সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে আয়োজিত ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে নিজেদের ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়ায় উচ্চ আদালতের দুই বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি আবদুল জব্বারসহ শতাধিক বিএনপি সমর্থক আইনজীবী।
লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, গত ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আয়োজিত এক শোক সভায় প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচারপতির বক্তব্য বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং ১৬ আগস্ট জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে আজ আমাদের সংবাদ সম্মেলন।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সংবিধানের ৩য় তফসিলে বর্ণিত শপথের মাধ্যমে দেশের সংবিধান ও আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের অঙ্গীকার করে থাকেন। একই সঙ্গে ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সবার প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করার অঙ্গীকার করে থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ আগস্টের আলোচনা সভার প্রদত্ত কয়েকজন বিচারপতির বক্তব্যের কিছু কিছু অংশ বিচারপতি হিসেবে নেওয়া শপথের লঙ্ঘন কি না তা প্রশ্ন রাখার দাবি রাখে। সাধারণত কোনো রাজনৈতিক কর্মী তার দলীয় সভায় যে ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকেন, অনেক বিচারপতির বক্তব্যে তেমনই একজন রাজনীতিকদের বক্তব্যের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।’
‘বিচারকদের এমন বক্তব্য কতটুকু বিচারকসুলভ বা রাজনৈতিক মতাদর্শের পরিচায়ক তা সহজেই অনুমেয়। তারা বিচারপতির মহত্ব ধারণ করতে পারেন কি না তা জনমনে অনেক সংশয় ও প্রশ্ন রাখছে। বস্তুত পক্ষে একজন রাজনীতিকের বক্তব্যই প্রতিধ্বনিত হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশের জনগণের ভোটাধিকার ক্রমাগতভাবে অস্বীকার করে ২০১৪ ও ২০১৮’র মত তথাকথিত নির্বাচনের মতো করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার করার যে স্বপ্ন এ সরকার দেখছে, গত ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠনে কয়েকজন বিচারপতির বক্তব্যের মাধ্যমে তা উস্কে দেওয়া হয়েছে বলে দেশের অনেক সচেতন মহল মনে করছেন। এর মাধ্যমে বিচারপতিগণ শাসক দলের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন বলে সচেতন অনেক নাগরিকই মনে করেন; যা শুধুমাত্র বিচার বিভাগ নয় আমাদের জাতির জন্য এক অশনি সংকেত এবং যা দেশের গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পরিপন্থি।’
Advertisement
উল্লেখিত বক্তব্যের মাধ্যমে বিচারপতিরা তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন এবং এজন্য আইনগত ও নৈতিকভাবে তারা বিচারকার্য পরিচালনার অধিকার হারিয়েছেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে এ সব স্বঘোষিত ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বিচারপতি অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান তিনি।
এফএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস