ফিচার

১৫ আগস্ট: শোক থেকে শক্তির জাগরণ

একটি ইতিহাস, একটি নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির আপোসহীন এই নেতার আবির্ভাব না হলে একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। তাঁরই বজ্রকন্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহ্বান। বাঙালি জাতির চেতনাকে, ভেতরের সুপ্ত শক্তিকে অভূতপূর্ব যাদুতে নাড়া দিয়েছিলেন এই মহান নেতা। বাঙালি জাতিকে বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। সর্বকালের সফল রাজনৈতিক নেতা। তাঁর উপর আস্থা রেখে, তাকে ভালোবেসে জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল দেশের আপামর জনতা! অথচ আশ্চর্য! তাঁর জীবনকাল মাত্র পঞ্চান্ন বছরের। জীবনের একযুগের অধিক সময় কেটেছে জেলখানায়। এতোটুকু সময়ের জীবনে এদেশের আপামর বাঙালিকে ভালোবেসে তাদের দাবি আদায়ের সংগ্রামে কেমন করে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি? ভাবলে অবাক হতে হয়।

Advertisement

বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবনে একটিই ব্রত ছিল-বাংলাদেশ ও বাঙালির মুক্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা। যার শুরু ১৯৪৮ সাল থেকে। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, এই রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে আমরা বাঙালিরা নির্যাতিত-নিষ্পেষিত হবো। তাই এ থেকে জনগণের মুক্তির জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন আন্দোলন-সংগ্রামের পথ। ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারির মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৫৬-এর শাসনতন্ত্রের জন্য আন্দোলন, ’৬২-এর ১৭ সেপ্টেম্বরের শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৪-এর সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়-প্রতিটি ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর ছিল বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন আর স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু ছিল বঙ্গবন্ধুর নিত্যসঙ্গী।

আরও পড়ুন: শোকাবহ আগস্ট: আমাদের দায় 

১৯৭১ সালে সামরিক আইন জারি করে পাক শাসক ইয়াহিয়া খান। আওয়ামী লীগ নেতাদের ধরপাকড় শুরু হয়ে যায়। ২৬ মার্চ গ্রেফতার হওয়ার আগে শেখ মুজিব ঘোষণা করেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের যার যা আছে, তাই দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান।’ এরপরই গ্রেফতার হন শেখ মুজিব। গ্রেফতারের আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে যেসব দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন, জনগণও তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দেখিয়ে দিয়েছে নেতার প্রতি আনুগত্য। বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ও আস্থা ছিল আকাশচুম্বী। সেজন্য হাসিমুখে, নির্ভীক চিত্তে মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সব ধরনের জুলুম-নির্যাতন বরণ করেছেন তিনি। এক যুগের অধিক সময় নানান প্রহসনমূলক মামলায় বিনা বিচারে বঙ্গবন্ধুকে কারাবরণ করতে হয়েছে। একাধিকবার ফাঁসির মঞ্চ তৈরি হয়েছিল তাঁর জন্য। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। মুক্তিযুদ্ধকালীনও পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে আটক বঙ্গবন্ধুকে বিচারের প্রহসন করে ফাঁসি দেওয়ার নানারকম অপচেষ্টা চলে। কিন্তু না। তা তো হবার নয়! বঙ্গবন্ধু তো বিশ্ববন্ধু। বঙ্গবন্ধুর সমর্থনে রয়েছে বিশ্ব বিবেকের চাপ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। পাকিস্তানি অপশাসনের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে রক্তক্ষয়ী সেই মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশে নিয়ে আসে নতুন প্রভাত। বাঙালি জাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি স্বাধীন এই বাংলাদেশ। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিরল ও অনন্য এক ঘটনা হয়ে ঠাঁই নিয়েছে বিশ্বের ইতিহাসের পাতায় পাতায়।

Advertisement

পাকিস্তানি কারাগার মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এসে দেখলেন, এতো সেই বাংলাদেশ আর নেই। নেই বলতে কিছুই নেই। পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের রেখে যাওয়া একটি ধ্বংসস্তূপ বাংলাদেশ। তবুও হতাশ নন তিনি। শক্ত হাতে দেশের হাল ধরেন। দেশের মানুষকে ধৈর্য্য ধরার, সাহস না হারানোর প্রেরণা যোগান। এগিয়ে যাচ্ছিল দেশ। কিন্তু কে জানে? বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ভোলেনি প্রতিশোধের কথা! ভেতরে ভেতরে দেশি-বিদেশি একাধিক চক্র এক হয়ে নানাভাবে চেষ্টা করে-কীভাবে প্রতিশোধ নেওয়া যায়?

