জামালপুরের মাদারগঞ্জে যমুনার শাখা নদীর ওপর সেতু না থাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে ৯ গ্রামের ১৫-১৬ হাজার মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও মিলছে না সমাধান। এমনকি সেতুর অভাবে ছেলে-মেয়েদের ভালো জায়গায় বিয়েও দিতে না পারছেন না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
Advertisement
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার কয়ড়া বাজার থেকে ২ কিলোমিটার দক্ষিণে ফুলারপাড়া গ্রাম। আশপাশে সীমান্তবর্তী সরিষাবাড়ী উপজেলাসহ ৮টি গ্রামের অবস্থান। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে যমুনার শাখা নদী (ত্রিশের দহ)। প্রথমদিকে গ্রামের লোকজন নৌকা দিয়ে এই রাস্তা পারাপার হলেও ১৫ বছর আগে নিজস্ব অর্থ ও স্বেচ্ছাশ্রমে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। ৯২ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সাঁকোটিও এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো দিয়ে ফুলারপাড়া, জামিরা, পাটাদহ, কয়ড়া, চররৌহা, নান্দিনা, খলিশাকুড়ি, খামারমাগুরিয়া ও মাজারিয়াসহ দুই পাড়ের ৯টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পারাপার হচ্ছেন। একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে তারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। নির্বাচন এলে জনপ্রতিনিধিরা আশার বাণী শোনালেও পরে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে কয়ড়া বাজারের মাটির সড়ক ধরে ২ কিলোমিটার দক্ষিণে হাঁটার পর দেখা মেলে ৯২ মিটার দৈর্ঘ্যের এই বাঁশের সাঁকোটির। দেখা যায় সাঁকো দিয়ে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ভ্যানের পাশাপাশি মানুষ হেঁটে যাতায়াত করছে। সাঁকোর অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে। তবুও ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকো দিয়েই পারাপার হচ্ছেন গ্রামের খেটে-খাওয়া মানুষজন।
কথা হয় ফুলারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা লাল মিয়া, শাহজাহান মিয়া, আব্দুর রহিম, লিটনসহসহ আরও অনেকের সঙ্গে। তারা বলেন, উপজেলা শহর, ইউনিয়ন পরিষদ এবং বাজারে যেতে হলে এই রাস্তাই তাদের সহজ। বিকল্প পথে যেতে হলে অনেকটা পথ ঘুরতে হয়। এতে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন তারা। রাস্তার এমন বেহাল দশার কারণে অনেকে আত্মীয়তা করতে চান না। মেয়ে-ছেলের ভালো কোনো বিয়ের কথা হলে সেতুর অভাবে হরহামেশাই তা ভেঙে যায়। তাই একটি সেতু নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
Advertisement
ফুলারপাড়া গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা রয়েছে। বাঁশের সাঁকো পার হয়েই ক্লাসে যেতে হয় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। পারাপার হতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা।
জামিরা দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান মনির জাগো নিউজকে বলেন, একটি সেতুর অভাবে উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করছে। সাঁকোটি এখন আর আগের মতো নেই, মাঝে মাঝে ভেঙে পড়েছে। ফলে মাদরাসায় আসার সময় অনেক সময় শিক্ষার্থীদের বইখাতা নদীতে পড়ে ভিজে যায়। এ কারণে অনেকে মাদরাসায় আসতেও চায় না।
জোড়খালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সুরুজ মিয়া মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, এখানে একটি নয়, ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫টি ব্রিজের দরকার। এই সরকারের আমলে অনেক উন্নয়ন হলেও এই এলাকাটি কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারাও কথা দিয়েছেন। তবে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগে এই ব্রিজগুলো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলিশায় রিছিল মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, এই নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হোক এটা এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। সেই প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি নির্মিত হবে।
Advertisement
এফএ/এমএস