ভয়াবহ দাবানলে তছনছ হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপ। প্রতিদিনই সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। গত এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই দাবানলে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন প্রাণ হারিয়েছে। মার্কিন সরকারে নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
Advertisement
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ১০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারা সতর্ক করেছেন যে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। লোকজনকে উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। হাওয়াই দ্বীপের ঐতিহাসিক মাউয়ি শহরটির বড় একটি অংশই দাবানলে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা সেখান থেকে বেঁচে ফিরেছেন তারা বলছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাদেরকে কোনো প্রকার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: হাওয়াইয়ে দাবানলে মৃত বেড়ে ৮৯, বাড়ছে ক্ষোভ
শহরের বেশ কিছু এলাকায় এখন আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন দমকল কর্মীরা। লাহাইনা থেকে সরিয়ে নেওয়া বাসিন্দারা বলেছেন, তাদের কারো কারো বাড়িতে লুটপাট হয়েছে। তবে পুলিশ এ খবর নিশ্চিত করেনি।
Advertisement
ফেডারেল কর্মকর্তা জেরেমি গ্রীনউড বলেছেন, প্রায় ১০০০ মানুষের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তবে এমন হতে পারে যে তাদের কেউ কেউ হয়তো নিরাপদেই আছেন। কোস্টগার্ড বলছে, শহরের পোতাশ্রয় এলাকায় পানি থেকে তারা ১৭ জন লোককে জীবিত উদ্ধার করেছেন। এসব লোকজন আগুন থেকে বাঁচতে সাগরের পানিতে লাফিয়ে পড়েছিল। বেঁচে যাওয়া ও বাস্তুচ্যুত লোকদের জন্য ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যটকদের জন্য ব্যবহৃত হোটেল ও ভাড়া বাড়িতে দুর্গত লোকদের রাখার জন্য তারা পরিকল্পনা করছেন।
ওই দ্বীপে আমেরিকার অনেক ধনী ব্যক্তি বসবাস করেন। এর মধ্যে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসও রয়েছেন। তিনি ও তার সঙ্গিনী লরেন সানচেজ ইতোমধ্যে দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
গত মঙ্গলবার হাওয়াই দ্বীপে ওই দাবানলের সূত্রপাত হয়। পরে হারিকেন ডোরার প্রভাবে তৈরি হওয়া প্রচণ্ড বাতাসের কারণে দাবানল ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এরপর কর্তৃপক্ষ প্রায় ১৪ হাজার পর্যটককে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। তবে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এখনো অনেক মানুষের সন্ধান পায়নি কর্তৃপক্ষ।
মাউয়ি দ্বীপের কর্তৃপক্ষ বলছে, এই দাবানলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর লেগে যাবে এবং শত শত কোটি ডলার খরচ করতে হবে। গভর্নর গ্রীন বলেন, এটিই সম্ভবত হাওয়াই রাজ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
Advertisement
আরও পড়ুন: বনভূমিতে দাবানল কেন দরকার?
গ্রিনের প্রকাশ করা একটি ভিডিওতে আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর দেখা যাচ্ছে। মাউয়ি শহরের বনবিভাগ জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে বনাঞ্চলের একাধিক জায়গায় দাবানলে শত শত একর বনভূমি পুড়ে গেছে। এদিকে ওই দ্বীপের কোনো সাইরেনই দাবানলের সময় সক্রিয় ছিল না। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে হাওয়াইয়ের সিনেটর ম্যাজি হিরোনো বলেন, দাবানলের ঘটনার তদন্ত চলছে। অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ওই তদন্তের ফলাফল ঘোষণা করবেন এবং তিনি সেটার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, আমি এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডি নিয়ে কোনো অজুহাত দেখাতে চাচ্ছি না।
তিনি বলেন, আমরা এই ঘটনায় খুব উদ্বিগ্ন। উদ্ধার কাজের প্রতিই আমরা এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনের মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে। লাহাইনা শহরে প্রায় আড়াই হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন। ২০১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাম্প ফায়ারে নিহতের সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে এই দাবানল। সে সময় ৮৬ জনের মৃত্যু হয়।
টিটিএন