দেশজুড়ে

সব হারিয়ে দিশেহারা ৭১ হাজার কৃষক

বন্যায় সব হারিয়ে দিশেহারা বান্দরবানের অধিকাংশ কৃষক। ফসল ও বসতঘর হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই।

Advertisement

বান্দরবান কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবারের বন্যায় বান্দরবানে ৭১ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সোমবার (১৪ আগস্ট) বান্দরবান সদর এলাকার গোয়ালিয়া খোলা ও রত্নপুর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: বান্দরবানে পাহাড়ধসে মা-মেয়ে নিহত, হাজারো ঘরবাড়ি প্লাবিত

বান্দরবান সদর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের রত্নাপুর এলার চাষি নিরঞ্জন অঞ্চঙ্গ্যা (৭৪) ও তার স্ত্রী নাগছবি তঞ্চঙ্গ্যা (৬৫) জানান, বন্যার আগে দুই একর জমিতে পেঁপে, আনারস ও ধনেপাতা চাষ করেছিলেন। বন্যায় সব ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে এবং তাদের বসবাসের মাটির ঘরটিও ভেঙে গেছে। এখন তারা পুরোপুরি নিঃস্ব।

Advertisement

তারা জানান, এরমধ্যে ৫ কেজি করে দুইবার ১০ কেজি ত্রাণের চাল পেয়েছিলেন। এই চাল দিয়ে রান্না করে খাবার মতো কিছুই না থাকায় প্রতিবেশীদের দেওয়া বনরুটি খেয়ে থেকেছেন। এখন বন্যায় ভেঙে পড়া ঘরের মধ্য থেকে কোনোকিছু উদ্ধার করা যায় কি না সেই চেষ্টা করছেন। তবে এই বিপদ থেকে কীভাবে উদ্ধার হবেন তা জানা নেই তাদের। তাই সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন এই বৃদ্ধ দম্পতি।

আরও পড়ুন: মানবেতর জীবন কাটছে রুমা-থানচির বাসিন্দাদের

ওই এলাকার আরেক কৃষক রুস্তম আলী (৫৮) জানান, দীর্ঘ সময় প্রবাসজীবন কাটানোর পর গত ১০ বছর ধরে এলাকায় ৬ একর জমিতে ১ হাজার ৫০০ মালটা, ১৬০০ পেঁপে, ৯০০ বল সুন্দরী ও ভারত সুন্দরী কুল, ৫০০ পেয়ারা, ৪০ শতক জমিতে শশা, ৪০ শতকে বেগুন, ৩০ শতকে বরবটিসহ বিভিন্ন ফল ও সবজির আবাদ করেছিলেন। এবারের বন্যায় সব আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। সবমিলে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার।

নীলকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা ও সুনীতি জীবন তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ১০ একর জমিতে পেঁপে, মালটা, আনারস, কলা ও ৭টি পুকুরে মাছের চাষ করেছিলেন। বন্যায় সব শেষ। প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তারা।

Advertisement

আরও পড়ুন: বন্যায় বান্দরবান গণগ্রন্থাগারের ৩০ হাজার বই নষ্ট

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (শস্য) মো. হাসান আলী জানান, পাহাড়ে জুমচাষ ছাড়া এই মৌসুমে জেলায় ২০ হাজার ১২৫ হেক্টর সমতল জমিতে রবিশস্য আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে বন্যায় জেলায় ৭১ হাজার কৃষকের ৮ হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, রোপা আমন, রোপা আউশ, গীষ্মকালীন সবজি, কলা, পেঁপেসহ নানা রবিশস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩১০ কোটি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বীজ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। জেলায় পর্যাপ্ত বীজ না থাকায় অন্য জেলা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বীজের চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

এফএ/এএসএম