দেশজুড়ে

মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি অর্ধলাখ মানুষ

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে দুই উপজেলার অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সড়কে পানি ওঠায় বুধবার (৯ আগস্ট) সকাল থেকে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কের ফুলগাড়ী বাজারের পর থেকে ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, ফুলগাজীর বিভিন্ন গ্রাম থেকে পানি নামতে শুরু করায় ক্ষত চিহ্নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। ভাঙন স্থান দিয়ে স্থানীয়রা অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো তৈরি করে কোনোরকমে পার হচ্ছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, বর্তমানে মুহুরী নদীতে পানি বিপৎসীমার ২০৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই কিলোমিটার এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। ২০টি গ্রামীণ সড়কও পানির নিচে।

আরও পড়ুন: ফের বাড়তে পারে বৃষ্টি

Advertisement

সোমবার (৭ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজীর দুটি স্থানে ও দুপুরে পরশুরামের একটি স্থানে বাঁধ ভেঙে দুই উপজেলার ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়।

এদিকে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৮২৫ হেক্টর আমনের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। বাঁধভাঙা পানিতে তিন শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

জেলায় ১০ হেক্টর আমন বীজতলা ও ১৫ হেক্টর সবজিক্ষেত পানিতে ডুবে আছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

পরশুরামের মাছচাষি সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমার তিনটি পুকুরে অন্তত ১০ লাখ টাকার পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ ছিল। বাঁধভাঙা পানিতে পুকুর ভেসে চোখের সামনেই সব মাছ চলে গেছে। চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি এখন।’

Advertisement

ফুলগাজীর কৃষক খালেক মুন্সি বলেন, ‘জুলাইয়ের শেষের দিকে সেচ দিয়ে দুই একর জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলাম। কিন্তু গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও বাঁধভাঙা পানিতে আমার স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে গেছে।’

আরও পড়ুন: বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই তিস্তার পানি, বন্যার আশঙ্কা

আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে চলাচলকারী ছবির আহমেদ নামের একজন জাগো নিউজকে বলেন, মূল সড়কে পানি জমে গাড়ি চলাচল না করায় তিনি প্রায় দুই কিলোমিটার পানিতে হেঁটেছেন। কোমরসমান পানিতে হাঁটতে গিয়ে সব পুরো শরীর ভিজে গেছে।

এ অবস্থায় পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও। পরীক্ষার্থী সাদমান সাকিব বলে, ‘পরীক্ষার আর মাত্র ছয়দিন বাকি। অথচ চারদিকে পানি থই থই করছে। ঘরে পানি, সড়কে পানি। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ১৭ আগস্ট পরীক্ষাকেন্দ্রে কিভাবে যাবো তা নিয়ে চিন্তিত আছি।’

ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক একরাম উদ্দিন বলেন, পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৮২৫ হেক্টর আমনের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। ১০ হেক্টর আমন বীজতলা ও ১৫ হেক্টর সবজিক্ষেতও পানিতে নিমজ্জিত। সহসাই পানি না নামলে এসব জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ফেনী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, বন্যার পানিতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৩৭৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পেলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের দেওয়া হবে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনটি স্থানে পানির গতি কমে গেলে বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসআর/জেআইএম