কৃষি ও প্রকৃতি

কৃষ্ণচূড়ার ডালে চড়ুই পাখির মেলা

চড়ুই পাখি দেশের সর্বত্র দেখা গেলেও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) সংলগ্ন মডার্ন মোড়ে দেখা মিলবে এক নতুন অভিজ্ঞতা। হঠাৎ করে হাজারো চড়ুই পাখি দেখে যে কেউ আন্দাজ করতে পারবেন না এগুলো পাখি নাকি অন্য কিছু। কারণ ডালে ডালে এত বেশি পাখি, যা সত্যিই অবাক করার মতো। প্রতিদিনই ভিড় জমান শিক্ষক- শিক্ষার্থীসহ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা হাজারো পাখি প্রেমিক।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের মডার্ন মোড় সংলগ্ন চাঁদ পেট্রোলিয়ামের যাত্রী ছাউনির কাছে বেশ পুরোনো একটি কৃষ্ণচূড়া গাছে প্রায় ৫-৬ হাজার চড়ুই পাখির বসবাস। প্রতিদিন গোধূলিলগ্নে সারাদিনের আহার শেষে কিচিরমিচির শব্দে চড়ুই পাখিগুলো এক ডাল থেকে অন্য ডালে উড়ে বসে। যেন তাদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। মনে হয় যেন তারা সুখ-দুঃখের গল্প করছে একে অপরের সঙ্গে।

এমন দৃশ্য দেখে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন সবাই। কেউ কেউ ক্যামেরা কিংবা অন্য মাধ্যমে ফ্রেমবন্দি করে রাখতে দেরি করেন না। চড়ুই পাখির এই মিলনমেলা দেখে তারা আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করে থাকেন।

আরও পড়ুন: যেখানে রং-বেরঙের ফুলের সমাহার 

Advertisement

প্রতিদিন যখন পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠে, দিনের আলো ফোটে; ঠিক তখনই চড়ুই পাখিগুলো কিচিরমিচির শব্দে গান করতে করতে খাবার সন্ধানে ছুটতে থাকে। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় উড়ে উড়ে হাজারো বিপদকে অতিক্রান্ত করে খাবার সংগ্রহ করতে থাকে। অনেক পাখি মাইলের পর মাইল ছুটে চলে খাবারের সন্ধানে। খাবার সন্ধানের এই যুদ্ধের পরে একে একে ছুটে আসতে শুরু করে নিরাপদ আশ্রয়ে।

স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী মো. সজীব মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ৪ বছর আগে হঠাৎ করেই একদিন কৃষ্ণচূড়া গাছে চড়ুই পাখিরা ভিড় করে। তারপর থেকে দৈনিক পাখির মেলা বসে। শুধু রাতের বেলায় থাকে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কোথায় যেন চলে যায়। আবার কোথা থেকে আসে। ভোর হলে কোথায় চলে যায়, কেউ জানে না।’

তিনি বলেন, ‘যানবাহনের উচ্চ আওয়াজ মনের মধ্যে বিরক্তি নিয়ে আসে কিন্তু পাখিদের কিচিরমিচির বিরক্তি অনেকটা দূর করে দেয়। অনেকেই আসেন পাখিগুলো দেখতে, দেখে চলে যান। পাখিগুলোর খাবার ও নিরাপদ বাসস্থান নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। যদি কেউ খাবারের দায়িত্ব নিতো তাহলে অনেক ভালো হতো।’

আরও পড়ুন: গাছ যেভাবে মানুষের উপকার করে 

Advertisement

রংপর কারমাইকেল কলেজ থেকে আসা শিক্ষার্থী মো. হাসান মিরাজ বলেন, ‘চড়ুই পাখির এই মিলনমেলা সত্যি আমার কাছে দারুণ লেগেছে। পাখিগুলোর কিচিরমিচির ও নেচে বেড়ানো আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে। এই অপরূপ দৃশ্য পরিবারকে দেখানোর জন্য ভিডিও করে নিয়েছি। ছোট বোন পাখি অনেক পছন্দ করে। সে এই দৃশ্য দেখে অনেক আনন্দিত হবে।’

রংপুর জেলা স্কুল থেকে আসা শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘কৃষ্ণচূড়া গাছে বসে থাকা হাজার হাজার চড়ুই পাখির এই মিলনমেলা আমার মনে দাগ কেটেছে। সত্যি পাখিগুলো দেখে মুগ্ধ হয়েছি। পাখিগুলোর কিচিরমিচির শব্দ শুনতে সত্যি অনেক ভালো লাগে। দিনটি আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সচরাচর এরকম পাখির মেলা খুব একটা দেখা যায় না।’

এসইউ/জিকেএস