সাব্বির আহমেদ জিসান ৪১তম বিসিএসে কাস্টমস অ্যান্ড এক্সসাইজে প্রথম হয়েছেন। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার কাজিহাটি গ্রামে তার জন্ম। বাবা মো. রুহুল আমিন একজন ব্যবসায়ী, মা বাছিরাতুন্নেসা গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সাব্বির আহমেদই বড়। ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্বেবিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে স্নাতক শেষ করেছেন।
Advertisement
চাকরি জীবন শুরু হয় গাজীপুরের বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের সিনিয়র অফিসার হিসেবে। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তার বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—
জাগো নিউজ: ৪১তম বিসিএসে নিজের পছন্দ কাস্টমস অ্যান্ড এক্সসাইজে প্রথম হওয়ার অনুভূতি কী?সাব্বির আহমেদ জিসান: এটি যদিও বড় মাপের কোনো অর্জন নয়। একটি চাকরিই তো কেবল পেলাম। তবুও অনেক ভালো লাগছে। কারণ একটি লক্ষ্যকে স্থির করে এগিয়ে যাওয়ার পর সেটি সত্যিই বাস্তবে পরিণত হলে অনুভূতিটা অসাধারণ হয়। আমার পরিকল্পনা, প্রস্তুতি কৌশল—সব কিছুতেই ভিন্নতা ছিল। সাধারণত সবাই যা করে, তা করলে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার খুব বেশি দূর যাওয়া যায় না। যখন রেজাল্ট দেখলাম আর আমার প্রত্যাশিত স্বপ্নের ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করলাম; তখন অনুভূতিটা সারাজীবন মনে রাখার মতোই।
আরও পড়ুন: বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই বিসিএস ক্যাডার মুন্নী
Advertisement
জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?সাব্বির আহমেদ জিসান: প্রতিবন্ধকতা কোথায় থাকে না বলুন? আপনি যা-ই করতে চান না কেন, সহজে তা করতে পারবেন না। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু প্রতিবন্ধকতা আসবেই। আর এই প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে সাফল্য পেলে তা আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। আমার প্রতিবন্ধকতা বলতে পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতার কথাই বলব, ব্যক্তিগত প্রতিবন্ধকতা তেমন ছিল না। দীর্ঘদিন ঢাকায় চাকরি করে এরপর আইটি স্টার্ট-আপ নিয়ে কাজ করার পর সব ফেলে গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছিল ২০২০ সালের মার্চে। তখন করোনা মহামারির কারণে চারদিকে কেবল হতাশা আর স্থবিরতা। এমনই একটা সময়ে আমাকে পড়াশোনা শুরু করতে হয়েছিল। আসলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তো আর সামনে এগোনো ছাড়া উপায় থাকে না। আমারও হয়েছিল তাই। তাই কোনো প্রতিবন্ধকতাই সে অর্থে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
