উৎপাদন কম হওয়ায় দেশে ডিমের দাম বেড়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। রোববার (১৩ আগস্ট) সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি)-এর সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
Advertisement
তিনি আরও বলেছেন, ডিমের দাম সাড়ে ১২ টাকা হলে সেটি আমাদের কাছে ন্যায্য হয়। ডিমের দাম এর ওপরে হোক এটি আমরাও চাই না।
ডিমের দাম এত বেড়ে যাওয়ার পেছনের কারণ কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকেই এই কথাটা বলে আসছি। ডিমের দাম কোরবানির ঈদের পরে অনেক বাড়তে থাকবে। কেন বাড়তে থাকবে? কারণ গত বছর থেকে লক্ষ্য করছি যে আমাদের ডিমের দাম বাড়লো কিন্তু বাচ্চার দাম বাড়ে না।
তিনি বলেন, দেখা যায় বাচ্চার উৎপাদন খরচ প্রায় ৫০ টাকা। কিন্তু বছরের পর বছর লেয়ার বাচ্চা ৩০ টাকা, ২৫ টাকা, ১৫ টাকা- এভাবে বিক্রি হচ্ছিল। আমরা লক্ষ্য করছি, খামারিরা খামার করতে চাচ্ছেন না অর্থাৎ খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারা উৎসাহ পাচ্ছেন না।
Advertisement
‘এই ব্যবসায় নানান ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। হঠাৎ করে গরম হলে মুরগি মারা গেল। ডিজিজ আসলেও নানান সমস্যা হয়। হঠাৎ বৃষ্টি আসলো। দেখা যায় বৃষ্টির আওয়াজের ভয়ে মুরগির উৎপাদন কমে গেল।’
আরও পড়ুন: ডিম ১২ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়: মন্ত্রী
‘এই ব্যবসায় নানাবিধ সমস্যা, সংকট। এত টাকা ইনভেস্ট করে কখনো লাভ হয়, কখনো লস হয়। এই অনিশ্চয়তার কারণে বেশির ভাগ খামারি কিন্তু নিরুৎসাহিত হচ্ছে’ বলেন এ ব্যবসায়ী নেতা।
মাহাবুবুর রহমান বলেন, মাঝখানে দ্রব্যমূল্য এবং ফিডের দাম বেড়েছে। যুদ্ধের কারণে আমদানি বন্ধ হয়েছে। গত বছর ২০ টাকার ভুট্টা ৪০ টাকা হয়ে গিয়েছিল। ৪০ টাকার সয়াবিন কেক ৮০ টাকা হয়ে গিয়েছিল। ফিডের খরচ অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল। ফিডের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে লেয়ার খামারিরা কিন্তু ব্যাপকভাবে লস করেছে। গত পাঁচ বছরের ইতিহাসে আপনারা দেখবেন, বেশিরভাগ সময় খামারিরা লস করাতে তারা উৎসাহ পাচ্ছে না এ ব্যবসা করার জন্য।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, এখন হঠাৎ করে দেখা যাচ্ছে অনেক খামার বন্ধ। যাদের খামারগুলো বড় ছিল তারাও ছোট করে ফেলেছে। তাতে মোট উৎপাদন কমেছে। আমাদের দেশে এখন প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি ডিম দরকার। উৎপাদন হচ্ছে চার কোটি বা ৪ কোটি ২০ লাখ। কখনো-কখনো আরও কম হচ্ছে। এটি একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। এখানে যদি উৎপাদন ১০ লাখ কমে তাহলে কিন্তু ক্রাইসিস (সংকট) হয়ে যায়। আর যদি ১০ লাখ বেশি হয় তাহলেও কিন্তু ওভার প্রোডাকশন হয়ে যায়।
তাহলে আপনি কী বলছেন সঙ্কটের কারণে ডিমের দাম বেড়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানত ক্রাইসিসই। এসময় যদি খামারগুলোকে উৎসাহ দেওয়া যায়, বিশেষ করে গ্রামগঞ্জে যে খামারগুলো হচ্ছে, তাদের যদি ভর্তুকি দেওয়া যায় এবং সরকারের নানান সহযোগিতা পায়, আমার মনে হয় আবার বেডে উঠতে পারে।
আরও পড়ুন: দাম নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে ডিম আমদানি: বাণিজ্যমন্ত্রী
একটি ডিম উৎপাদনে ছোট খামারি পর্যায়ে খরচ সাড়ে ১০ টাকা ও বড় খামারি পর্যায়ে ১১ টাকা। তাই ধরা যায় একটি ডিম উৎপাদনে খরচ সাড়ে ১০ থেকে ১১ টাকা।
এখন যে ডিমের হালি ১৭০ টাকা, এটি ন্যায্য কি না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এটিকে কখনো ন্যায্য মনে করি না। খামারি পর্যায়ে ১২ টাকার বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি আমাদের পর্যায়ে ডিমের দাম সাড়ে ১১ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ভোক্তা পর্যায়ে দেড় টাকা বেশি হতে পারে। উৎপাদনের পর আর তিনটি হাত ঘুরে ডিমটি ভোক্তার কাছে যায়।
‘ডিমের দাম সাড়ে ১২ টাকা হলে সেটি আমাদের কাছে ন্যায্য হয়। ডিমের দাম এর ওপরে হোক এটি আমরাও চাই না’ বলেন মাহবুবুর রহমান।
আরএমএম/এমএইচআর/জিকেএস