# দেশে ভারী সড়ক নির্মাণে ‘৮০-১০০’ বিটুমিনের ব্যবহার না থাকলেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কার্পেটিংয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে# বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮০-১০০ বিটুমিন ব্যবহারের ফলে সড়কের স্থায়িত্ব কমবে, গরমে গলে যাবে সড়ক
Advertisement
বাংলাদেশে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে দুই ধরনের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন অত্যধিক মানসম্পন্ন ও স্থায়িত্ব বেশি। দেশের বড় বড় সড়ক-মহাসড়ক কার্পেটিংয়ে এ বিটুমিন ব্যবহার হয়। ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিনের মান অপেক্ষাকৃত কম। অতি তাপমাত্রায় এ বিটুমিন গলে যায়। গাড়ির চাপ কম থাকে এমন গ্রামীণ ছোট সড়ক কিংবা উপজেলা পর্যায়ের সড়ক নির্মাণে সাধারণত এ বিটুমিন ব্যবহার হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প চট্টগ্রামের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বড় অংশে ব্যবহার হচ্ছে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে গাড়ি চলাচল বেড়েছে। সে কারণে টেকসই সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার এখন বাধ্যতামূলক। কিন্তু উল্টোচিত্র পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীনে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে।
আরও পড়ুন>> এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বদলে দেবে চট্টগ্রামের যোগাযোগ-বাণিজ্য
Advertisement
প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কার্পেটিংয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের এ বিটুমিন দিয়ে প্রকল্পের কার্পেটিং কাজ করছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) থেকে সংগৃহীত বিটুমিনের বড় অংশই ৮০-১০০ গ্রেডের। তবে সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের যানজট কমাতে, মূল শহর থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর ও বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে কক্সবাজারের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এরই মধ্যে পুরো প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ। আগামী অক্টোবরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির একটি অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের বিটুমিন কার্পেটিং চলছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়েতে পতেঙ্গা টানেল মুখ দিয়ে কার্পেটিং কাজ শুরু হয়েছে। পাঁচ কিলোমিটারের বেশি প্রথম লেয়ার দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রকল্প প্রস্তাবনায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজে প্রথমে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিনই নির্ধারণ করা ছিল। ২০২১ সালের ২১ জুন বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) মহাব্যবস্থাপককে সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমানের লেখা এক চিঠিতে প্রকল্পের জন্য সাত হাজার মেট্রিক টন ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন সরবরাহের অনুরোধ করা হয়।
আরও পড়ুন>> চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যয় বাড়লো ১০৪৮ কোটি টাকা
Advertisement
৬ অক্টোবর বিপিসি চেয়ারম্যান বরাবর লেখা প্রকল্প পরিচালকের আরেক চিঠিতেও প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করে প্রকল্পের ঠিকাদারকে সাত হাজার মেট্রিক টন ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন সরবরাহের অনুরোধ করা হয়। এরপর ওই বছরের ২৯ নভেম্বর এসএওসিএলের মহাব্যবস্থাপককে চিঠি দেন বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বণ্টন ও বিপণন) আবুল কালাম আজাদ। ওই চিঠিতে আজাদ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের রাস্তা উন্নয়নের জন্য প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-রেনকিনের (জেভি) অনুকূলে ৬০-৭০ গ্রেডের সাত হাজার মেট্রিক টন বিটুমিন সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
পরবর্তী সময়ে বিপিসির নির্দেশনা অনুসারে এসএওসিএলকে বাদ দিয়ে আরেক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স লিমিটেডকে (ইএলবিএল) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিটুমিন সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর মধ্যে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বিপিসির মহাব্যবস্থাপককে (বণ্টন ও বিপণন) পত্র দেয় সিডিএ। সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত একটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-রেনকিন (জেভি) এসএওসিএল থেকে ৬শ মেট্রিক টন বিটুমিন পেয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমান সরকারের মেয়াদকালীন অর্থাৎ আগামী অক্টোবর ২০২৩ এর মধ্যে ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাছাড়া ফ্লাইওভারের নিচে প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তা কার্পেটিংসহ ওপরের ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার কার্পেটিং কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ৬০-৭০ ও ৮০-১০০ গ্রেডের আরও সাড়ে ছয় হাজার মেট্রিক টন বিটুমিনের প্রয়োজন। মূলত এ পত্রের মাধ্যমে ৮০-১০০ বিটুমিন ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইএলবিএল থেকে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৭০৫ মেট্রিক টন বিটুমিন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন রয়েছে ৬০-৭০ গ্রেডের দ্বিগুণেরও বেশি। বিপিসির সর্বশেষ ৮ আগস্ট নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন প্রতি ড্রাম ১২ হাজার এবং প্রতি মেট্রিক টন ৭৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ১২ হাজার ৫০০ এবং প্রতি মেট্রিক টন ৭৭ হাজার ৩০০ টাকা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কার্পেটিংয়ের মান ও স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত একজন বিটুমিন বিশেষজ্ঞ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিটুমিন নিয়ে গবেষণা করছেন। ড. পালিত জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করার জন্য সরকারিভাবেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। কারণ বাংলাদেশের তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছে। বিটুমিন এখন দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে রিলেটেড হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন>> এক্সপ্রেসওয়ে-মেট্রোতে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল
