রাজনীতি

রাজনীতিতে জিয়া পরিবারের ভবিষ্যৎ কোন পথে?

সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে করা একটি দুর্নীতির মামলার রায়ে হয়েছে। ঠিক এমন সময়ে রায়ে সাজা দেওয়া হলো, যখন দলটি একদফা দাবিতে ব্যাপক আন্দোলনে শামিল। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এবার সরকার পতনের আন্দোলনে যেভাবে উজ্জীবিত, তাতে নেতাকর্মীরা আশাবাদীই বটে। বিশেষ করে গত এক মাসের আন্দোলনে বিএনপি কৌশল বদলে বেশ সাড়া ফেলেছে।

Advertisement

এমন আন্দোলনের মধ্যেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ফের সাজা। এবারই প্রথম মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানকেও। যিনি শুরু থেকেই লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে অবস্থান করছেন। চাউর আছে, বিএনপি নির্বাচনে এলে জোবায়দা রহমান সিলেট থেকে নির্বাচন করতে পারেন। এই সাজা সে পথে বাধা সৃষ্টি করবে। এর আগে তারেক রহমানকে একাধিক মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। আদালতে তাকে দেখানো হচ্ছে পলাতক হিসেবে।

আরও পড়ুন>> বিএনপির শক্তি পরীক্ষার জন্যই কি জামায়াতের একলা নীতি?

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও সাজা ভোগ করছেন। আরও মামলার শুনানি চলছে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। মামলা মাথায় নিয়েই মারা গেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।

Advertisement

কী ঘটবে সামনে? রাজনীতিতে জিয়া পরিবারের ভবিষ্যৎ, দলে অবস্থান, এসব প্রশ্নে মতামত নেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শাহদীন মালিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের।

ড. শাহদীন মালিক মনে করেন ‘আমাদের মতো দুর্বল গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধীদলের নেতারা কারাগারে থাকেন অথবা নির্বাসনে থাকেন এটাই এক ধরনের নিয়ম। এটি কথিত রাজনীতির সংস্কৃতিও বটে। জেলে থাকা বা নির্বাসনে থাকা নেতারা তখনই ফিরে আসতে পারেন, যখন গণতন্ত্র কিছুটা সবল হয়।’

আরও পড়ুন>> ‘হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও বিএনপি ক্ষমতায় আসবে না’

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র রয়েছে এবং দল পরিচালিত হয় গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতেই। দলে কারা নেতৃত্ব দেবেন তা নির্ধারণ করেন কর্মীরাই। কেউ না থাকলেই একটি দল বিলীন হয়ে যায় না।’

Advertisement

বিরোধীপক্ষকে ঘায়েল করতে বাংলাদেশে মামলার সংস্কৃতি পুরোনো এবং পরম্পরায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও জেল খাটতে হয়েছে এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দীর্ঘ সময় কারা ভোগ করেছেন।

২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে যখন সাজা দেওয়া হয়, তার কয়েক মাস পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষত নির্বাচন উপলক্ষেই এসব মামলা ও সাজার ঘটনা গুরুত্ব পায় বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

আরও পড়ুন>> রাজনীতির সমাধান রাজপথে হলে সংঘাত অনিবার্য

ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় কয়েক দশকের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। যে অবস্থা চলছে, তা রাতারাতি পরিবর্তন হবে এটিও মনে করার কোনো কারণ নেই। আবার মামলা দিয়ে, সাজা দিয়ে একটি পরিবারকে রাজনীতি থেকে একেবারে নিঃশেষ করা যায়, তারও নজির নেই।’

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বাংলাদেশে বিএনপি একটি মূলধারার দল এবং দীর্ঘ সময় ধরে দেশ শাসন করেছে। দলটির কেন্দ্রে এখনো জিয়া পরিবার। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি একটি সংস্কৃতি। তবে এক দলকে অন্য দলের সঙ্গেও তুলনা করা চলে না। যেমন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কিন্তু দীর্ঘ সময় বঙ্গবন্ধু পরিবারের বাইরেও পরিচালিত হয়েছে।’

‘মামলা, সাজার কারণে কেউ যদি দলের নেতৃত্ব দিতে না পারে, তাহলে বিএনপির নেতাকর্মীরাই ঠিক করবে কে বা কারা নেতৃত্ব দেবেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন থেকে দেশের বাইরে। এখন তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এরপরেও তিনি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নেতাকর্মীরা তাকে অনুসরণ করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আসলে দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে কর্মীরাই। ঠিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও।’ বলছিলেন, আরেফিন সিদ্দিক।

এএসএস/এএসএ/এমএস