কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত মাটির রাস্তা ডুবে আছে হাঁটুপানিতে। সকাল থেকে শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সঙ্গে দমকা বাতাস। এমনই এক প্রতিকূল পরিবেশে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সে সন্তান জন্ম দিয়েছেন লামিয়া নামের এক প্রসূতি।
Advertisement
ওয়াটারবাসে করে প্রায় ১৫ কিলোমিটার নৌপথের অর্ধেক পার হতেই তীব্র প্রসব বেদনা অনুভব করেন লামিয়া। এসময় সঙ্গে থাকা পল্লিচিকিৎসক আকবর হোসেন ও ধাত্রী ফাতিমা খাতুন তৎপর হয়ে ওঠেন। সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সের চালক। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে মাঝনদীতে একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন লামিয়া।
রোববার (১৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন খোলপেটুায় নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
সদ্যজাত শিশুর নানা মামুন হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাতাখালী থেকে নওয়াবেঁকী যাওয়ার একমাত্র কাঁচাসড়ক পানির নিচে। লামিয়ার আকস্মিক ব্যথা শুরু হলে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। আল্লাহর রহমতে বিপদ কেটে গেছে।’
Advertisement
নবজাতকের বাবা রিপন হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের গ্রাম থেকে এর আগে অনেকে এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা সদরে যেতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। মাটির রাস্তা আর দুর্গম জনপদ হওয়ায় সন্তান প্রসবকারী রোগী আর স্বজনদের জন্য বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তবে মাত্র দুই সপ্তাহ আগে উপহার পাওয়া ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সটির কারণে আমার স্ত্রী মাঝনদীতে সন্তান জন্ম দিতে পেরেছেন।’
ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সের চালক মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সে কাজ করায় তাকে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এতে রোগী, তাদের স্বজন ও চিকিৎসকসহ ১২ জনের ধারণক্ষমতা রয়েছে।’
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ উপজেলার দুটি দ্বীপ ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার রোগী বিশেষ করে প্রসূতি নারীদের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছানো জীবনের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ওখান থেকে রোগীদের নিয়ে আসা আরও কঠিন। উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বেসরকারি সংস্থা এবানডান্স অব গুড ইংক ইউএসএর অর্থায়নে ও সোসিও ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যালায়েন্সের বাস্তবায়নে গত ২৮ জুলাই দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও পদ্মপুকুরের মানুষের জন্য জরুরি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স চালু করা হয়।
Advertisement
আহসানুর রহমান রাজীব/এসআর/জেআইএম