এ বিটুমিন গবেষক বলেন, ‘সড়কে আগে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হতো। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে ওই বিটুমিনের রাস্তা নরম হয়ে যায়। যে কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এখন বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারি প্রকল্পে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার হয়ে আসছে। এখন এক্সপ্রেসওয়েতে কেন ৮০-১০০ বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা আমার বোধগম্য নয়। এটা প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাই বলতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘পুরো এক্সপ্রেসওয়েটি কংক্রিট দিয়ে নির্মিত। এখন কংক্রিটের স্থাপনার ওপর বিটুমিনের একটি ছোট লেয়ার দেওয়া হচ্ছে। ৮০-১০০ বিটুমিন ব্যবহার করা হলে গরমে এটির সমস্যা হতে পারে। যেগুলো হেভি রোড সেগুলোতে বর্তমানে কোনোভাবেই ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহারের যৌক্তিকতা নেই।
‘সড়কে আগে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হতো। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে ওই বিটুমিনের রাস্তা নরম হয়ে যায়। যে কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এখন বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারি প্রকল্পে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার হয়ে আসছে। এখন এক্সপ্রেসওয়েতে কেন ৮০-১০০ বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা আমার বোধগম্য নয়।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৭৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি ছয় লেনের সেতু নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এখন চলছে সংযোগ সড়কের কাজ। ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (সিবিআরএনআইপি) আওতায় এর কাজ হচ্ছে।
সড়কে বিটুমিন ব্যবহার নিয়ে সিবিআরএনআইপি প্রকল্প পরিচালক ও সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি একটি আন্তঃদেশীয় সংযোগ সড়ক এবং এশিয়ান করিডোরের একটি অংশ। মহাসড়কটি দিয়ে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত ও একটি সুন্দর সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চারটি ছয় লেনের সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন।
তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এখন ৮০-১০০ বিটুমিন ব্যবহার করে না। ৮০-১০০ বিটুমিনের স্থায়িত্ব কম। রোদের গরমে তাড়াতাড়ি গলে যাবে। বাংলাদেশের বর্তমান তাপমাত্রা এবং সড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে ৮০-১০০ বিটুমিন দিয়ে সড়ক বানালে তা বেশিদিন টেকসই হবে না। এই বিটুমিন ছোট রাস্তায় ব্যবহার হয়।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৮০-১০০ বিটুমিন ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি দপ্তরের একাধিক প্রকৌশলীও। যারা এরই মধ্যে দেশের বড় বড় সড়ক-মহাসড়ক, বড় সেতু নির্মাণে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাদের একজন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সড়ক বানাই নির্বিঘ্নে গাড়ি চলাচলের জন্য। এখন সড়ক বানানোর পর যদি গাড়িই চালানো না যায়, তাহলে এত টাকা খরচ করে সড়ক বানানোর কোনো মানে হয় না। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে একটি মেগাপ্রকল্প। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করবে। এখানে ৮০-১০০ বিটুমিন ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ এখন ৮০-১০০ বিটুমিন ব্যবহার করে না। ৮০-১০০ বিটুমিনের স্থায়িত্ব কম। রোদের গরমে তাড়াতাড়ি গলে যাবে। বাংলাদেশের বর্তমান তাপমাত্রা এবং সড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে ৮০-১০০ বিটুমিন দিয়ে সড়ক বানালে তা বেশিদিন টেকসই হবে না।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কার্পেটিংয়ের জন্য ৬০-৭০ বিটুমিন ছাড়া আমরা অন্য কোনো বিটুমিন ব্যবহার করিনি। তবে টেক কোট (কার্পেটিং করার শুরুতে সড়ক ভিজিয়ে নেওয়া) দেওয়ার ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে ৮০-১০০ গ্রেড ব্যবহার করি। সবমিলিয়ে তা মূল চাহিদার পাঁচ শতাংশেরও কম।
প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি বিটুমিন সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ইএলবিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. জসীম উদ্দীনের। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত জুলাই পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ২২১ মেট্রিক টন ৬০-৭০ গ্রেডের এবং ৪৮৪ মেট্রিক টন ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন দেওয়া হয়েছে।’ এতে দেখা যায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচের সড়ক এবং ওপরের কার্পেটিং কাজে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিনই বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে।
সিডিএ সূত্রে জানা যায়, নগরীর লালখান বাজার থেকে শুরু হয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হচ্ছে। র্যাম্প ও লুপ মিলে উড়াল সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ২০ কিলোমিটার। চার লেনের এ এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্থ ৫৪ ফুট। এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি এলাকায় ২৪টি র্যাম্প (গাড়ি ওঠানামার পথ) থাকবে। নগরীর টাইগারপাস মোড়ে চারটি, আগ্রাবাদ মোড়ে চারটি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে দুটি, নিমতলী মোড়ে দুটি, কাস্টমস মোড়ে দুটি, সিইপিজেড মোড়ে চারটি, কর্ণফুলী ইপিজেডের সামনে দুটি কাঠগড়ে দুটি এবং পতেঙ্গা সৈকত এলাকায় দুটি র্যাম্প থাকবে।
চট্টগ্রাম মূল শহর থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, শহরের যানজট কমিয়ে আনার পাশাপাশি যাত্রাপথের দূরত্ব কমাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। যৌথভাবে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ পায় বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ও চীনা প্রতিষ্ঠান রেনকিন। প্রকল্পটির চুক্তিমূল্য ছিল তিন হাজার ৭২০ কোটি চার লাখ ৬৭ হাজার ৭২৮ টাকা। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন। সবশেষ সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় ও সময় বাড়ানো হয়। সংশোধিত ব্যয় অনুযায়ী আরও ৬৪৯ কোটি দুই লাখ ৪৩ হাজার ৯১ টাকা বৃদ্ধির ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দেয় সরকার। ব্যয় বেড়ে এখন প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা। মেয়াদও বেড়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
এমডিআইএইচ/এএসএ/জেআইএম