেন, আমরা ৮ হাজার টাকা মণ আম বিক্রি করছি। তবে ক্রেতা কম। দ্রুত যদি রপ্তানি কিংবা বাজারজাত না করা হয় তাহলে গাছেই পচে যেতে পারে এসব আম। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
একই কথা জানালেন ওই এলাকার আমবাগান মালিক আলহাজ মোকারম হোসেন পলাশও।
পলাশ বলেন, সরকারিভাবে দ্রুত আম রপ্তানির বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে শুধু দিনাজপুর নয়, সারাদেশের গৌড়মতি আম বাগান মালিকদের পথে বসতে হবে। এখন কৃষি বিভাগ যদি আম রপ্তানি অথবা বিক্রির জন্য দেশ-বিদেশে যোগাযোগ করে তাহলেই আম বাগান মালিকরা পুঁজি রক্ষা করতে পারবেন।
এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ আকন্দ জানান, বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যে ২৫ হাজার গৌড়মতি আম পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে ব্যাগিং করা হয়েছে। গৌড়মতি আমের জাতটি দেরিতে পাকা শুরু করে। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ফল গাছে থাকে। ফলে বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় বেশি মূল্য পাওয়া যায়। প্রতিটি আমের ওজন তিনশ থেকে পাঁচশ গ্রাম।
আম রপ্তানির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বছর আমের বাম্পার ফলনের কারণে দেশে-বিদেশে আমের চাহিদা কম। তাই এখন পর্যন্ত কোনো গ্রাহক মেলেনি। তবে কৃষি বিভাগ আম রপ্তানি ও স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
এফএ/এমএইচআর/জিকেএস