উঁচু উঁচু পাহাড় আর ঘন সবুজ বন। পাখির কলরব আর ঝরনার সুমধুর ধ্বনিতে মন যেন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে চায়। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য তেমনই এক সৌন্দর্যের আধার পাথারিয়ার ‘সন্ধানী’ ও ‘মায়াকানন’ ঝরনা।
Advertisement
পাহাড়ের উঁচু-নিচু টিলার ওপর সবুজ বৃক্ষরাজি ও পাহাড়ের বুক চিড়ে প্রবহমান ছড়া প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। এসব ছড়ার ছোট-বড় পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ স্রোতস্বিনী জলধারা বিমোহিত করে আপন স্বকীয়তায়। স্বচ্ছ শীতল পানি, সবুজ প্রকৃতি, বনফুল, চাষনী লেবুর সুবাস, পাখি ও ঝিঁঝিঁ পোকার কলতানে সবকিছু যেন একাকার হয়ে আছে।
সম্প্রতি সন্ধানী ও মায়াকানন নামের নতুন দুটি পাহাড়ি ঝরনার খোঁজ মিলেছে মৌলভীবাজারের পাথারিয়া বনের গহীনে। জেলার জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী লাঠিটিলা বিটের কয়েক কিলোমিটার গহীন পথে হেটে গেলে এ ঝরনার দেখা মিলবে। স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা মনে করছেন, পাথারিয়া বনে আছে অনেক নাম না জানা ঝরনা। ছোট হলেও এগুলো দৃষ্টিনন্দন। পাহাড়ি পথ ও ছড়া দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দুপাশের সবুজ ছায়াশীতল দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতি যে কারো নজর কেড়ে নেবে অনায়াসেই।
আরও পড়ুন: মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে এলাম যেভাবে
Advertisement
পরিবেশকর্মী খুরশেদ আলম এ দুটি ঝরনার সন্ধান পেয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ওমর ফারুক নাঈম ঝরনা দুইটির ‘সন্ধানী’ ও ‘মায়াকানন’ নাম রেখেছেন। মায়াবন ঝরনার পাশেই নতুন ঝরনা পাওয়ায় এর নাম হয়েছে মায়াকানন। আর সন্ধানী ঝরনাকে অনেক পরিশ্রম করে খুঁজে বের করা হয়েছে, তাই এর নাম সন্ধানী।
পাথারিয়া পাহাড়ের আরেকটি অংশে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জনপ্রিয় জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড। মাধবকুণ্ড ও কমলগঞ্জের কুরমা বনবিটের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত হামহামের মতো বড় না হলেও সন্ধানী ও মায়াকানন পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ছোঁয়ায় অনেক দৃষ্টিনন্দন।
কথা হয় স্থানীয় দেলাওয়ার হোসেন, আশরাফ আলী, আবিদ হোসেনের সঙ্গে। তারা জানান, সন্ধানী ও মায়াকাননের মতো পাথারিয়া পাহাড়ের মাধবকুণ্ড বিটের অংশে ঝেরঝেরী, ইটাহরী ফুলবাগিচা, ত্রিপল ঝরনা, জামিনীকুণ্ড, মৌলভীঝরনা, যমজ ঝরনা, রামাকুণ্ড, মায়াকুণ্ড নামে কয়েকটি জলপ্রপাত আছে। এগুলোর বেশিরভাগই মৌসুমি ঝরনা। বর্ষাকালে ঝর্ণাগুলো যৌবনদীপ্ত হয়ে ওঠে। শুষ্ক মৌসুমে কয়েকটি শুকনো থাকে। লাঠিটিলা বনাঞ্চলে এখন পর্যন্ত তিনটি ঝরনা পাওয়া গেছে। সেগুলো সন্ধানী, মায়াবন ও মায়াকানন। যাতায়াত ব্যবস্থার অপ্রতুলতা ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় প্রচার-প্রচারণার অভাবে এই জলপ্রপাতগুলো দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে আছে।
আরও পড়ুন: গহীন অরণ্যের জলপ্রপাত হামহাম
Advertisement
পরিবেশকর্মী খুরশেদ আলম বলেন, ‘ঘণ্টাখানেক পিচ্ছিল পাথুরে ছড়া ও বন দিয়ে হাঁটার পর ঝরনাগুলোর দেখা মেলে। দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার পর ক্লান্ত হয়ে পড়লে শীতল জলধারায় শরীরটা ভিজিয়ে নিলে ক্লান্তি অনেকটাই কমে যাবে। মায়াকানন ও মায়াবন খুব পাশাপাশি ঝরনা। কিন্তু সন্ধানী ঝরনা সেগুলোর চেয়ে অনেক গহীনে। যেখানে যাওয়াটা অনেক কষ্টসাধ্য। পাথারিয়া হিলস রিজার্ভে এরকম আরও অসংখ্য ঝরনা আছে। যেগুলোতে পৌঁছানো আসলে অনেক কষ্টসাধ্য।’
গণমাধ্যমকর্মী ওমর ফারুক নাইম বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলা প্রাণ-প্রকৃতিতে ঘেরা। এ জেলার আনাচেকানাচে লুকিয়ে আছে অনেক সুন্দর নিদর্শন। পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম আমাকে এ দুটি ঝরনা সম্পর্কে অবগত করেন। আমি এদের নাম দিই সন্ধানী আর মায়াকানন। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এ ঝরনায় যেতে হয়।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পাথারিয়ার জলপ্রপাত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে। নতুন পরিকল্পনা করে জায়গাটিতে দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য সুব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া অন্য পর্যটন স্পটগুলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ, পর্যটকদের সার্বিক সুবিধা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: যা দেখবেন চা বাগানের ভূত বাংলোয়
যেভাবে যাবেনঢাকা থেকে বড়লেখা যাওয়ার সরাসরি বাস সার্ভিস চালু আছে। এছাড়া ট্রেনযোগে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কুলাউড়া স্টেশনে নামতে হবে। সিলেট থেকে সকালে কালনী ট্রেনযোগে কুলাউড়া স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা অথবা রেন্টের মাধ্যমে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে জুড়ীতে যাওয়া যায়। জুড়ী শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে লাঠিটিলায় নামতে হবে। সেখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় একজন গাইড জোগাড় করতে হবে। গাইডকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ হেঁটে গেলেই দেখা মিলবে এ দুটি জলপ্রপাত।
এসইউ/এএসএম