বর্ষা অনেকেরই প্রিয় ঋতু। কেউ ঘরে বসে বর্ষা উপভোগ করতে পছন্দ করেন কেউ ছুটে যান প্রকৃতির খুব কাছে। বর্ষা পাহাড়, হাওর কিংবা ঝরনা দেখার সেরা সময়। ঝরনাগুলো এসময় থাকে ভরা যৌবনে। পাহাড়ের ঢাল পেয়ে ঝরনার দুধ সাদা পানির ধারা যে কারও মনকে শান্ত করতে পারে মুহূর্তেই।
Advertisement
খুব বেশি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হলে এই বর্ষায় ঘুরে আসতে পারেন জলপ্রপাত থেকে। এজন্য আপনাকে দেশের বাইরে যেতে হবে না। দেশের মধ্যেই রয়েছে বেশ কিছু জলপ্রপাত। যার সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণপিপাসুদের। একসঙ্গে দেখে আসতে পারেন বান্দরবানের চার জলপ্রতাপ। জেনে নিন কীভাবে যাবেন-
নাফাখুম জলপ্রপাতবান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় নাফাখুম ঝরনার অবস্থান। বান্দরবান জেলা থেকে প্রায় ৭৯ কিলোমিটার দূরে যেতে হবে এই ঝরনার দৃশ্য দেখতে। থানচি বাজার সাংগু নদীর তীরে অবস্থিত। থানচি থেকে নদীপথে নৌকায় যাওয়ার সময় নদীপথ রেমাক্রি খালের দিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকে।
আরও পড়ুন: বর্ষায় পাহাড়ে ঘুরতে গেলে যেসব বিষয়ে সতর্ক হবেন
Advertisement
অর্থাৎ রেমাক্রি হতে সাংগু নদীর পথ বেশ কিছুটা ঢালু। রেমাক্রি খাল ছোট খাটো একটি জলপ্রপাত। এখানের পাথরগুলোও অনেকটা ছোট ছোট সিঁড়ির মত। অভূতপূর্ব এই পাহাড়ি পথের বিশুদ্ধ সৌন্দর্যে আপনি মোহিত হতে বাধ্য। অনেকে নাফাখুম যাওয়ার পথে তিন্দুর সৌন্দর্যে বিমহিত হয়ে থানচিতে না থেকে তিন্দুতে রাত্রিযাপন করেন। যদিও থানচি ও তিন্দু দুই স্থানই সুন্দর।রেমাক্রি বাজার থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা রাস্তা হেঁটে পাড়ি দেওয়ার পর আপনি পৌঁছে যাবেন নাফাখুম নামের আশ্চর্য সুন্দর সেই জলপ্রপাতে।
কীভাবে যাবেন?ঢাকা টু বান্দরবানের ১০-১২ টি বাস সার্ভিস চালু আছে। আপনি ঢাকা টু বান্দরবান যেতে পারবেন বাস করে। নন এসি বাস ভাড়া জন প্রতি ৭২০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া জন প্রতি ৯৫০ টাকা। এরপর চাঁদের গাড়ি করে বান্দরবান থেকে থানচি যেতে হবে। সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘণ্টা। থানচি থেকে রেমাক্রি যাওয়ার জন্য নৌকা ঠিক করে নিতে হবে। নৌকাটি আপনাদের থানচি থেকে তিন্দু হয়ে রেমাক্রি বাজার পৌছে দেবে। রেমাক্রি বাজারে ১ টি রেস্ট হাউস ও ২০/২৫ টি বাড়ি আছে যেখানে আপনারা রাত্রিযাপনের জন্য রুম ভাড়া পাবেন। রেমাক্রি বাজার থেকে প্রায় দু ঘণ্টা পায়ে হেঁটে গেলেই আপনারা নাফাখুম পৌঁছে যাবেন।
তিনাপ সাইতার জলপ্রপাততিনাপ সাইতার হচ্ছে বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়িতে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। পানি প্রবাহের দিক থেকে তিনাপ সাইতার বাংলাদেশের সব থেকে বড় জলপ্রপাত। এটা পাইন্দু খালের অনেক ভেতরে অবস্থিত। তিনাপ সাইতারে যাওয়ার পথের ঝিরিপথ খুবই আকর্ষণীয়। বর্ষা মৌসুমে তিনাপ সাইতারে পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। তিনাপ সাইতার বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। অবাক করা বিষয় হলো, সব মৌসুমেই এ ঝরনার পানি স্বচ্ছ ও ঠান্ডা-গরম থাকে। এ পাহাড় থেকে ওই পাহাড়ে আঁকাবাঁকা পথে ১৫০ ফুট উঁচু থেকে এ ঝরনার পানি পড়ে পাইন্দু খালে। সেখানে একেবারেই স্বচ্ছ পানিতে আপনি খালের তলদেশ পর্যন্ত দেখতে পারবেন।
কীভাবে যাবেন?ঢাকা থেকে প্রথমে বান্দরবান যেতে হবে। বান্দরবান থেকে দু’টি পথ ধরে তিনাপ সাইতারে যেতে পারেন। রোয়াংছড়ি থেকে এবং রুমা থেকে। বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড থেকে রোয়াংছড়ি বাসে যাওয়া যায়। বাসে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। রোয়াংছড়ি নেমে পুলিশ স্টেশনে নাম নিবন্ধন করে গাইড ভাড়া করতে হয়। কেপলং পাড়া, পাইখং পাড়া, রনিনপাড়া, দেবাছড়া পাড়া হয়ে তিনাপ সাইতারে পৌঁছানো যায়।
Advertisement
আমিয়াখুম জলপ্রপাতআমিয়াখুমের সৌন্দর্য দেখতে সব সময়ই পর্যটকরা ভিড় করেন। তবে বর্ষায় আমিয়াখুমের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তখন আবার পাহাড়ের দূর্গমতার মাঝে আমিয়াখুমে পৌঁছানোও কষ্টকর। একই সঙ্গে ভরা বর্ষায় সাঙ্গু নদীর পানি বেশি থাকে ও ফ্লাশ ফ্লাড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে বিবেচনা করে তবেই যাওয়া উচিত। ট্রেকিং করতে হয় বলে শীতকালে যাওয়া কিছুটা সুবিধাজনক।
আরও পড়ুন: বর্ষায় মিরসরাইয়ের ৮ ঝরনায় ঢল নেমেছে পর্যটকদের
কীভাবে যাবেন?প্রথমেই যেতে হবে বান্দরবানে। এরপর থানচি উপজেলা হয়ে আমিয়াখুম যেতে হয়। থানচি থেকে দুইপথে আমিয়াখুম যাওয়া যায়। থানচি-পদ্মঝিরি-থুইসাপাড়া-দেবতাপাহাড়-আমিয়াখুম। অন্যটি হলো থানচি-রেমাক্রি-নাফাখুম-জিনাপাড়া-থুইসাপাড়া-দেবতাপাহাড়-আমিয়াখুম। প্রথম পথে শুধু পদ্মঝিরিতেই প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা ট্রেকিং করতে হয়, এমনকি রাতের বেলাতেও ট্রেকিং করতে হতে পারে। প্রথম রুট দিয়ে অনেকে গেলেও দ্বিতীয় রুট তুলনামূলক সুবিধাজনক। এছাড়া আপনি পদ্মঝিরি দিয়ে গিয়ে রেমাক্রি হয়ে আসতে পারবেন।
জাদিপাই জলপপ্রাতবান্দরবানের জাদিপাই ঝরনা রুমা উপজেলায় অবস্থিত। কেওক্রাডং, জংছিয়া ও জাদিপাই এ তিনটি পাহাড়ি ঝিড়ি একসঙ্গে মিলিত হয়ে জাদিপাই ঝরনার সৃষ্টি করে। এটি প্রায় ২০০ ফুট উপর থেকে ঝরনার স্বচ্ছ পানির ধারা নিচে নেমে এসে সাংগু নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
কীভাবে যাবেন?ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান শহরে গিয়ে চান্দের গাড়িতে রুমা যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে চান্দের গাড়ি ভাড়া প্রায় ৪ হাজার টাকা। রুমা যেতে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘণ্টার মতো। রুমা বাজার নেমে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে নিতে হবে কমলা বাজার পৌঁছানোর জন্য। এখান থেকে হেঁটে বগালেকে উঠে হেঁটে কেওক্রাডং এবং এরপর হেঁটে জাদিপাই ঝরনায় পৌঁছাতে পারবেন।
কেএসকে/জেআইএম