বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, আমি কখনো আওয়ামী লীগ করিনি। তারপরেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত আলাপ-আলোচনার সম্পর্ক ছিল।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মেনন আরও বলেন, বাকশাল গঠনের সময় বঙ্গবন্ধু তার বাসার ছাদে ডেকে নিয়ে বাকশালে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। কিন্তু আমি রাজি না হওয়ায় বঙ্গবন্ধু আমাকে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বললেন, স্বাধীনতার পর তোরা আমাকে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বলেছিলি। আমি তো তোদের সেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাকশাল করছি। কিন্তু তোরা আমার সঙ্গে থাকলি না।
বঙ্গবন্ধুকে যারা কাছ থেকে দেখেছেন, তাদের স্মৃতিচারণামূলক এ আলোচনা ২০২১ সাল থেকে জাতীয় শোক দিবসকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার তৃতীয়বারের মতো ‘বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে দেখা-রিমেমব্রেন্স বাই হিজ কনটেমপোরারিজ পার্ট–থ্রি’ শীর্ষক আলোচনাটি বিআইডিএস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
Advertisement
সভায় বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় বিরোধী মত ও পথকে শ্রদ্ধা করতেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও সম্মান দেখানো তার রাজনৈতিক আদর্শের অংশ ছিল। চরম ডানপন্থি মুসলিম লীগ থেকে শুরু করে অতি বামপন্থিরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন। তাদের সঙ্গে তিনি আলোচনার সম্পর্ক রাখতেন। বঙ্গবন্ধুর এই উদারনৈতিক আদর্শ বাংলাদেশের রাজনীতিতে দরকার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বঙ্গবন্ধুর সহকারী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের পর মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলখানায় তার জন্য সুবিধা বাড়াতে বলেন বঙ্গবন্ধু। শাহ আজিজের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো জীবনযাপন করতেন। তার স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে একবার হেলিকপ্টারে করে গোপালগঞ্জে যাওয়ার প্রস্তাব করা হয়। তিনি তাতে রাজি হননি। শেখ কামালের বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের অনুষ্ঠানকে অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু অনেক বড় হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। তার সঙ্গে ভিন্নমত থাকার পরেও সম্পর্ক ছিন্ন করতেন না; বরং ছাত্র ইউনিয়ন ও সিপিবি নেতাদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ এবং পরামর্শ করতেন। তবে তিনি দলের কর্মীদের বিষয়ে দুর্বল ছিলেন। সেই দুর্বলতার মূল্য তাকে দিতে হয়েছে। তাকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন।
Advertisement
আলোচনা সভায় বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, বাংলাদেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতি আওয়ামী লীগকে সমৃদ্ধ ও পুষ্ট করেছে। একটি প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আগামী দিনেও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, সেই পথে এগোনোর জন্য ওই ঐক্যের বিকল্প নেই।
এমওএস/এমআরআর