ফাহিম খান। বয়স ১৭ বছর। নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী। ২৮ জুলাই সকালে বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে যায়। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাচ্ছে না পরিবার। এ অবস্থায় তার বাবা আইনজীবী আয়ুব খান বাবুল ছেলেকে ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
Advertisement
ছেলেকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘ফাহিম তুমি যেখানেই থাকো ফিরে আসো। সরাসরি পরিবার কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হোক তুমি ফিরে আসো। তোমাকে হারিয়ে আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে। বাবা তুমি যা পারো তাই করে খেয়ো, আমরা আর পড়াশোনা নিয়ে চাপ দেবো না। কিন্তু তুমি যদি অসৎ ব্যক্তি বা সংগঠনের মাধ্যমে ভুল পথে গিয়ে থাকো তুমি ফিরে আসো। আজ ১৬ দিন তোমাকে না পেয়ে পৃথিবীটা অচল। অনেক কষ্ট করে তোমাকে বড় করেছি।’
আরও পড়ুন: ৫০ শতাংশ জমি কিনে বানানো হয়েছিল ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র আস্তানা
রোববার (১৩ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এভাবেই ছেলেকে ফিরে আসার জন্য আকুতি জানান তার বাবা।
Advertisement
এর আগে শনিবার (১২ আগস্ট) মৌলভীবাজারে দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের একটি নতুন সংগঠনের সন্ধান পায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন (সিটিটিসি)। এসময় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তবে এ অভিযানের আগেই চিকিৎসক জামিল ও নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী ফাহিম পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়া ফাহিমের বাড়ি যশোরের কোতোয়ালি উপজেলায়। তার বাবা যশোর জেলায় কর্মরত আইনজীবী।
আরও পড়ুন: ইমাম মাহমুদের কাফেলার ৯ সদস্য রিমান্ডে, কারাগারে দুইজন
ফাহিমের বাবা বলেন, ২৮ জুলাই সকালে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় সে। এরপর থেকেই নিখোঁজ। যশোর জেলা স্কুল থেকে জিপিএ-৫ গোল্ডেন নিয়ে পাস করে সে। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর হোস্টেলেই থাকতো ফাহিম। প্রথম বর্ষে ভালো ফলাফল করলেও পরে অসুস্থ থাকায় পড়াশোনায় একটা গ্যাপ পরে তার। ফলে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। এ কারণে মানসিকভাবে একটু বিষণ্ণ ছিল। পাশাপাশি তার পিছিয়ে যাওয়ার কারণে পরিবার থেকে চাপ দেওয়ায় নিজেকে আড়াল করে রাখতো সে।
Advertisement
ছেলের পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি আসার পর দেখতে পাই তার মুখে দাঁড়ি। মাঝেমধ্যে নামাজ পড়তো। অথচ রোজার সময় হাফপ্যান্ট পরেছে। তেমনভাবে ধর্ম পালন করতো না। বাড়ি ছাড়ার আগে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেছিল ফাহিম। কিন্তু হঠাৎ করে পরিবর্তন আসে, একাই চলে যায় সে। তবে যাওয়ার সময় কোনো টাকা-পয়সা নিয়ে যায়নি।
আরও পড়ুন: ৩ মাস ধরে নিখোঁজ ছেলের পথ চেয়ে আছেন মা
ছেলে এ ধরনের সংগঠনে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে ফাহিমের বাবা বলেন, পারিবারিক চাপ কিংবা মোবাইল বা কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের মাধ্যমে হোক কোনো না কোনোভাবে সে এই সংগঠনে জড়িয়েছে। সে নিখোঁজ হওয়ার পর ২৮ জুলাই যশোরের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপর তার সন্ধান পেতে গোয়েন্দা পুলিশ ও ঢাকার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমি আপনাদের মাধ্যমে আমার ছেলেকে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
চার ভাই-বোনের মধ্যে বড় ফাহিম। তার একটি নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল বলে জানান তার বাবা।
আরএসএম/জেডএইচ/জেআইএম