জাগো নিউজ: কার অনুপ্রেরণা সবচেয়ে বেশি ছিল?সাব্বির আহমেদ জিসান: অনুপ্রেরণা আসলে নিজের ভেতর থেকেই প্রথম এসেছিল। অন্য কারও অনুপ্রেরণায় বিসিএসের মতো দীর্ঘ সংগ্রামের পথে টিকে থাকা কঠিন। তবে শুরু করার পর অনেকের সাহায্য পেয়েছি। কুয়েটের দুজন ছোট ভাই শেখ সাদি এবং আতিকের সঙ্গে গ্রুপ স্ট্যাডি করেছি। সাদি আমাকে নিয়ে খুব আশাবাদী ছিল। সব সময় বলত, ভাই আপনি যে ক্যাডারই প্রথম পছন্দে রাখবেন; তাতেই ফার্স্ট হবেন। বন্ধু জুবায়ের, বেনজির একই কথা বলতো। আসলে সবাই আমাকে নিয়ে এতো উচ্চাশা রাখতেন যে, আমার ভালো না-করে উপায় ছিল না। প্রিয় বড় ভাই কাওসার হোসেন (মৎস্য কর্মকর্তা, ৩৬তম বিসিএস) আমাকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বন্ধু আরমান, সুফিয়ান, মাসুম, সানাপ, ছোট ভাই জাওয়াদুল্লাহ—এদের কথা না বললেই নয়। এরা আমাকে এমনভাবে আগলে রেখেছিল যে, আমার জীবনে হতাশা আসতে পারেনি। সফলতা পেয়েছি বলে কাউকেই ভুলে যেতে চাই না। সবার নাম নেওয়া এখানে সম্ভবপর নয় বলে উল্লেখ করতে পারছি না। কিন্তু এদের অবদানের কথা আমি সারাজীবন মনে রাখবো।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখছিলেন কবে থেকে?সাব্বির আহমেদ জিসান: বিসিএস নিয়ে আসলে ২০২০ সালের অক্টোবরের পূর্বে কোনো স্বপ্নই ছিল না। থাকলে আরও আগেই হয়তো এ পথে আসতাম। আমি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছিলাম বাধ্য হয়ে ঠিকই কিন্তু পড়তে পড়তে এটাই আমার স্বপ্নে পরিণত হয়। একের পর এক ধাপগুলো যখন পার হচ্ছিলাম; তখন স্বপ্নের প্রতি টান আরও বেড়ে যাচ্ছিল।
আরও পড়ুন: বাবার অনুপ্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার মানস
Advertisement
জাগো নিউজ: বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?সাব্বির আহমেদ জিসান: আরম্ভের পূর্বেও যেমন আরম্ভ থাকে; তেমনই মূল প্রস্তুতি শুরু করার পূর্বেই আমার একটা প্রস্তুতি পিরিয়ড ছিল। ২০২০ সালের মার্চ থেকে অক্টোবর। এ সময়ে আমি বিসিএসের পড়া শুরু না-করলেও নিজেকে প্রচুর সময় দিয়েছি। শহরের কোলাহল ভুলে মিশে গিয়েছি গ্রামের পরিবেশের সাথে। আপনি এটাকে এক প্রকার অভিযোজন বলতে পারেন। আসলে হুট করে প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়াটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। বড় কোনো গর্ত পার হতে হলে আমাদের যেমন খানিকটা পিছিয়ে এসে শক্তি সঞ্চয় করে সজোরে জাম্প করে পার হতে হয়। আমারও তেমন একটি মনের জোর প্রয়োজন ছিল। বইপড়ার অভ্যাস থাকায় পড়তে গিয়ে ভালো না-লাগার সমস্যায় পড়তে হয়নি। নিয়মিত পত্রপত্রিকা পড়েছি, সাধারণ জ্ঞানের নতুন নতুন তথ্য জেনে বন্ধুদের সাথে আলাপ করেছি। পড়াশোনাটা ভালোই লেগেছে। ইংরেজি, অঙ্ক আর বাংলায় আমার আগে থেকেই ভালো দখল থাকায় বিষয়গুলোতে বাড়তি সময় দিতে হয়নি। ফলে আমার প্রস্তুতি কিছুটা সহজ হয়েছে।
জাগো নিউজ: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?সাব্বির আহমেদ জিসান: ইচ্ছে ছিল সিভিল সার্ভিসে এসে দেশ ও মানুষের সেবায় কিছুটা হলেও অবদান রাখবো। আমার প্রিয় শিক্ষক ভাস্কর সেন গুপ্তের সাথে রেজাল্ট পরবর্তী সময়ে একটু আলাপ হয়েছিল। আমি যেটুকু বাংলায় লিখতে-পড়তে পারি, তার অনেকটাই স্যারের অবদান। স্যার একটি কথাই বলেছেন, আমাদের হাতে যেন বাংলাদেশ নিরাপদে থাকে। আমি স্যারকে কথা দিয়েছি, আমরা নিরাপদে রাখবো। সেই লক্ষ্যেই আমি আজীবন কাজ করে যাবো।
এসইউ/এএসএম