চারদিকে রয়েছে সবুজে ঘেরা এক পরিবেশ। ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে সাজানো গোছানো নানা রকমের ফুল-ফলের গাছ। এ যেন হাসপাতাল নয়, চারদিকে সবুজে ঘেরা বিশাল এক বাগান। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র ঠিক এমনই।
Advertisement
যেখানে নেই নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। যেখানে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসলে পরিবেশ দেখেই মানসিক প্রশান্তি অনুভব করেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভেতরে-বাইরে রয়েছে ফুলের টব ও ঝকঝকে পরিবেশ। রয়েছে পরিপাটি বিশ্রামাগার। শিশুদের জন্যও রয়েছে ছোট পার্ক। যেখানে খেলাধুলায় মেতে উঠতে পারে শিশুরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতাল বলতে চিরায়ত যে চিত্র সবার চোখে ভাসে সেটা হলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। কিন্তু এই চিত্রটা আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে কেউ পাবে না। তারা হাসপাতালের পরিবেশ সুন্দর করার পাশাপাশি সবুজায়নের চেষ্টা করেছেন। হাসপাতালের এমন কোনো খালি জায়গা নেই যেখানে গাছ লাগানো হয়নি। ছোট থেকে বড় সব ধরনের গাছের দেখা এখানে পাওয়া যাবে। অসংখ্য ফুলের গাছও আছে। ছাদবাগানও করা হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ১২০ প্রজাতির গাছ রয়েছে এখানে।
আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, মাল্টা, লেবু, জামরুল, বরই, ড্রাগন, আমড়া, আখসহ বিভিন্ন ফলের গাছ রয়েছে এই আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
Advertisement
এদিকে, হাসপাতালের পরিবেশ সুন্দর করার পাশাপাশি আড়াইহাজারবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় আস্থার জায়গাও করে নিয়েছে এই হাসপাতাল। রোগীরা এখানে এসে যখন সবকিছু গোছানো দেখেন তখন তারা পরবর্তীতে আরেকজনকে আসার জন্য উৎসাহিত করেন।
আর এ কারণেই হয়তো প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ জন রোগী এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। আস্থার জায়গা থেকেই এত রোগী এখানে এসে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া, হাসপাতালে দালালদের দৃশ্যমান তৎপরতাও নেই। নেই ওষুধ কোম্পানির লোকজনের অবাধ উপস্থিতি। গোটা হাসপাতাল এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন তাইজুল ইসলাম নামে এক রোগী বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ অনেক ভালো। পরিবেশ দেখেই মন ভালো হয়ে যায়। আর মন ভালো থাকলে অসুস্থতাও ধীরে ধীরে সেরে যায়। সেইসঙ্গে ডাক্তাররাও আমাদের ভালো সেবা দিয়ে থাকেন।
কালাপাহারিয়া এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ফারজানা বলেন, এই হাসপাতালে আসলে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসি। আর এই হাসপাতালের আরেকটি ভালো লাগার বিষয় হলো পরিবেশ, যা অন্য কোনো হাসপাতালে পাওয়া যায় না।
Advertisement
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মা আফরোজ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি হাসপাতালকে একটা সুন্দর পরিবেশ দেওয়ার জন্য। আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারি। যে জিনিসটা দেখতে ভালো লাগবে না সে জিনিসটা আমরা নিতে চাই না। এখানে যোগদান করার পর আমার কাছে যেটা মনে হলো হাসপাতালটাকে সুসজ্জিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজকের এই সুসজ্জিত হাসপাতাল। সেইসঙ্গে চিকিৎসাসেবার মাধ্যমেও আমরা আড়াইহাজারবাসীর মাঝে একটা আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছি। সবার আশা ভরসার জায়গা হলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এটার পেছনে আমাদের সবার পরিশ্রম আছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মানুষ যখন চিকিৎসা নিতে আসে তখন যদি পরিবেশটা ভালো দেখেন তাহলে তার শরীর অর্ধেক ভালো হয়ে যায়। আর যখন দেখেন নোংরা বা দুর্গন্ধ তখন তার মানসিক স্বাস্থ্য আরও ভেঙে যায়।
তিনি আরও বলেন, আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবেশ দুইদিক দিয়েই রোগীদের আস্থা অর্জন করেছে। এটা খুবই ভালো দিক। আমরা চাই আমাদের প্রতিটি হাসপাতাল হোক পরিচ্ছন্ন সবুজ এবং রোগীবান্ধব। এজন্য আমাদের অন্য হাসপাতালগুলোতেও সবুজ রাখার চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রীও এই বিষয়টির ওপর জোর দিয়েছেন। প্রত্যেক জায়গায় যেন ঔষধি ও উপকারী গাছ লাগানো হয়।
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এমআরআর/এমএস