ভ্রমণ

৩২৭ বছরেও অক্ষত রাজা মনোহর রায়ের স্মৃতিচিহ্ন

সেদিন বিকেলে যশোরের মনিহার সিনেমা হলে ছবি দেখে ভাবলাম চাচঁড়া শিব মন্দিরে যাই। এখান থেকে সামান্য দূরেই। তো যথারীতি সিনেমে দেখে বের হয়েই রিকশা নিয়ে আমি ও মোরশেদ ভাই মিলে রওনা হলাম মন্দিরের পথে।

Advertisement

যশোর মনিহার থেকে ৫০ টাকা দিয়ে রিকশা নিয়ে মন্দিরে যেতে বেশি সময় লাগেনি। মাত্র ১৫ মিনিটেই চলে এসেছি শিব মন্দিরের কাছে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশেই এ মন্দির।

আরও পড়ুন: যে দেশে রাতেও ঝলমল করে সূর্যের আলো

রিকশা থেকে নামতেই যেনো অভ্যর্থনা জানালো মন্দিরটি। প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করলাম ভেতরে। মন্দিরটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুঁড়েঘরের আদলে নির্মিত। ধূসর রঙের একটি আটচালা স্থাপনা। চারচালা ছাদের উপর আবার ছোট চৌচালা বা চারচালা ছাদ।

Advertisement

মন্দিরের কাছে গিয়ে দেখলাম মন্দিরটির দালানে প্রচুর টেরাকোটার কাজ। দেখে মনে হচ্ছে পুরো মন্দিরটি যেনো পোড়ামাটির ফলকে মোড়ানো। আর এ কারণেই মন্দিরটি দেখতে এতো চমৎকার। মন্দিরটির সামনের দিকে খিলানযুক্ত তিনটি দরজা আছে।

মন্দিরের গায়ে শিলালিপির ফলক থেকে জানতে পারলাম এটি ১৬৯৬ সালে রাজা মনোহর রায় নির্মাণ করে। তা থেকে অনুমান করলাম এ মন্দিরের বয়স প্রায় ৩২৭ বছর। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষণে আছে।

আরও পড়ুন: গ্রামের কোনো ঘরে নেই দরজা, শাস্তির ভয়ে হয় না চুরিও

মন্দিরের চারদিক ঘুরে দেখতেই কাছে এগিয়ে আসলেন হালকা পাতলা গড়নের একটা লোক। কথা হলো তার সঙ্গে। তিনি জানালেন, তার নাম গোপাল চন্দ্র দাশ। বর্তমানে তিনিই দেখভাল করছেন মন্দিরটি।

Advertisement

তিনি জানান, মাসে প্রায় ১ থেকে দেড় হাজার লোক আসে মন্দিরটি দেখতে। এছাড়া বিভিন্ন পূজা-পার্বণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার লোকের সমাগম হয় এই মন্দিরে।

মন্দির দর্শনে এসেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপক। তারা হলেন- ড. নুর কুতুবুল আলম, ড. মাহবুব হাসান ও ড. নরোত্তুম কুমার রয়।

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে ঘুরে আসুন ৪০০ বছরের পুরোনো নগরীতে

এর মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নুর কুতুবুল আলম বলেন, ‘মন্দিরটির স্থাপত্যরীতি অনেক চমৎকার। দেখতে খুবই ভালো লাগছে। আমি প্রথম এসেছি এখানে। তবে আমার মনে হলো মন্দিরটির সংস্কার করা প্রয়োজন। সংস্কার করা হলে মন্দিরটি আরও ভালো লাগবে।’

মন্দিরটির চারপাশ ঘুরে দেখে আমারও মনে হলো মন্দিরটি সংস্কার করা প্রয়োজন। মন্দিরের দেওয়ালে শ্যাওলা জমে গেছে। এগুলো পরিষ্কার করলে আরও চকচকে হয়ে উঠবে মন্দিরটি।

এ বিষয়ে কথা হয় চাঁচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামীম রেজার সাথে। তিনি বলেন, ‘মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণে আমরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করছি। মন্দির চত্বরে মাটি কেটে উঁচু করেছি। দেখভালের জন্যও লোক রাখা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটির বিস্ময়কর এই লেকের পানি রং বদলায় ক্ষণে ক্ষণে

কীভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে যশোরের প্রায় সারাদিনই নানা অপারেটরের বাস চলাচল করে। নন এসিবাসে সাধারণত ৫০০-৬০০ টাকা ও এসি বাসে ১২০০-১৪০০ টাকা টিকেট।

এছাড়া চাইলে আসতে পারেন ট্রেনে। ঢাকা থেকে যশোরে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস এ দুটি ট্রেন চলাচল করে। ঢাকা থেকে একটা সকাল ৮টায় ও আরেকটি সন্ধ্যা ৭টায় যশোরের উদ্দ্যেশে ছেড়ে যায়।

ক্লাস ভেদে ট্রেনের ভারা ৪৫৫-১৩৮৫ টাকা পর্যন্ত। যশোর মনিহার বাস স্টান্ড থেকে মাত্র ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে সরাসরি যাওয়া যায় এই শিব মন্দিরে।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

জেএমএস/এএসএম