রাজনীতি

সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে রাজনীতি করে বিএনপি: কাদের

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির রাজনীতি হলো পাকিস্তানি ভাবাদর্শের রাজনীতি, উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি। সাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে রাজনীতি করে তারা।

Advertisement

রোববার (১৩ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে ‘দূরভিসন্ধিমূলক ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য’র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতেই এ বিবৃতি প্রদান করা হয়। কাদের বলেন, ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয়, বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সে সময়কার মন্ত্রী, এমপিদের সরাসরি নির্দেশে বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছিল বিএনপির সন্ত্রাসী বাহিনী।

আরও পড়ুন>> বিএনপি হিন্দুবিরোধী এমন অপপ্রচার কেউ বিশ্বাস করে না: ফখরুল

Advertisement

তিনি বলেন, তাদের পাশবিক অত্যাচারের হাত থেকে শিশু-বৃদ্ধ কেউই রেহাই পায়নি। এখন নির্বাচন যত কাছে আসছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষের ওপর প্রভাব সৃষ্টি করতে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং পরোক্ষভাবে তাদের হুমকি দিচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বাহিনী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। সারাদেশে প্রায় ৫০ হাজার নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় এক রাতে বিএনপি ক্যাডার বাহিনী কর্তৃক ২০০ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল।

সেতুমন্ত্রী বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় শুধু নয়, বিএনপির সন্ত্রাসের শিকার হতে হয়েছে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোটের শাসনামলে আওয়ামী লীগের ২৪ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। আর অসংখ্য নেতাকর্মী ক্ষতের দগদগে চিহ্ন বহনের পাশাপাশি মানবেতর জীবযাপন করছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের বাবরি মসজিদের ঘটনার সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। অথচ সেসময় বিএনপির ক্যাডার বাহিনী এবং তাদের উগ্র-সাম্প্রদায়িক দোসরদের হামলায় রক্তাক্ত প্রান্তরে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ।

Advertisement

তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয়, বাড়িঘরের সুরক্ষা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছিল তৎকালীন বিএনপি সরকার। সেসময় শুধু ঢাকা শহরেই অসংখ্য মন্দির ভাঙচুর এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর পৈশাচিক হামলা ও নির্যাতন করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ই নয়, বিএনপি তখন সাধারণ মানুষের ন্যূনতম নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। বিএনপির রাজনীতি ধর্মকে পুঁজি করে এবং উগ্র-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়ে আসছে। যার প্রমাণ ২০০১ পরবর্তী সময়েও পরিলক্ষিত হয়।

তিনি বলেন, তাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বাংলা ভাইয়ের মতো দুর্ধর্ষ জঙ্গি নেতার সৃষ্টি হয়েছিল, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ, একুশে আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলা এবং একসঙ্গে দেশের ৬৩টি জেলায় পাঁচ শতাধিক স্থানে সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। মির্জা ফখরুলরা যতই মিথ্যাচার করুক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি শাসনামলে তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সেই ভয়াবহ উত্থানের কথা ভুলে যায়নি।

আরও পড়ুন>> তোমরা একেকজন মওদুদ-কাদের হয়ে গড়ে ওঠো

তিনি আরও বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় ১৯৭১ সালে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর উগ্র-সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল জাতিরাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের আখরে রচিত পবিত্র সংবিধানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শক্তিশালী ভীত রচিত হয়।

তিনি বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং ধর্ম-বর্ণ জাতি-লিঙ্গ শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়। আওয়ামী লীগ সেই অঙ্গীকারকে ধারণ করেই রাজনীতি করে আসছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে, দেশের সব নাগরিক সমান, সবার ধর্ম পালনের সমান স্বাধীনতা ও অধিকার রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেই নীতি অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে সব সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেছেন।

ইএ/জেআইএম