দোকানের সামনে বড় একটি তাওয়ায় একসঙ্গে ভাজা হচ্ছে ছোট ছোট অসংখ্য পুরি। সেই তাওয়া ঘিরে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। দোকানের ভেতরেও পুরির অপেক্ষায় অনেক ক্রেতা। ভাজা শেষ হতে না হতেই গরম পুরি চলে যাচ্ছে অপেক্ষমাণ ক্রেতাদের হাতে। ক্রেতাদের চাপে দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত এমনই চিত্র মুন্সিগঞ্জ সদরের আমতলা এলাকার মো. মজনুর দোকানে।
Advertisement
তবে আর ১০টি দোকানের মতো সাধারণ ডাল কিংবা আলুপুরি নয়, মজনুর দোকানে পুরি তৈরি হয় ১৪ ধরনের মসলা আর ৪ প্রকারের ডালের মিশ্রণে। স্থানীয়দের কাছে খাবারটি পরিচতি ‘খেতা পুরি’ নামে। ভিন্ন স্বাদের এই খেতা পুরি খেতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে আসেন শত শত ক্রেতা।
দোকান সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাদ বেশি হলেও, সাধারণ পুরির চেয়ে দাম কম। প্রতি পিস খেতা পুরির দাম মাত্র ৩ টাকা। সন্ধ্যায় বিক্রি শুরু হয় খেতা পুরি। দোকানটি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় হলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ থেকেও বাইক নিয়ে অনেক ছুটে যান খেতা পুরি খেতে।
সরেজমিনে দোকানটিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি প্লেটে ১০টি করে পুরি পরিবেশন করা হচ্ছে ক্রেতাদের টেবিলে। পুরির সঙ্গে থাকছে ফ্রি সস ও মজাদার চাটনি। যা খাবারের স্বাদকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। দোকানে আসা সবা ক্রেতাই কয়েক প্লেট করে এই পুরি নিচ্ছেন।
Advertisement
বন্ধুদের নিয়ে পুরি খেতে আসা মাহমুদুল হাসান সজল জানান, খেতা পুরির দাম কম হলেও বেশ মজাদার। এই এলাকায় সবার কাছে পরিচিত এই খেতা পুরি।
আরেক ক্রেতা অপু আহমেদ বলেন, অনেকদিন ধরেই শুনছি আমতলার খেতা পুরি খেতে অনেক মানুষ আসে। আজ ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে আসলাম স্বাদ নিতে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে ৩ টাকায় পুরি পাওয়া অনেক ভালো বিষয়। তার ওপর ১৪টি মসলা রয়েছে, সস-চাটনি রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকেও আসছে অনেকে।
দোকানের এক কর্মচারি বলেন, যতক্ষণ শেষ না হয় মানুষের চাপ থাকেই। প্রতিদিনই কয়েকশো মানুষ পুরি খেতে আসে। সিরিয়াল অনুযায়ী সবাইকে দেওয়া হয়। ৪ জন পুরি বানাই আর ২-৩ জন পরিবেশন করি। প্রতিটি তাওয়ায় প্রায় ২০০ পুরি বানানো হয়। তবে একবারের তেল দুইবার ব্যবহার করা হয় না।
তিনি বলেন, প্রতিদিনই শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ক্রেতা আসে। তাদের খালি হাতে ফিরতে হয়। সন্ধ্যা থেকে ১০-১১টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে।
Advertisement
দোকানের মালিক মো. মজনু জাগো নিউজকে বলেন, ৪ বছর আগে এক জায়গায় এই পুরির বিক্রি দেখেই মূলত উৎসাহ পাই। এরপর নিজেই খেতা পুরি তৈরি করে বিক্রি শুরু করি। মুখরোচক স্বাদের কারণে অল্পদিনেই জনপ্রিয়তা পায় এটি। বিশেষ করে যুবকদের কাছে এটি বেশি জনপ্রিয়। প্রতিদিন বিকেল থেকেই শুরু হয় পুরি তৈরির প্রক্রিয়া। ৪-৫ ঘণ্টার দোকানে ৩ থেকে ৪ হাজার পুরি বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, নিয়মিত দূর-দূরান্ত থেকে ৩-৪শো মানুষ পুরি খেতে আসে। ছুটির দিন, শুক্রবার কিংবা কোনো উৎসব থাকলে আরও বেশি হয় মানুষ।
মজনু জানান, এতে শুধু নিজের ব্যবসাই নয়, কয়েকজনের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রথমে একা শুরু করলেও এখন তার দোকানে তিনিসহ মোট ৭ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা এমন থাকলে দোকানটিকে আরও বড় করার ইচ্ছা আছে।
এটি ভাড়া দোকান। নিজের একটি দোকান করে ক্রেতাদের মাঝে আরও ভালোভাবে খেতা পুরি পরিবেশনের ইচ্ছা আছে তার।
এফএ/এএসএম