ক্যানসারের সেল নষ্ট করে লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন। এ যন্ত্রটির সাহায্যে রেডিওথেরাপির মাধ্যমে নষ্ট করা হয় ক্যানসার সেল। বেশ ব্যয়বহুল এই থেরাপি। সেই লিনিয়র এক্সিলারেটর মেশিন প্রায় এক যুগ ধরে পড়ে আছে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের গেটের বাইরে। আর খুলনা অঞ্চলের ক্যানসার রোগীদের থেরাপি নিতে যেতে হচ্ছে ঢাকা অথবা কলকাতায়।
Advertisement
প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও এই সময়ের মধ্যে স্থাপন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে দামি এই মেশিনটি গত ১১ বছর ধরে রোদ, বৃষ্টি বা ঝড়ের মধ্যে বাইরে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কবে চালু হবে বা মন্ত্রণালয় ফিরিয়ে নেবে তাও বলতে পারছেন না কেউ।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসার জন্য ২০১২ সালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় ‘লিনিয়ার এক্সিলারেটর’ মেশিন। ১০ কোটি টাকা মূল্যের মেশিনটি সেই সময় থেকেই পড়ে রয়েছে হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সামনে। দীর্ঘ সময় ধরে অবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় মেশিনটি আর কখনো চালু হবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
মেশিনটি চালু করা বা ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং খুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে বহুবার চিঠি চালাচালি হলেও কোনো কাজ হয়নি।
Advertisement
খুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৯ মে জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জন্য ১৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার ব্যয় করে কেনা হয় লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিনটি। ক্যানসার ইনস্টিটিউটে সেই সময়ে এই মেশিন স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি না করেই কেনা হয় এই মেশিন। ফলে কিনে রাখা মেশিনটি পাঠিয়ে দেওয়া হয় খুমেক হাসপাতালে। পরিবহন থেকে মেশিনটি নামিয়ে রাখা হয় রেডিওথেরাপি বিভাগের সামনে। চাহিদা না থাকায় সেই যে নামিয়ে রাখা হয়েছে তা খুলেও দেখেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তীতে মেশিনটি স্থাপন ও আনুষঙ্গিক যন্ত্র কেনার জন্য সাত কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বরাদ্দ না দিয়ে ২০১৬ সালে মেশিনটি জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর ও স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। এরপর পেরিয়ে গেছে আট বছর। মেশিনটি খুমেকের যে স্থানে নামিয়ে রাখা হয়েছিল সেই স্থানেই পড়ে রয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হোসেন বলেন, মেশিনটি বসানোর জন্য যে ধরনের বাঙ্কার বা অবকাঠামো প্রয়োজন তা এই হাসপাতালে নেই। খুলনায় আসার পর থেকেই মেশিনটি বাক্সবন্দি অবস্থায় রয়েছে, কোনোদিন খোলা হয়নি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পেলে এই মেশিন স্থাপন বা চালু করা সম্ভব নয়।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মুহাম্মদ আশরাফ উজ জামান বলেন, মেশিনটি চালু করা সম্ভব হলে এই অঞ্চলের ক্যানসার রোগীদের খরচ করে ঢাকা বা ভারতে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হতো না। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে মেশিনটি হাসপাতালের বারান্দায় অবহেলায় পড়ে রয়েছে তা বলতে পারছে না কেউ।
Advertisement
তিনি অত্যাধুনিক এই মেশিনটি অচিরে চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
আলমগীর হান্নান/এমআরআর/এএসএম