জাতীয়

ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়ার প্রশ্নে মন্ত্রী বললেন, যখন নেয় নেবে

জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠেয় ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী ২১ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ এবার সদস্যপদ পাবে কি না? নতুন সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্রাজিল ও ভারত কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।

Advertisement

ভারত যেহেতু প্রতিবেশী দেশ, বাংলাদেশ তাদের কাছে কোনো অনুরোধ করবে কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা যেটা শুনেছি, আপনিও তাই বলেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে ভারত যাচ্ছি। আরও অন্যান্য দেশে যাচ্ছি, তখন দেখা হবে। দেখা তো হবেই বটে। বিশেষ কোনো আয়োজন আমরা সেখানে করবো, নাকি ভারতে করা হবে, সেটা আমরা চিন্তাভাবনা করছি।

আমরা এবার ব্রিকসের সদস্যপদ পাচ্ছি কি না প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এটি তাদের সিদ্ধান্ত। তিনটি সদস্য দেশ চাচ্ছে নতুন সদস্য নেবে। আর ভারত ও ব্রাজিল বলছে, আগে নেওয়ার একটি নিয়মকানুন তৈরি হোক, তারপর নেওয়া হোক। এটি তাদের বিতর্ক, আমাদের না। যখন নেয় নেবে।

আরও পড়ুন: দেশে অভ্যন্তরীণ সংঘাত কম, সামরিক শাসকের উত্থান হবে না 

Advertisement

বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট দেখা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তখন ধারণা ছিল, তারা নতুন কিছু দেশকে ব্রিকসের সদস্য করবে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, আমরা আরও আটটি দেশকে সদস্য হিসেবে নিতে চাই, যারা শক্তিশালী অর্থনীতি। তখন আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কারা? তিনি তখন বলেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ। চিন্তা করলাম, আমরা তো ব্রিকস ব্যাংকে যোগ দিয়েছি। আমরা তো একটি উদীয়মান রাষ্ট্র। আমাদের জিডিপিও অনেক বেশি— ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার। যা দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, এটা আমাদের একটি ওপেনিং (শুরু) হতে পারে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রেসিডেন্টকে বললেন যে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ আছে নেলসন ম্যান্ডেলার কারণে। তখন প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছিলেন যে দক্ষিণ আফ্রিকা যাবেন। সে কারণেই দেশটিতে যাওয়া।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন তো নতুন ডেভেলপমেন্ট (পরিস্থিতি) হয়েছে। শুনেছি, প্রায় ৭০টি দেশের প্রতিনিধি আসবেন। আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় সবাই আসবেন। আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে এখনো আমাদের সম্পর্ক জোরালো হয়নি। ইট ইজ অ্যা রাইজিং স্টার। আমরা সেই সুযোগে বিভিন্ন দেশের, ব্রিকসে যোগ দেওয়া ছাড়াও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশের লোকের সঙ্গে দেখা হবে। আর সেখানে অনেক সুযোগও আছে। এসব কারণে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

আরও পড়ুন: সমঝোতার বিষয় নেই, নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু হবে 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। এখন এটা বলতে পারবো না। কারণ দুই-দুইবার তারিখ দেওয়ার পরেও হলো না। মিয়ানমারই তারিখ দিয়েছিল। আর এখন তো কিছু লোক উঠেপড়ে লেগেছে, যাতে তারা (রোহিঙ্গা) না যায়। আমাদের কিছু বন্ধুপ্রতীম দেশ মনে করে যে তাদের এই দেশে স্কিল ট্রেনিং দিয়ে অ্যাবজর্ব (আত্মীকরণ) করে ফেলো। কারণ পশ্চিমা দেশগুলোতে শরণার্থী যারা যান, তারা ওই দেশে স্থায়ী হয়ে যান। প্রত্যাবাসনের কোনো উদাহরণ পশ্চিমা দেশগুলোতে খুব নেই। পশ্চিমা দেশগুলোর ধারণা, এসেছে যখন তাদের অ্যাবজর্ব করে নাও। সেদিন যে দুজন মার্কিন কংগ্রেসম্যান এসেছিলেন, তারাও এ কথা বলেছিলেন। আমরা বলেছি, না। আমরা হলাম দুনিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। প্রতিবছর এখানে ২০ লাখের বেশি লোক জব মার্কেটে আসে, অন্য লোক আমাদের দরকার নেই। তাদের নিজ দেশেই ফিরে যাওয়া উচিত।

আপনারা কিছু নিয়ে যান। আপনারা তো নেননি, বলেকয়েও নেননি। আপনারা তো বলেছিলেন, অনেক লোক নেবেন, আপনাদের বন্ধু দেশগুলোকেও বলবেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া। আপনারা বরং সেটির জন্যই চেষ্টা করেন। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে তারা যায়, যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার আমাদের শত্রু দেশ না, প্রতিবেশী। তাদের কিছু অসুবিধা ছিল বলে তাদের (রোহিঙ্গা) বের করে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতেও তারা রাজি। কিন্তু কোন সময় নেবে, সবই তাদের ওপর নির্ভর করে। কারণ তারাই সমস্যা তৈরি করেছে। সমাধানও তাদের। আমরা চাপ দিচ্ছি। রোহিঙ্গাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের না। দুনিয়ার সব দেশের। তাদের যাতে নিয়ে যাওয়া হয়, যারা এখানে আসেন, তাদের সেটা বলেছি।

আইএইচআর/কেএসআর/জিকেএস