যশোরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানো পাটের আবাদে বাম্পার ফলন হলেও দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না কৃষকের। প্রায় বৃষ্টিহীন আষাঢ়-শ্রাবণে পাট জাগ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও পানি না পাওয়ায় অল্প পানিতেই পাট পচানোর চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ দূরবর্তী স্থানে নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে একদিকে পাটের মান খারাপ হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যয়ও বাড়ছে।
Advertisement
কৃষি বিভাগ বলছে, পাট পচানোর জন্য প্রায় প্রতিবছরই এ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এজন্য লাগসই প্রযুক্তি প্রয়োজন।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় চলতি মৌসুমে ২৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল পাটের আবাদ হয়েছে। এবার পাটচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। সেখানে ২০০ হেক্টর জমিতে পাটচাষ বেশি হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে পাটচাষের পাশাপাশি আবাদকৃত পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। তবে পাট জাগ দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, এ বছর বর্ষা মৌসুমে আষাঢ়ের মতো শ্রাবণও প্রায় বৃষ্টিহীন। পানি নেই খাল, বিল ও জলাশয়ে। গত এক সপ্তাহের সামান্য বৃষ্টিতে খাল বিলে যে পরিমাণ পানি রয়েছে তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে পাট কেটে ক্ষেত থেকে গরুর গাড়ি অথবা পাওয়ার ট্রিলারে করে দূরের জলাশয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আবার অল্প পানিতে অধিক পাট জাগ দেওয়ায় পাটে সোনালী রং আর থাকছে না। পানিও পচে দুর্গন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
Advertisement
তারা বলছেন, পাটের রং ধারণ করছে কালচে। এতে ভালো দাম পাওয়া যাবে না। বাজারে মার খেতে হবে।
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানো আবাদে পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে যশোর অঞ্চলে পাট কাটাও শুরু হয়েছে। বিশেষ করে যারা আমন আবাদ করবেন তারা এরইমধ্যে পাট কেটে ফেলেছেন। কিন্তু পানির অভাবে জাগ দিতে না পারায় অনেক কৃষক পাট কেটে ক্ষেতেই আঁটি বেঁধে ফেলে রাখছেন। ফলে রোদে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে গরুর গাড়ি, পাওয়ার ট্রিলার বা নসিমনে করে পাট দুই-তিন কিলোমিটার দূরে বাওড় বা নদীতে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে তাদের বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে।
যশোর সদর উপজেলার চুড়মকাটি ইউনিয়নের কৃষক আমিন উদ্দিন বলেন, গত তিন বছর ধরেই যশোরের পাটচাষিরা পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপদের মধ্যে আছেন। এবার তিন বিঘার মতো জমিতে পাট চাষ করেছি। এরইমধ্যে পাট কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
আরেক পাটচাষি জহির মিয়া জানালেন, এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। গত মৌসুমে প্রকারভেদে প্রতি মণ পাট ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন। কিন্তু এবার পাট ভালোভাবে জাগ দিতে না পারায় ভালো দাম পাবেন না। এবার প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১০-১২ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিলে তেমন লাভ থাকবে না।
Advertisement
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, যশোরে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কৃষকরা সমস্যায় আছেন। যদিও গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সমস্যার কিছুটা সমাধান হয়েছে। তবে প্রতিবছরই পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক উল্লেখ করেন, বৃষ্টি না হলে পাট জাগ দেওয়ার মতো ছোট ছোট জলাশয়গুলোতে পানি থাকে না। আর এখন পতিত পুকুর পাওয়া যায় না। সব পুকুরেই মাছচাষ হচ্ছে। ফলে নদী বা বাওড়েই পাট জাগ দিতে হয়। ইতোপূর্বে রিবন রেটিং পদ্ধতি নিয়ে আসা হলেও সেটি কৃষকরা গ্রহণ করেননি। ওই পদ্ধতিতে শ্রমিকব্যয় বেশি হয়, পাটকাঠি ভালো পাওয়া যায় না। এজন্য পাট জাগ দিতে নতুন পদ্ধতি দরকার।
এটি গবেষণাগার থেকে আসতে হবে। অন্তত অল্পপানিতে অল্পদিনে পাট পাচানো যায় এমন পদ্ধতি হলেও কৃষকরা উপকৃত হবেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতেও আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এফএ/এমএস