‘নামে তাল পুকুর, ঘটি ডোবে না’ অবস্থা থেকে উত্তরণ পেয়েছে খুলনার একমাত্র সরকারি সুইমিং পুলটি। অযত্ন-আর অবহেলায় বছরের পর বছর পড়ে থাকা পুলটি এখন শিক্ষানবিশ সাঁতারুদের জন্য আদর্শ স্থানে পরিণত হয়েছে। খুলনায় সাঁতার শিখতে আগ্রহী শিশু-কিশোররা ভিড় জমাচ্ছে এখানে। প্রতিদিন এখানে সাঁতার শিখতে আসছে দুইশ জন। সম্প্রতি সেখানে বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
Advertisement
খুলনার এই একমাত্র পুলটির অবস্থান নগরীর সোনাডাঙা থানা এলাকার বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে। ২০১৩ সাল থেকে প্রায় অব্যবহৃত অবস্থায় থেকে নষ্ট হয়ে যায় পুলটির অধিকাংশ সরঞ্জাম। এমনকি পুলের টাইলসগুলোও উঠে নষ্ট হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি সেটি লিজ নিয়ে মেরামত করে সাঁতার শেখানোর উপযোগী করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৩ সালের আগস্টে সোনাডাঙা থানা এলাকায় যাত্রা শুরু হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আওতাধীন খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের। এরপর সেখানে নির্মাণ করা হয় খুলনার একমাত্র সরকারি পূর্ণাঙ্গ সুইমিংপুল।
২০১৮ সালে পুলের নির্মাণকাজ শেষ হলেও কখনো এখানে কোনো সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি। এরইমধ্যে করোনার কারণে ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যায় পুলটি। এরপর আর চালু করা হয়নি। ফলে পুলের পানি শোধনাগার, সরবরাহ পাম্পসহ প্রায় সবকিছুই অকেজো হয়ে যায়।
Advertisement
সম্প্রতি সরেজমিনে খুলনার এই সুইমিংপুলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দিনের বিভিন্ন সময়ে সাঁতার শিখতে যাচ্ছে শিক্ষানবিশ সাঁতারুরা। পুলে সন্তানকে সাঁতার শেখাতে যাওয়া নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার বাসিন্দা এইচ এম আলাউদ্দিন বলেন, খুলনায় ভালো কোনো পুকুর নেই। নেই খাল ও নদী। ছেলেকে সাঁতার শেখানোর তেমন কোনো জায়গাও ছিল না। তাই এখানে সাঁতার শেখানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানতে পেরে ছেলেকে প্রতিদিন নিয়ে আসি।
খুলনা বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের উপ-পরিচালক মো. আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, সরকারি এই সুইমিংপুলটি ভালো রাখতে এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আয় বাড়াতে লিজ দেওয়া হয়। এক সময়ে সাঁতারু খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক জি এম রেজাউল ইসলাম সেটি লিজ নেন।
তিনি বলেন, খুলনার এই পুলটিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই রয়েছে; কিন্তু একটা সময় এখানে আসতো না কেউ। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার ফলে অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে যায়। পুলটি মেরামত করা এবং সংরক্ষণ করার জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে বেশ কয়েকদফা চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। একপর্যায়ে পুলটির দায়িত্ব খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তারাও নেয়নি। শেষ পর্যন্ত পুলটিকে লিজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সেই অনুযায়ী চলতি বছর মার্চ মাসে লিজ দেওয়া হয়।
লিজ গ্রহীতা জি এম রেজাউল ইসলাম বলেন, বেহাল দশা অবস্থায় আমি সুইমিংপুলটি লিজ নিয়ে বেশকিছু অর্থ খরচ করে এখানে সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করেছি। খুলনায় শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখার কোনো স্থান নেই। তাই পুলটি যখন সাঁতারুদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে তখন থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি।
Advertisement
তিনি বলেন, প্রথম মাসে দুই হাজার টাকা, দ্বিতীয় মাসে দেড় হাজার টাকা এবং প্রতি ঘণ্টায় দেড়শ টাকা হারে প্রশিক্ষণ ফি নেওয়া হয়।
আলমগীর হান্নান/এমআরআর/জেআইএম