ভ্রমণ

মেঘনার টাটকা ইলিশ ও সবজি খিচুড়ি

সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। কখনো আবার মুষলধারে ঝরছে। বিকেলের দিকে কিছুটা কমেছে। ঠিক করলাম খিচুড়ি খাবো। যেহেতু ভোলায় আছি, ইলিশের শহরে। তাহলে খিচুড়ির সঙ্গে মেঘনা নদীর রুপালি ইলিশ পেলে মন্দ হয় না। ইন্টারনেটে খোঁজ করতেই পেয়ে গেলাম ‘ইলিশ বাড়ি’। মেঘনা নদীর পাড়ে অবস্থিত। ছবিতে দেখে ভালো লেগে গেল। দেরি না করে রওয়ানা হলাম। সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী ফারিয়া।

Advertisement

ভোলা ডাক বাংলো থেকে বের হয়ে একটি অটোরিকশা চালককে ঠিকানা বলতেই চিনে গেলেন। বললেন, ভাড়া দেড়শ টাকা। আমি বললাম, একশ বিশ টাকা। কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, আচ্ছা উঠুন। ভোলা সদর থেকে মাত্র ২০ মিনিটে আঁকাবাঁকা পথে পৌঁছে গেলাম তুলাতলির মোড়। সেখান থেকে নিয়ে গেলেন মেঘনা নদীর ঘাটে। অটোরিকশা থেকে নামতেই চোখে পড়ল ইলিশ বাড়ি। ইলিশ বাড়ি মূলত একটি রেস্টুরেন্ট ও পার্টি সেন্টার।

রিকশা থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে একটি ছেলে হাঁকছে, ‘অরজিনাল মেঘনার ইলিশ খেতে চাইলে এখানে চলে আসুন’। ভেতরে ঢুকতেই বলছেন, স্যার টিকিট কাটুন। এখানে ঢুকতে বা ঘুরতে চাইলে টিকিট কাটতে হয়। বললাম, আমরা তো এখানে শুধু ঘুরবো না। খাওয়া-দাওয়াও করবো। বললেন, আচ্ছা স্যার। তাহলে এখানে আসুন। অর্ডারটা দিন। আমিও ভাবলাম, প্রথমেই অর্ডারটা দিই। তাহলে সময় নষ্ট হবে না। ভেতরে ঢুকে বললাম, আমরা ইলিশ খেতে চাই। একদম মেঘনা নদীর টাটকা রুপালি ইলিশ।

আরও পড়ুন: ভাসমান পেয়ারা বাজরে কীভাবে যাবেন ও কত খরচ? 

Advertisement

শুনেই একগাল হেঁসে এক ছেলেকে বললেন, মামাকে কয়েকটা তাজা ইলিশ দেখা তো। তারপর সেই ছেলে একটি প্লেটে করে চার-পাঁচটা ইলিশ আনলো। সেই সঙ্গে মাছের কান দেখিয়ে বলল, এই যে দেখেন রক্ত। একদম টাটকা ইলিশ। আমি একটি পছন্দ করে দিলাম। বললাম, কত টাকা? বললেন, একদাম ৭০০ টাকা। একটু দাম কমাতে বললাম। কমালেন না। তবে ইলিশটি খুব পছন্দ হয়েছে বলে ওই দামেই নিলাম। বললাম, ইলিশটি পুরো ভেজে দেবেন। সঙ্গে খিচুড়ি ও বেগুন ভাজা। তারা খাবারের জন্য আমাদের কাছ থেকে আধাঘণ্টা সময় চাইলেন।

এই ফাঁকে আমরা রেস্টুরেন্টের চারপাশ ঘুরে দেখতে লাগলাম। কাঠ ও বাঁশ দিয়ে পুরো রেস্টুরেন্টটি ডেকোরেশন করা। যা বিস্তৃত নদীর কিছুটা ভেতর পর্যন্ত। ছোট ছোট কুঠুরির মতো। পুরোটাই নদীর ওপরে। যেখানে ৪-৫ জন করে বসার জায়গা। আমরা একটি ছোট কুঠুরিতে বসে ছবি তুলতে লাগলাম। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেছে। নদীর মধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, পানির কলকল শব্দ আর শীতল বাতাসে মনটা জুড়িয়ে গেল। মাঝে মাঝে নদীর ছোট ছোট ঢেউয়ে এদিক সেদিক মৃদ দোল খেতে লাগলো কুঠুরিটি।

রেস্টুরেন্টের শেফ আধাঘণ্টা সময় চাইলেও প্রায় এক ঘণ্টা অতিবাহিত হলো। খাবার আসছে না দেখে চলে গেলাম কাউন্টারে। বললাম, এত দেরি কেন? বললেন, দুজনের জন্য খিচুড়ি রান্না করতে দেরি হলো। বসেন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে খাবার পৌঁছে যাবে।

