জাতীয়

জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নিষিদ্ধ

নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া' নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বুধবার (৯ আগস্ট) জঙ্গি সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

Advertisement

এতে বলা হয়, সরকারের কাছে এ মর্মে প্রতীয়মান হয় যে, ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া' নামক জঙ্গি দল/সংগঠনটির ঘোষিত কার্যক্রম দেশের শান্তি শৃঙ্খলা পরিপন্থি। এরই মধ্যে দল/সংগঠনটির কার্যক্রম জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হওয়ায় বাংলাদেশে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।

আরও পড়ুন: ‘কেএনএফ’র কাছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বাড়িছাড়া তরুণরা

এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

Advertisement

গত বছরের ৫ অক্টোবর ঘরছাড়া সাত তরুণকে গ্রেফতারের পরদিন সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন- বিশেষত জেএমবি, আনসার আল ইসলাম এবং হুজির বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু নেতাকর্মী একত্রিত হয়ে ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'র কার্যক্রম শুরু করে।

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দাওয়া বিভাগের প্রধান সদ্য এমবিবিএস পাস করা শাকির বিন ওয়ালী নামে এক চিকিৎসক। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে চিকিৎসক শাকির নতুন জঙ্গি সংগঠনের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। এরপর ওই বছরের ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ডেমরা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি।

আরও পড়ুন: বোর্ড স্ট্যান্ড করা ছাত্র থেকে জঙ্গি নেতা শামিন

এরপর নতুন এ জঙ্গি সংগঠনটিও নিষিদ্ধ করতে উদ্যোগ নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জানা যায়, এরপর সংগঠনের কার্যক্রম, উদ্দেশ্য ও সদস্যসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তালিকা তৈরি করা হয়। পুলিশ সদরদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত নথি যাওয়ার পর এ জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

Advertisement

এর আগে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা ও উগ্র ইসলামি সংগঠন হিসেবে আটটি সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়। সবশেষ ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হয় জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’।

আরও পড়ুন: দুর্গম অঞ্চলে জঙ্গি প্রশিক্ষণ, ‘পরিবার জানে সন্তান বিদেশে’

এর আগে ২০১৭ সালের ১ মার্চ জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ‘আনসার আল ইসলাম’ নিষিদ্ধ করে সরকার। জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত থাকায় এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০০৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শাহাদত-ই-আল হিকমা, ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি), ২০০৫ সালের ১৭ অক্টোবর জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) ও জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হিযবুত তাহরীর ও ২০১৫ সালের ২৫ মে আনসারুল্লাহ বাংলাকে টিম নিষিদ্ধ করা হয়।

নতুন জঙ্গি দল গঠনের পরিকল্পনা হয় কারাগারেকারাগারে থাকার সময়ই শামিনের সঙ্গে রক্সি এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হরকাতুল জিহাদ নেতা আবু সাঈদের পরিচয় হয়। সেখানেই তারা নতুন জঙ্গি দল গড়ার পরিকল্পনা করেন। ২০১৮ সালে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর রক্সি ও শামিন মাহফুজ মিলে সেই দল গঠনের কাজ শুরু করেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া তাদের বাছাই করা তরুণদের ছোট ছোট গ্রুপে সিনিয়র সদস্যের হেফাজতে রাখে। যেসব বাড়িতে রাখা হয়, সেটাকে তারা আনসার হাউজ (সাহায্যকারীর বাড়ি) বলে। এরপর চরাঞ্চলে শারীরিক কসরতসহ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে উত্তীর্ণদের প্রশিক্ষণের জন্য বান্দরবানে কেএনএফ’র ক্যাম্পে পাঠানো হয়। কেএনএফ’র ক্যাম্পে এই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শুরু হয় চলতি বছরের শুরুতে। সেখানে একে-৪৭ রাইফেল, পিস্তল ও কাটা বন্দুক চালানো, বোমা (আইইডি) তৈরি এবং চোরাগোপ্তা হামলার (অ্যাম্বুশ) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন- বিশেষত জেএমবি, আনসার আল ইসলাম এবং হুজির বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু নেতাকর্মী একত্রিত হয়ে এই উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৭ সাল থেকে তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে এই নতুন মঞ্চে ভেড়ানোর চেষ্টা শুরু হয়। ২০১৯ সালে নতুন জঙ্গি সংগঠনের নাম দেওয়া হয় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। গত বছর দেশের কুমিল্লা ও অন্য অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে কথিত হিজরত করেন অর্ধশতাধিক যুবক। যাদের মোটিভেশন, প্রশিক্ষণসহ সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণে নেতৃত্ব দেন জেএমবি, নব্য জেএমবি, হিজবুত তাহরীরসহ অন্যান্য নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন থেকে আসা নেতৃস্থানীয়রা।

এদিকে, চিকিৎসক শাকির ঢাকা থেকে দুর্গম পাহাড়ে গিয়ে অসুস্থ ও আহত ঘরছাড়া তরুণদের চিকিৎসা দিতেন। এছাড়াও তিনি পাহাড়ি উগ্রবাদী সংগঠন কুকি-চিনের সদস্যদেরও চিকিৎসা দিতেন। প্রতি মাসে একবার করে যেতেন পাহাড়ে। আবার তিনি যখন ঢাকায় থাকতেন তখন নতুন জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান শামিন মাহফুজ ওরফে স্যারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতেন। ফোনে সদস্যদের অসুস্থতার লক্ষণ শুনে ব্যবস্থাপত্র পাঠাতেন শাকির।

আরএমএম/কেএসআর/জিকেএস