তথ্যপ্রযুক্তি

শখের বশে শুরু, মাসে আয় লাখ টাকা

আর দশজনের মতো স্বাভাবিক জীবন ছিল না ফাহিম শাহরিয়ারের। জন্মগতভাবে বামহাতে আঙুল না থাকায় একমাত্র সন্তান অন্য ছেলের মতো কাজ করতে পারবে না, এটাই ছিল ফাহিমের বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার কারণ। কিন্তু প্রবল ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতা তাকে নিয়ে যাচ্ছে উন্নতির শিখড়ে। পরিবার ও স্বজনদের দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে ফাহিমের স্বনির্ভর ও আত্মবিশ্বাসী কার্মকাণ্ডে। ফাহিম শাহরিয়ার চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের পূর্ব পোলমোগরা গ্রামের মোহাম্মদ ফারুকের ছেলে।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলেন ফাহিম। এরপর সেই চ্যানেলে ভিডিও আপলোড দেওয়া শুরু করেন। অল্প সময়ে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ভিডিওগুলো। ফাহিমের ‘নব রস’ ও ‘ফাহিম শাহরিয়ার’ নামে দুটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। দুটি চ্যানেলে এরই মধ্যে ৩ লাখ ২১ হাজার সাবস্ক্রাইবার।

ফাহিমের জীবনে কম সংগ্রাম করতে হয়নি। ২০০৭ সালে একমাত্র বোন ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর ভেঙে পড়ে তার পরিবার। আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেছেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএস করছেন ফাহিম।

আরও পড়ুন: টুইট করেই আয় করা যাবে লাখ টাকা 

Advertisement

সমুদ্র, পাহাড় ও ঝরনা দেখে বড় হওয়া ফাহিম অনেক বেশি ভ্রমণপ্রিয়। তিনি এর মধ্যে সুন্দরবন, সাজেকের প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রাম, বান্দরবানের তাজিনডং, পানির নিচে সেন্টমার্টিন ও সুনামগঞ্জের রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টসহ দেশের ৭০ শতাংশ অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া ভারত, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন।

ফাহিম শাহরিয়ার বলেন, ‘২০১৮ সালে পরিবারের অনুরোধে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ভিডিও এডিটর হিসেবে যোগ দিই। সেখানে কাজ করার সময় কিছু টাকা জমিয়ে একটি ছোট অ্যাকশন ক্যামেরা কিনি। ছোট ক্যামেরা কেনার একমাত্র কারণ ছিল, যেহেতু আমার বামহাতে আঙুল নেই, বড় ক্যামেরা ধরতে পারবো না। তাই এ ক্যামেরা চাইলে গ্লাভসের মতো করে হাতের কব্জিতে বাঁধতে পারবো। সেই ক্যামেরায় শট করা ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করতে থাকি। যা আমার বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীরা পছন্দ করতে থাকেন।’

আরও পড়ুন: ভ্লগারদের জন্য বিশেষ ক্যামেরা আনলো ফুজিফিল্ম 

আত্মবিশ্বাসী ফাহিম বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আমাকে থামাতে পারেনি। একটি হাত দিয়ে রশি ধরে ১৫০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে নেমে এসেছি। পানির নিচে স্কুবা ডাইভিং, মোটরবাইক, গাড়ি চালানো এবং ড্রোন চালানোর মতো কঠিন কাজও করেছি। পদ্মা সেতুর ৪১তম স্প্যান স্থাপনের সময় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের জন্য ড্রোন দিয়ে লাইভ করি। পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যামেরা পারসন হিসেবেও কাজ করেছি। একসময় ইউটিউবকে শখ হিসেবে নিয়েছিলাম। এখন এটি আমার আয়ের প্রধান উৎস। ইউটিউব থেকে আমার মাসিক আয় প্রায় ১ লাখ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন ডকুমেন্টরি ও ড্রোন ভাড়া দিয়ে আরও ২০-৩০ হাজার টাকা আসে।’

Advertisement

ফাহিমের চাচা এস এম সরোয়ার উদ্দিন বলেন, ‘আমরা একটা সময় ফাহিমকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। এখন সে স্বাবলম্বী। ইউটিউব চ্যানেল খুলে মাসে ভালো টাকা আয় করছে। প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল তাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।’ এসইউ/জিকেএস