দেশজুড়ে

আমেনা-মনিকা এতিম দুই বোনের অসহায় এক জীবন

পাঁচ বছর আগে মা মারা যাওয়ার পর আমেনা আক্তারের আচরণ অস্বাভাবিক হতে শুরু করে। একপর্যায়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরিবারের লোকজন তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তবে নুন আনতে পান্তা ফুরায় তার সংসারে। সেখানে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করানো আর হয়নি আমেনার। স্থানীয় কবিরাজি চিকিৎসায় সুস্থ করার চেষ্টা করেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সুস্থ হননি, উল্টো দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।

Advertisement

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার উদাপাড়া গ্রামে নানাবাড়িতে থাকেন আমেনা আক্তার (২৬)। আল আমিন (২২) ও মনিকা আক্তার (১৭) নামে তার আরও দুই ভাইবোন রয়েছে।

১৫ বছর আগে তারা ছোট থাকতে মা মমতাজ বেগমসহ তাদের নানাবাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যান বাবা মো. জসিম উদ্দিন। এরপর আর যোগাযোগ রাখেননি। ১০ বছর পর মা মারা গেলে তিন ভাইবোন অসহায় হয়ে পড়েন। আল আমিন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছেন। তাদের বাবার বাড়ি উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের চেংগ্নী গ্রামে।

স্থানীয়রা বলেন, অভাবের সংসারে এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন আমেনা। তিন বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছেন, চলাফেরা করতে পারেন না। অর্থ সংকটে চিকিৎসা করাতে পারছেন না ভাই। ছোট বোন মনিকা দুর্গাপুর মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার পড়াশোনাও বন্ধের উপক্রম। আল আমিনের পক্ষে এতো খরচ বহন করাও সম্ভব না। ফলে বিনা চিকিৎসায় যেন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন আমেনা।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙাচোরা ঘরের বারান্দায় ত্রিপল বিছিয়ে শুয়ে আছেন আমেনা আক্তার। পাশের ঘরে বোন মনিকা রান্না করছিলেন। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে টিনের চালে পলিথিন কাগজ দিয়ে মোড়ানো রয়েছে। তবে চেষ্টা করেও আমেনার কোনো কথা শোনা যায়নি। তিনি উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন!

ছোট বোন মনিকা জানান, আমেনার বয়স যখন ২০ বছর তখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু টাকার অভাবে নেওয়া যায়নি। কবিরাজের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। পরে মানসিক ভারসাম্য হরিয়ে ফেলেন তিনি। এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, যা তারা সহ্য করতে পারেন না। ভাই আল আমিন যা পান, তা দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন।

দুর্গাপুর মহিলা কলেজের প্রভাষক তোবারক হোসেন খোকন বলেন, মনিকার ইচ্ছা পড়াশোনা করে পুলিশ কর্মকর্তা হবে। সে মেধাবী ছাত্রী। তবে বোনের অসুস্থতার কারণে নিয়মিত কলেজে আসতে পারে না। বোনের চিকিৎসার সামর্থ্যও তার পরিবারের নেই। সরকারিভাবে আমেনার চিকিৎসার ব্যবস্থা হলে মনিকার পড়াশোনায় বাধা থাকতো না।

কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল মামুন আমেনার বিষয়টি জানতে পেরে খোঁজ নেওয়ার জন্য দু’জন চিকিৎসককে নির্দেশনা দেন।

Advertisement

তিনি বলেন, পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর চিকিৎসার ব্যয় নিরূপণ করা যাবে। তিনি যদি প্রকৃত মানসিক রোগী হন, তাহলে সরকারি মানসিক হাসপাতালে তার চিকিৎসায় শুধু টিকিটের মূল্য পরিশোধ করলেই হবে।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমেনার পরিবারের কেউ যোগাযোগ করেনি। তার চিকিৎসার জন্য সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে ব্যবস্থা করা হবে। মনিকার পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য পাশে থাকবে উপজেলা প্রশাসন।

এইচ এম কামাল/এফএ/এমএস