সৈয়দপুর কামার পুকুর ইউনিয়নের তহমিনা আক্তার রুনি। নিজের দেড় শতাংশ জমিতে করেছেন পারিবারিক পুষ্টি বাগান। সেই বাগানের উৎপাদিত সবজি থেকে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে কিছু শাক-সবজি বিক্রি করেন বাজারে। এতে প্রতিমাসে তার আয় হয় প্রায় তিন হাজার টাকা।
Advertisement
তহমিনার মত পারিবারিক পুষ্টি বাগান করেছেন একই এলাকার মোহাম্মদ আলী। সেখান থেকে উৎপাদিত সবজি দিয়ে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রির পাশাপাশি প্রতিবেশীদেরও দেন তিনি।আগে প্রতি মাসে বাজার থেকে শাক সবজি কিনতে যে টাকা খরচ হতো তা পুরোটাই এখন সঞ্চয় হয় মোহাম্মদ আলীর।
আরও পড়ুন: মিষ্টি কুমড়া চাষে কৃষক ওমর ফারুকের সফলতা
শুধু তহমিনা বা মোহাম্মদ আলী নয়, নীলফামারী জেলায় কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এমন পারিবারিক পুষ্টি বাগান করেছেন জেলার দুই হাজার ৪৪৯ পরিবার।এসব পুষ্টি বাগান থেকে প্রতিবছর উৎপাদিত হচ্ছে কোটি টাকার সবজি।ফলে পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পরিবারগুলোতে বাড়ছে স্বনির্ভরতা।
Advertisement
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটানোর লক্ষে ২০২০ সালে দেশব্যাপী এ রকম পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও আদা, হলুদ চাষের একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সারাদেশে ৫ লাখ পুষ্টি বাগান তৈরির লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। ফলে সারাদেশের কমপক্ষে ৫ লাখ পরিবার নিরাপদ সবজি খেতে পারবে।পাশাপাশি পরিবারগুলোর সাশ্রয় হবে মোটা অঙ্কের অর্থ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারিবারিক এসব বাগানে চাষ হচ্ছে শিম, মরিচ,শাক, লাউ, কুমড়া, মিষ্টি আলুসহ আদা ও হলুদ।সুভিধাভোগীরা বলছেন প্রতিটি বাগান থেকে বছরে প্রায় ২০০ কেজির বেশি শাক সবজি উৎপাদন সম্ভব।
আরও পড়ুন: সরকারি সব অফিসে পুষ্টিবাগান: মিটছে সবজির চাহিদা
কৃষি অধিদপ্তর বলছে, এসব পুষ্টি বাগান থেকে ৩-৪০ শতাংশ পুষ্টি ও ৪-৩২ শতাংশ প্রোটিন চাহিদা মেটানো সম্ভব। আর দেড় শতাংশ জমির সবজি বাগানে বছরে ২০০ কেজি সবজি উৎপাদন হলে জেলায় দুই হাজার ৪৪৯টি সবজি বাগানের উৎপাদিত সবজির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ কেজি। প্রতিকেজি সবজি গড়ে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলে এর বাজার মূল্য ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ফলে সরকারের পুষ্টি বাগানের আওতায় থাকা পরিবারগুলোর সাশ্রয় হচ্ছে বৃহৎ অংকের টাকা।
Advertisement
কামার পুকুর ইউনিয়নের তহমিনা আক্তার রুনি জাগো নিউজে বলেন, বাগানে লাল শাক, পুঁই শাক, কচু শাক আছে। এগুলা নিজে খাই, প্রতিবেশিদের দেই আবারও বিক্রিও করি। বেগুন, কাচা মরিচ বিক্রি করেছি। মাসে আড়াই হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারি।
আরও পড়ুন: সাড়ে ৬ কোটি টাকা বিক্রির আশা
একই এলাকার মোহাম্মদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, আগে মাসে ২-৩ হাজার টাকার শাক-সবজি কেনা লাগতো, এখন লাগে না। এখন সেটা বাগান থেকে পাচ্ছি এবং টাটকা খাবার খাচ্ছি। তাতে আমরা ভালো আছি।
আব্দুর রশিদ নামের আরেকজন জাগো নিউজকে বলেন, পুষ্টি বাগানে এখন ডাটা শাক, কলমি শাক, লাল শাক, শিম ও বেগুন আছে।বাগান থেকে উৎপাদিত শাক-সবজি আমরা খাই, প্রতিবেশিদের দেই।
তিনি আরও বলেন, এখানে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না।অল্প জমিতে অনেক সবজি চাষ করা যায়। অনুরোধ করবো এমন একটি নিরাপদ সবজি বাগান যেন সবাই করে।
আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে টমেটো চাষ করে লাভবান উজ্জ্বল
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের প্রকল্পের আওতায় জেলায় চার হাজারের বেশি পুষ্টি বাগান আছে। এসব বাগান থেকে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে এক থেকে দেড় মণ শাক সবজি বিক্রিও করছেন অনেকে।ফলে তারা আর্থিকভাবেও লাভোবান হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ২২ দেশ ঘুরে নিজ বাড়িতে পেঁপে চাষে সফল সুমন
তিনি আরও বলেন, আগে যে জমিগুলো পতিত থাকতো, সেটা কিন্তু পুষ্টি বাগানের মাধ্যমে চাষের আওতায় আসছে।পুষ্টির চাহিদা পুরণেই সরকারের এ প্রকল্প। আমাদের টার্গেট প্রতি ইউনিয়নে এক হাজার করে পুষ্টি বাগান তৈরি করা, ইতিমধ্যে চার হাজার করেছি।
রাজু আহম্মেদ/এএইচ/জেআইএম