দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বৈরী আবহাওয়া। ফলে কক্সবাজারের জেলেপল্লিতে চলছিল একধরনের হাহাকার। কিন্তু গত সপ্তাহ ধরে আবহাওয়া স্বাভাবিক। এরই মধ্যে সাগরে নেমেছে অগণিত মাছ ধরার ট্রলার।
Advertisement
সপ্তাহ না পেরুতেই মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরছে ট্রলারগুলো। ইলিশ আর হরেক রকমের মাছ নিয়ে ঘাটে ফেরা ট্রলার ঘিরে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।
শুধু ইলিশই নয়; ছোট-বড় সব ট্রলারে ধরা পড়েছে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে সাগরে না যাওয়ায় ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদন বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (ফিশারি ঘাট), টেকনাফের শামলাপুর ঘাট, সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপ মৎস্য ঘাটে ট্রলারভর্তি মাছ নিয়ে জেলেদের ফেরার দৃশ্য চোখে পড়ে। প্রায় প্রতিটি ট্রলারে কমবেশি মাছ এলেও দাম যেন কমছে না। ৮০০ গ্রাম থেকে এককেজি ওজনের ইলিশ ১২০০-১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেড়কেজি বা তার চেয়ে ওজনের বড় ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫০০-১৮০০ টাকা। অথচ বিগত সময়ে এ সাইজের মাছের দাম এখনকার অর্ধেকে ছিল।
Advertisement
আরও পড়ুন: ইলিশে সয়লাব বরিশালের মৎস্য আড়ত
কক্সবাজার ফিশারি ঘাটের ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন বলেন, বিগত সময়ে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি। কিন্তু এখন এ সাইজের মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। ৮০০ থেকে এককেজি ওজনের ইলিশের দাম ১২০০-১৩০০ টাকা। এর চেয়ে বড় মাছের দাম আরও চড়া। বেশি মাছ পড়লেও দাম যেন কমছে না।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন হাজারী বলেন, শুধু ইলিশের দাম বেশি তা নয়, তাইল্লাসহ অন্য প্রজাতির মাছের দামও বেশি। সুস্বাদু বড় তাইল্ল্যা মাছ ফিশারি ঘাটে ৫০০-৬০০ টাকার ওপর কিনতে হয়নি। ৭৫০-৮০০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ট্রলার ১২-১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করছে। কোনো ট্রলারই খালি ফিরছে না। এরই মধ্যে কয়েক কোটি টাকার ইলিশ বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা ঘাট থেকে কিনে নিয়েছেন।
Advertisement
তবে ধীরে ধীরে ইলিশের দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে মনে করেন এ মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলোতে ট্রলার থেকে মাছ নামিয়ে স্তূপ করার পর দরদাম চলছে। যিনি বেশি দাম হাঁকছেন তার কাছেই মাছ বিক্রি করছেন ট্রলারমালিকরা। এরপর মাছগুলো বরফে ঢেকে বিশেষ কায়দায় সংরক্ষণ ও ঝুড়ি ভর্তি করে পরিবহনে তোলা হচ্ছে। এরপর তা চলে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।
আরও পড়ুন: ৩৭ মণ ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরলো ট্রলার
মৎস্য ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, ‘ছোট, বড় ও মাঝারি মিলিয়ে দেড় টন ইলিশ কিনেছি। প্রক্রিয়া করে এসব ইলিশ ঢাকা, যাত্রাবাড়ী, কারওয়ান বাজার, আব্দুল্লাহপুর, ফরিদপুর, মাওয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। ইলিশ ছাড়াও কক্সবাজারের প্রতিটি নৌঘাটে লইট্যা, ফাইস্যা, চাপিলা, পোয়া মাছসহ বিভিন্ন ধরনের মাছবোঝাই ট্রলার নিয়ে ফিরছেন জেলেরা।’
কক্সবাজার শহরের বড় বাজারে মাছ কিনতে আসা রহমত উল্লাহ হারেছ বলেন, ‘গত দু-আড়াই মাস বাজারে সাগরের কোনো মাছই দেখা যায়নি। তবে কয়েকদিন ধরে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ মিলছে। সাগরে মাছ মিললে আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষরা স্বস্তি পায়।’
খুরুশকুলের জেলে বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরা আমার বাপ-দাদার পেশা। সাগরে ঝুঁকি থাকলেও এ পেশা ছাড়া অন্যখানে শান্তি পাই না। মাছ ধরা পড়লে পেটে ঠিকমতো ভাত দিতে পারি। মাছ ধরা বন্ধ থাকলে ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়। মাছ ভালোমতো পেলে অভাব থাকে না। মাছ বিক্রির পর সন্ধ্যায় আবারও সাগরে রওনা দেবো ইনশা আল্লাহ।’
আরও পড়ুন: ইলিশের কেজি ৪৫০
শামলাপুর ঘাট নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের পরিবারে হাহাকার চলেছে। বৈরী আবহাওয়ার পর সাগরে নামা জেলেদের আশা আল্লাহ পূরণ করেছেন। সবাই মাছ নিয়েই ঘাটে ফিরছেন।’
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আর বৈরী আবহাওয়ায় দীর্ঘদিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এসময় সাগরে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উৎপাদন বেড়েছে। ঘাটে আসা মাছের সাইজে এটাই প্রমাণ হয়।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বদরুদ্দোজা বলেন, স্বাভাবিক আবহওয়া বিদ্যমান থাকায় মাছ আহরণ শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে পর্যাপ্ত মাছ এসেছে। এখানে দৈনিক ২৫ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ হয়, কিন্তু বর্তমানে ৩৫-৪০ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ হচ্ছে।
এসআর/জিকেএস