ধর্ম

ছেঁড়া বা পোড়া কোরআন শরীফ কী করবেন?

মাহমুদ বিন সাঈদ

Advertisement

পবিত্র কোরআন শরীফ মুসলমানদের ধর্মীয় কিতাব। তাই ছিঁড়ে যাওয়া কিংবা পড়ার অযোগ্য কোরআনের পৃষ্ঠাগুলো কি করা উচিত এ বিষয়ে আমাদের অতীতে ওলামায়ে কেরামের কয়েকটি মতামত রয়েছে। তাহলো-

সর্বোত্তম করণীয় হলো, সম্ভব হলে সেই কোরআনকে যে কোনো উপয়ে মেরামত (জোড়া তালি) করে পড়ার যোগ্য করে তোলা। এটি সম্ভব হলে যিনি তা করবেন; তিনি আল্লাহর কাছে থেকে আজর বা প্রতিদান পাবেন। মসজিদের ফান্ড থেকেও মসজিদের কোরআন মেরামতের কাজটি করা যেতে পারে।

পুরোনো ছেঁড়া বা দুর্বল কোরআন যা মেরামতের অযোগ্য, এ ব্যাপারে ২টি মতামত রয়েছে-

Advertisement

১. হাম্বলি ও হানাফি মাজহাব অনুযায়ী মেরামতের অযোগ্য কোরআনকে মৃত মুসলমানের ন্যায় মাটিতে দাফন করতে হবে। (আদ-দুররুল মুখতার, ১/১৯১) তবে তা হতে হবে পবিত্র মাটিতে এবং লোকজন চলাচলের পথে নয়। যাতে মানুষের পায়ে পিস্ট না হয়।

হাম্বলি মাজহাবের ইমাম আল্লামা মনসুর আল বাহুতি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, দাফন করার আগে অবশিষ্ট কোরআনকে ছিঁড়ে ফেলতে হবে। আবু আল-জাওযা তাঁর পুরাতন কোরআন মসজিদে দাফন করেছেন। ইবনে তাইমিয়াহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মাজমু মুমিন বান্দাকে যেভাবে মাটিতে দাফন করা হয়; ঠিক সেভাবে দাফনের কথা বলেছেন। (আল-ফাতাওয়া ১২/৫৯৯)

২. পড়ার অযোগ্য কোরআনের পৃষ্ঠাগুলো পুড়ে ফেলার পক্ষে মতামত দিয়েছেন মালেকি ও শাফেয়ি মাজহাবের ইমামরা। এ ক্ষেত্রে তাঁরা ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর কোরআন পোড়ানোর অফিসিয়াল নির্দেশকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। (বুখারি ৪৯৮৮)

হজরত মুসআব ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতে, কোনো সাহাবি হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ নির্দেশকে অমান্য কিংবা বিরোধিতা করেননি। (কিতাবুল মাসাহিফ ৪১)

Advertisement

হজরত ইবনু আল-বাত্তাল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নির্দেশের আলোকে ব্যবহার অযোগ্য কোরআনকে পুড়ে ফেলা জায়েজ সাব্যস্ত হয়েছে। এর দ্বারা কোরআনকে সম্মান করা হয় এবং আল্লাহর কালামকে মানুষের পায়ে পিষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা হয়। (শরহু সহিহ আল-বুখারি ১০/২২৬)

ইমাম সুয়ুতি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি পুড়ে ফেলার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, ঘরের ফাঁক-ফোঁকড়ে কিংবা কোনো ফাটলের মাঝে রাখা যাবে না। কারণ তা মানুষের পায়ে লেগে অসম্মান করা হতে পারে। (ইতকান ফি উলুমিল কোরআন ২/১১৮৭)

শায়খ আল-উসাইমিনের মতে, পুড়ে ফেলার পর নিশ্চিত হতে হবে যে সবটুকু পুড়েছে কি না। যাতে কোনো অক্ষর বাকি না থাকে। (ফাতাওয়া নুর আলা আদ-দারব ১৬/১৪৮)

শ্রেডারের মাধ্যমে ছিঁড়ে ফেলা যেতে পারে, তবে এমন ভাবে করতে হবে; যাতে কোনো অক্ষর চিহ্নিত করা না যায়।

লেখক: ইসলামিক স্কলার ও গবেষক।

এমএমএস/জেআইএম