জাতীয়

নদী পারাপারের নৌকায় নেই সুরক্ষাসামগ্রী, বাড়ছে দুর্ঘটনা

রাজধানীর সদরঘাট। বুড়িগঙ্গা পারাপারের জন্য অপেক্ষায় বেশ কিছু নৌকা। যাত্রীরা আসছেন। একেকটি নৌকায় উঠে নদী পার হয়ে চলে যাচ্ছেন গন্তব্যে। যাত্রীদের প্রতিদিনই এভাবে পারাপার করছে ডিঙি নৌকাগুলো। তবে সেগুলোতে নেই কোনো ধরনের নিরাপত্তাসামগ্রী। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নদী পার হচ্ছেন হাজার হাজার যাত্রী। বিভিন্ন সময়ে লঞ্চ, বাল্কহেড ও মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটছে। তবে তাতে এ দৃশ্যের কোনো রদবদল নেই।

Advertisement

গত ১৬ জুলাই বুড়িগঙ্গার শ্যামবাজার থেকে কেরানীগঞ্জের তেলেরঘাট অংশে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় যাত্রীসহ একটি ওয়াটারবাস ডুবে যায়। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪ জন।

এর আগে ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাট অংশে বালুবাহী ট্রলারের ধাক্কায় যাত্রীবাহী একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতেও চারজন নিহত হন। এছাড়া ২০২১ সালের ১ নভেম্বর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে কার্গোবাহী জাহাজের ধাক্কায় নৌকা ডুবে প্রাণ হারান ৫ জন। ২০১৯ সালের ৭ মার্চ বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবির ঘটনায় নিহত হন ছয় যাত্রী।

আরও পড়ুন: বুড়িগঙ্গায় ডুবে যাওয়া ওয়াটার বাস উদ্ধার

Advertisement

সদরঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, একেকটি নৌকায় অন্তত ৬ থেকে ৮-১০ জন পর্যন্ত পারাপার হচ্ছেন। কোনো নৌকাতেই ১টির বেশি বয়া নেই। বিশেষ করে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ওয়াটারবাসগুলোয় ১/২টির বেশি লাইফ জ্যাকেট দেখা যায়নি।

আরও দেখা যায়, নদী পারাপারের সময় দ্রুতগতির বড় বড় লঞ্চ ও বালুবাহী জাহাজের তোয়াক্কা না করে দ্রুত গতিতে ঝুঁকি নিয়েই মাঝিরা নৌকা চালাচ্ছেন। এসময় বয়া ও লাইফ জ্যাকেটের বিষয়ে উদাসীন থাকতে দেখা যায় যাত্রীদেরও।

সদরঘাটের শ্যামবাজার ঘাটের মাঝি স্বপন মিয়া বলেন, এখন বর্ষাকাল আসছে, পানি বেশি। ঢেউয়ের কারণে কিছু ঝুঁকি থাকে।কিন্ত আমরা সচেতনভাবেই পার হই। এপার থেকে ওপার যেতে তিন থেকে ৫ মিনিট লাগে। এসময় বয়া, লাইফ জ্যাকেট ছাড়াও চলা যায়। কিন্ত বালুবাহী ও মালবাহী জাহাজগুলো দ্রুত গতিতে চলার কারণে আমাদের সমস্যা হয়। যাত্রীরাও আতঙ্কে থাকেন।

আরও পড়ুন: বুড়িগঙ্গায় ওয়াটার বাসডুবি: তিনজনের মরদেহ উদ্ধার

Advertisement

বাদামতলী ঘাটের মাঝি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা নৌকা চালিয়ে মালিককে ও ঘাট মালিকদের দিয়ে আসলে তেমন টাকা থাকে না। আমরা যে কষ্ট করে চলি, তাতে লাইফ জ্যাকেট, বয়া কেনার ক্ষমতা নেই। আমাদের নৌকা মালিকরা ও বিআইডব্লিউটিএ থেকে আমাদের কোনো নিরাপত্তাসামগ্রী দেয় না।

তিনি আরও জানান, রাতের বেলা অবৈধ বালুবাহী ও মালবাহী জাহাজগুলো যখন চলে তখন বেশি ঝুঁকি থাকে। তখন অন্ধকারে আমাদের চলতে বেশি সমস্যা হয়।

সদরঘাট দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন কেরানীগঞ্জ এর বাসিন্দা মুন্না। তিনি বলেন, আমরা গত ১০ বছর থেকে ওপার থাকি।নিয়মিত নৌকা দিয়ে যাতায়াত করি। রাতের বেলা বেশি ঝুঁকি থাকে। নৌকাগুলোতে যদি লাইটের সিস্টেম রাখা হতো তাহলে মাঝিরা দেখে শুনে চালাতো। বাল্কহেডগুলো এমন ভাবে পানির সাথে মিশে চলে দূর থেকে ভালোভাবে দেখাও যায় না। ফলে ধাক্কা খেয়ে নৌকা ডুবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এজন্য অবশ্যই নৌকাগুলোতে কিছু লাইফ জ্যাকেট রাখা জরুরি।

আরও পড়ুন: দেশের যত ভয়াবহ লঞ্চ দুর্ঘটনা

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মো. কবির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, অবৈধ বাল্কহেডগুলোর চলাচলের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি সব সময়। সর্বশেষ ওয়াটারবাস ডুবির পর নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি বেশি দেখার দায়িত্ব সদরঘাটের নৌ-পুলিশের। তাদের এসব বিষয়ে কঠোর হতে হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হবে তাদের।

রায়হান আহমেদ/এমএইচআর/এএসএম