বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেজন্য আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। সে লক্ষ্যেই বিএনপির এক দফা আন্দোলন।
Advertisement
শনিবার (১২ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তৃতীয় তলার মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক সংকট ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে ড্যাব।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করার কারণে দেশের সর্বত্র সংকট চলছে। চিকিৎসা ও শিক্ষাখাতে খুবই খারাপ অবস্থা। শিল্প-বাণিজ্য সব খাতে খারাপ অবস্থা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নামে দেশে ডিজিটাল চুরি ও লুটপাট চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারাবন্দি। তার সুস্থতা কামনা করছি। তার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দায়িত্ব পালন করছেন। তাকেও দূরে সরিয়ে রাখতে বহু বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার সহধর্মিণীকেও বানোয়াট অভিযোগে সাজা দিয়েছে আদালত।
Advertisement
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, অত্যাচারী, অনির্বাচিত ও দায়হীন সরকারের পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভব। সেটিই এখন হচ্ছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বর্তমান সরকারকে চায় না। কিন্তু সেটা প্রমাণের সুযোগ তাদের দেওয়া হচ্ছে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দেশে কীভাবে নির্বাচন হয়েছে তা সবাই জানেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামে বিজয়ী হলে আবারও রাষ্ট্র পরিচালনায় যাবে। আজকে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে পাচার করলেও কোনো অভিযোগ নেই। ফরিদপুরের এক নেতা দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। সেটির কোনো বিচার নেই। অথচ খালেদা জিয়া একজন বয়স্ক নারী, তিনি দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না সরকার। জামিনও দিচ্ছে না। কারণ, আওয়ামী লীগ শক্ত প্রতিপক্ষকে ভয় পায়। এজন্য তারেক রহমানকে তারা ভয় পায়। একই কারণে ভয় পায় ডা. জোবায়দা রহমানকে। সেজন্যই তাকেও সাজা দেওয়া হয়েছে। সেই সাজা দিতে গিয়ে দেশের বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষ নিরাপদ আশ্রয় নেয় পুলিশের কাছে। কিন্তু পুলিশ এখন একটি দলের লাঠিয়াল বাহিনীর ভূমিকা পালন করে। বিচার বিভাগের কাছে মানুষ ন্যায়বিচার আশা করে। সেখানেও একই অবস্থা। আবরার হত্যা মামলার আসামি ছাড়া পেয়ে যায় আর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজাতুল কুবরা দীর্ঘদিন ধরে বন্দি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই শেয়ারবাজার লুট হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক লুট হয়। অন্য সরকারের সময় তা হয় না। দেশের শতকরা ৫ ভাগ মানুষের হাতে ৯০ শতাংশ অর্থ। এসময়ে সরকারের লোকেরা কোটিপতি হয়েছে আর নতুন করে সাড়ে তিন কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। প্রতিবছর শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে ক্ষুধার্ত থাকতে হয়।
Advertisement
তিনি বলেন, ডা. জোবায়দা তার মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা উপহার পেয়েছিলেন। সেগুলো ব্যাংকে রেখেছেন এবং রিটার্নও দিয়েছেন। তারপরও সরকার বলছে এটি তার টাকা নয়। অথচ জোবায়দা পারিবারিক সূত্রে সচ্ছল। তবুও তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আসলে তাকে নানাভাবে হেয় করা হচ্ছে। যেমনটি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এই সরকার করেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে পোস্ট অপারেটিভ ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে পরিণত করেছে। এখন মানুষ স্বাভাবিকভাবে চিন্তাও করতে পারছে না। মানুষ ঠিকমত খেতেও পারছে না। এক ডিমের দাম ১৫ টাকা। মাছ-মাংসের দাম তো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আসলে এগুলো দুর্ভিক্ষের ইঙ্গিত। সব জায়গায় অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে। যে কারণে সর্বত্র দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সবকিছুকে ধ্বংস করেছে সরকার। এখন বাংলাদেশের চিকিৎসা দরকার। বর্তমান সরকারের বিদায়ই সেই চিকিৎসা।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মো. মেহেদী হাসানের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন- ড্যাব মহাসচিব মো. আবদুস সালাম, বিএমএ’র সাবেক সভাপতি একেএম আজিজুল হক, সাবেক মহাসচিব গাজী আব্দুল হক, পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী ও বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
কেএইচ/এমকেআর/এএসএম