দেশজুড়ে

অতিথি আপ্যায়ন-উপহার সবকিছুতেই ক্ষীরপুরি

মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ক্ষীরপুরির স্বাদ আর এখন জেলায় আটকে নেই। কেউ কোনো আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গেলে ঐতিহ্যবাহী ক্ষীরপুরি নেন সবার আগে। শত বছরের বেশি সময় ধরে মাদারীপুর জেলার ঐতিহ্য বহন করে আসছে এই মিষ্টি।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর জেলায় ক্ষীরপুরির সুনাম বহুদিনের। এখানকার মানুষ নতুন বা বিশেষ কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে সর্বপ্রথম এই মিষ্টি নেন। এছাড়াও কোনো নতুন আত্মীয় বেড়াতে এলেও এই ক্ষীরপুরি দিয়েই আপ্যায়নের পাশাপাশি বিদায় বেলাতেও এক প্যাকেট ক্ষীরপুরি উপহার দেন।

এছাড়া মাদারীপুর জেলার বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ প্রবাসী। তারা বিদেশে যাতায়াত করার সময়ও মাদারীপুরের এই ক্ষীরপুরি কিনে নিয়ে যান। উপহার দেন বিদেশি বন্ধুদের।

জেলা শহরের সবচেয়ে বেশি ক্ষীরপুরি বিক্রি হয় পুরানকোর্ট এলাকার জীবন মিষ্টান্ন ভান্ডার ও মাদারীপুর স্টেডিয়াম গেট সংলগ্ন রনজিৎ মিষ্টান্ন ভান্ডারে। এছাড়াও প্রাণ মিষ্টান্ন ভান্ডার, মাতৃভান্ডারসহ বেশ কয়েকটি দোকান আছে যারা এই ক্ষীরপুরি বিক্রি করে আসছেন।

Advertisement

রনজিৎ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক রনজিৎ মন্ডল বলেন, প্রতি কেজি ক্ষীরপুরি সাড়ে ৬০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আগে এর দাম ছিল ৩০০ টাকা। চাহিদা বেশি ও আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আস্তে আস্তে ক্ষীরপুরির দামও বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০ কেজি ক্ষীরপুরি বিক্রি হয়। যার দাম মাসে প্রায় ৫ লাখ টাকা। তাছাড়া বিয়ের মৌসুমে এত বেশি অর্ডার থাকে যে বানাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।

তিনি আরও বলেন, এই ক্ষীরপুরি বানানো আমার অনেক পুরোনো অভিজ্ঞতা। ২৭ বছর জীবন মিষ্টান্ন ভান্ডারে কাজ করেছি। সেখান থেকেই এই মিষ্টি বানানো শিখেছি। পরে ২০১৪ সালে স্টেডিয়াম গেট সংলগ্ন এলাকায় মিষ্টির দোকান দিই। এখানে সাতজন কর্মচারী প্রতিদিন মিষ্টি বানায়। ক্ষীরপুরির জন্যই আমার এই দোকানের সুনাম জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।

রনজিৎ মিষ্টান্ন ভান্ডারের কর্মচারী প্রকাশ বাড়ৈই বলেন, এই ক্ষীরপুরির চাহিদা মাদারীপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতেও আছে। অনেক সময় আগে থেকেই অর্ডার করে রাখতে হয়। তা না হলে ক্ষীরপুরি পাওয়া যায় না। কোনো অনুষ্ঠানের অর্ডার থাকলে সারা দিন-রাত জেগে এই ক্ষীরপুরি বানাতে হয়।

ক্ষীরপুরি কিনতে আসা সৌদি আরব প্রবাসী ওমর ফারুক বলেন, আমি সৌদি আরব থাকি। বিদেশে যাওয়ার সময় এখান থেকে ক্ষীরপুরি নিয়ে গিয়ে বন্ধুদের উপহার দিয়েছি। তাছাড়া আমার সন্তানের এবারের এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের পর এখান থেকে ১৬ কেজি ক্ষীরপুরি ও সন্দেশ কিনেছি।

Advertisement

ক্ষীরপুরি কিনতে আসা গৃহিণী মমতাজ বেগম বলেন, আমার বাবার বাড়ি ঢাকায়। আর মাদারীপুরে আমার শশুরবাড়ি। তাই আমি ঢাকায় যাওয়ার সময় আমার বাবা-মা, ভাই-বোনদের জন্য এখান থেকে ক্ষীরপুরি নিয়ে যাই। সবাই এই ক্ষীরপুরি পছন্দ করে।

মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক সাংবাদিক সুবল বিশ্বাস বলেন, মাদারীপুরের এই ক্ষীরপুরি অত্যন্ত সুস্বাদু। যে কেউ একবার খেলে বার বার খেতে চাইবে। তাছাড়া এটি মাদারীপুর জেলায় শত বছরের বেশি সময় ধরে সুনাম ধরে রেখেছে। এটি এখন জেলার ঐতিহ্য বহন করে।

এফএ/জিকেএস