১৫ অগাস্ট ১৯৭৫ সাল। দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে কলঙ্কময় ও বেদনার দিন। বাংলাদেশ ও বাঙালির সবচেয়ে হদয়বিদারক ও শোকের দিন। এদিনের কাকডাকা ভোরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে কাপুরুষোচিত হামলা চালায় ঘাতকরা। হিমালয় সদৃশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ বাসভবনে নিজ দেশের কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন। এ নারকীয় হামলায় ভবনের প্রতিটি তলার দেয়াল, জানালার কাঁচ, মেঝে ও ছাদে রক্ত, মগজ ও হাড়ের গুঁড়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। গুলির আঘাতে দেয়ালগুলোও ঝাঁজরা হয়ে যায়। চারপাশে রক্তের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায় ঘরের জিনিসপত্র। দেখা যায়, প্রথম তলার সিঁড়ির মাঝখানে নিথর পড়ে রয়েছেন নিখাদ বাঙালির প্রতিচ্ছবি, চেক লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ। তাঁর তলপেট ও বুক ছিল বুলেটে ঝাঁজরা। পাশেই পড়েছিল তাঁর ভাঙা চশমা ও অতিপ্রিয় তামাকের পাইপ। এভাবেই নারকীয় পৈশাচিক ভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এ হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, নব-পরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির জনকের ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আব্দুল্লাহা বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিহত হন। শুধু তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা সে সময় জার্মানিতে অবস্থান করায় ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাবিধুর, কলঙ্কিত ও বিভীষিকাময় একটি ঘটনা। এমন ভয়াবহভাবে হত্যার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। কলংকিত হয় জাতি। লজ্জায় ডুবে মানবতা। দেশে দেশে নেমে আসে তীব্র শোকের মাতম। নোবেলজয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, ‘শেখ মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।’ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।’ দ্য টাইমস অব লন্ডন এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়- ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।’ একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’ বাঙালিরা যথার্থই অনুধাবন করতে পারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করে দেশে পাকিস্তানি ভাবধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, বাংলাদেশ বিরোধী, দেশীয় বেঈমান ও তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের একাত্তরে পরাজয়ের সুপরিকল্পিত জঘন্য ও কাপুরুষোচিত নির্মম প্রতিশোধ ছিল এই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। হত্যাকারীরা শুধু ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি। বঙ্গবন্ধুর গড়া ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশও হত্যা করে।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু বাঙালির মানসপটে চির অমলিন 

Advertisement

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশ ও জাতিকে বিপথগামী করার অপপ্রয়াস চালানো হয়। জামাত-বিএনপি, স্বৈরাচার শক্তি বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে নানান পাঁয়তারা করে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বিখ্যাত ভাষণ বাজানো, শোনা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। অপশাসকদের রোষানলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণও নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে। হত্যাকারীদের বিচার থেকে রেহাই দিতে তৎকালীন সরকার জারি করে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা দীর্ঘদিন ছিল বিচারের আওতাবহির্ভূত। ১৫ আগস্টের পর অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে যায় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সাধের বাংলাদেশ চলে যায়, পাকিস্তানি ভাব-ঘরানার বিএনপি, জামাত-স্বৈরাচার শক্তির হাতে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ পরিচিত হয় অভিভাবকহীন-পরিচয়বিহীন এতিম দেশ। বিদেশের দান খয়রাতে চলা ভিক্ষুকের দেশ। বানের পানি, মশা, মাছি, ম্যালেরিয়া, ঘূর্ণিঝড়, কলেরা, ডায়রিয়ার দেশ-বাংলাদেশ।

কিন্তু না, ১৫ আগস্টের শোক থেকে ঘটে শক্তির জাগরণ। আকাশচুম্বি চ্যালেঞ্জ আর ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে শক্ত হাতে দেশের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী, জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সচল হয়। দেরিতে হলেও কয়েকজনের বিচার কার্যকর হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার স্বপ্ন-সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। বাংলাদেশের উন্নয়নের পরতে পরতে, আকাশে-বাতাসে সবখানে বঙ্গবন্ধু। জয়বাংলা খচিত ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাশূন্যে ডানা মেলে আগামী প্রজন্মের জন্য স্বপ্নের ডিজিটাল জানালা খুলে দিয়েছে। উন্নত বিশ্বের লক্ষ্য নিয়ে, পরিকল্পিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। কে না জানে, দেশব্যাপী করোনায় আর্থিক সহায়তা, দুঃস্থদের জন্য ঘর নির্মাণ, মডেল মসজিদ নির্মাণ, নিজের টাকায় পদ্মাসেতু, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রথম টানেল স্থাপনের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অদম্য শক্তি-সাহস শেখ হাসিনা বলেই সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা নিজ প্রচেষ্টা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে হেনরি কিসিঞ্জারের তথাকথিত ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’র দেশ বদনাম থেকে দেশকে মুক্ত করেছেন। ধীরে ধীরে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন সম্মানজনক অবস্থানে। বাংলাদেশ আজ খাদ্য নিরাপত্তা, সমুদ্র বিজয়, শিক্ষা, জ্বালানি ও স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নতিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সামাজিক সূচকের অনেকগুলোতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকেও এগিয়ে বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে শিল্প বিপ্লবের দিকে ধাবমান-বাংলাদেশ আজ সত্যিই এক প্রাণবন্ত অর্থনীতিতে সুযোগের দেশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিশ্বের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান এক নম্বরে।

আমাদের অর্থনীতির অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে এখন এশিয়ার বাঘ হিসেবে চিহ্নিত করছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। যে যুক্তরাষ্ট্র, যে পাকিস্তান এক সময় বাংলাদেশকে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, কটাক্ষ করতে দ্বিধা করতো না। সেই যুক্তরাষ্ট্রের লোলুপ দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের উপর। আর সেই পাকিস্তান? অর্থনীতি, সামাজিক, মানবাধিকার এবং মানবিকতার সূচকে বর্তমান বাংলাদেশের এতোটাই পেছনে পড়ে রয়েছে যে, বিগত দিনের আক্ষেপ, অনুশোচনা নিয়ে পাকিস্তান আপন মনে প্রায়শ্চিত্ত করতে দেয়ালে মাথা ঠুঁকে চলেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিশ্বের মোড়ল দেশ-যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তার কারণেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবিশ্বাস্য ও দুর্দান্ত সফলতা অর্জন করে চলেছে বাংলাদেশ। নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অন্তর্ভূক্তি শেখ হাসিনা সরকারের আরেকটি অসামান্য সাফল্য। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব এই সাফল্য অর্জনে বাঙালির রয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে বাংলাদেশ, এটিই জাতির প্রত্যাশা।

লেখক: এম.ফিল স্কলার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

কেএসকে/জিকেএস