আরও পড়ুন: একদিনেই ১১ জনের নিকলী ভ্রমণ 

Advertisement

ঠিক এক ঘণ্টা ১০-১৫ মিনিট পর খাবার এলো টেবিলে। সরিষা দিয়ে তাজা ইলিশ ভাজার গন্ধ নাকে ভেসে এলো। সঙ্গে গোল গোল পাঁচ পিস বেগুন ভাজা আর সবজি খিচুড়ি। দেখেই পেটের ক্ষুধা বেড়ে গেল। তাই দেরি না করে খাওয়া শুরু করলাম।

মেঘনা নদীতে বসে মেঘনার তাজা ইলিশ ভাজা খাচ্ছি ভাবতেই অন্যরকম অনুভূতি। ইলিশের স্বাদটাও অসাধারণ। খাবার খেয়ে কাউন্টারে এলাম বিল দিতে। তখন জিজ্ঞাসা করলেন, খাবারের স্বাদ কেমন? বললাম, এক কথায় অসাধারণ। তিনি একগাল হেসে বললেন, আবার আসবেন। বললাম, আবার কবে আসা হবে জানি না। ভোলার তো আমি লোকাল না, থাকি বগুড়া। এলে অবশ্যই আসবো।

এরই মধ্যে কথা হয় এক তরুণের সঙ্গে। তিনি বললেন, আমার নাম নাজমুল হক অমি। আমি এই ইলিশ বাড়ির একজন উদ্যোক্তা। আমরা মূলত ১২ বন্ধু মিলে রেস্টুরেন্টটি করেছি।

আরও পড়ুন: যা দেখবেন চা বাগানের ভূত বাংলোয় 

তিনি আরও বললেন, আমার এই রেস্টুরেন্টের বয়স প্রায় ১ বছর দুই মাস হতে চলল। রেস্টুরেন্টটি অনেক সাড়া ফেলেছে এ অঞ্চলে। আমরা সবাই কোনো না কোনো চাকরির সঙ্গে যুক্ত। রেস্টুরেন্টকে আমরা প্যাশন হিসেবে নিয়েছি। কোনো ব্যবসায়িক চিন্তা-ভাবনা থেকে নয়।

জানতে চাইলাম, এখানে দৈনিক কত লোক আসে? তিনি বললেন, দৈনিক প্রায় দেড়শ থেকে দুইশ লোক আসে। সবাই যে ইলিশ খেতে আসে ব্যাপারটি এমন নয়। অনেকেই ঘুরতে আসেন। মাত্র ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে চাইলে রেস্টুরেন্টটি ঘুরে দেখতে পারেন। নদীপাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এখানে ইলিশ ফ্রাই, ইলিশের বারবিকিউসহ অনেক আইটেম আছে। সেই সঙ্গে নানা ধরনের স্ন্যাকস আইটেম আছে। সেগুলোর স্বাদ নিতে পারেন।

কথা শেষ হলে আমরা বিল দিয়ে আবার একটি অটো নিলাম ১০০ টাকা দিয়ে। সেই অটোতে করে চলে এলাম ভোলা সদরে।

আরও পড়ুন: মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে গিয়ে যা যা দেখবেন 

যেভাবে যাবেনঢাকা থেকে এখানে আসতে হলে প্রথমেই আপনাকে আসতে হবে ভোলা শহরে। আপনি ঢাকা থেকে লঞ্চ বা বাসে আসতে পারেন। তবে আমি মনে করি লঞ্চে আসাই ভালো। রাতের বেলা চাঁদ দেখতে দেখতে পানিতে ভেসে ভেসে চলে আসলেন ভোলা। সেখান থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরেই ইলিশ বাড়ি। ভোলা থেকে মাত্র ১০০-১২০ টাকায় সরাসরি আসতে পারবেন এখানে। ঢাকা থেকে ভোলার লঞ্চে এলে লঞ্চ ও কেবিন ভেদে ১০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যেই আসতে পারবেন।

থাকা-খাওয়াভোলায় সার্কিট হাউজসহ বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি আবাসন আছে। যেগুলোয় ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যেই অনায়াসে থাকতে পারবেন। ইলিশ বাড়িতে ইলিশ খাওয়াসহ এখানে আরও অনেক সামুদ্রিক ও নদীর মাছ আছে। সেগুলোও খেতে পারেন। খাওয়ার জন্য অনেক ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। আর মহিষের টক দই খেতে অবশ্যই ভুলবেন না। কারণ ভোলার এটি বিখ্যাত খাবার।

এসইউ/জিকেএস