ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় ফড়িংগা দীঘি এলাকার দম্পতি কামাল ও নূরবানু। নূরবানুর দাবি তিনি গর্ভবতী ছিলেন। কিন্তু জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ৩ মাসের মাথায় তার গর্ভপাত হয়েছে। তবে সদর হাসপাতাল ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনার তথ্যে নূরবানুর গর্ভে সন্তানের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রতিপক্ষের দাবি এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি মামলা।
Advertisement
জানা গেছে, প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিবাদ রয়েছে কামাল-নূরবানু দম্পতির। বিবাদের জেরে উভয় পক্ষের সংঘাতকে কেন্দ্র করে ১ জুন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেন নূরবানুর ভাই আবুল কালাম আজাদ। মামলার অভিযোগপত্রে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে নূরবানুর গর্ভবতী থাকা ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে মারামারির সময় আঘাতপ্রাপ্ত হলে রক্তক্ষরণ হয়ে গর্ভপাতের দাবি করা হয়।
প্রমাণস্বরূপ ‘নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাব’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন দেখিয়েছেন এই দম্পতি। তবে নূরবানুর গর্ভপাতের প্রতিবেদনে উল্লেখিত ঠিকানায় বা আশপাশে ‘নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক ল্যাব’ নামক কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই নামের সঙ্গে মিল থাকা একটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়। যার নাম ‘নিউ রহমান হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার’।
ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রেজিস্ট্রি খাতা দেখালে সেখানেও পাওয়া যায়নি ৩১ মে বা আগে পরে নূরবানুর কোনো আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করার তথ্য।
Advertisement
এই বিষয়ে জানতে জাগো নিউজের কথা হয় সেই নূরবানুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মারামারির ঘটনার সময় আমি অচেতন হয়ে যাই। আমাকে হাসপাতালে নেওয়া এবং বিভিন্ন রকমের পরীক্ষার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
তবে হাসপাতালে আসার পর নূরবানুকে সচেতন অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) রাকিবুল আলম বলেন, ওই নারী হাসপাতালে ভর্তি হন। সমস্যা হিসেবে বলেন তার জরায়ু দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং তিনি তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার পেটে লাথি মারা হয়েছে। এরপর হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে ৫টি পরীক্ষা দেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, পরীক্ষাগুলো হাসপাতালেই করা যেত। কিন্তু ওই নারী চারটি পরীক্ষা হাসপাতালে করান এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ল্যাবে স্বেচ্ছায় আল্ট্রাসনোগ্রাম করান।
Advertisement
ওই ল্যাবের প্রতিবেদনে রেফার্ডের জায়গায় ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের নাম উল্লেখ থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য তাকে হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করা হয়নি।
এদিকে রাণীশংকৈল উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র রায়ের দেওয়া তথ্যমতে, সেখানকার রেজিস্ট্রি খাতা অনুযায়ী নূরবানু গত ৪ বছর থেকে নিয়মিত জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি সেবন করে আসছেন।
তিনি এমনই একটি প্রত্যয়ন দিয়েছেন। প্রত্যয়নে বলা হয়, ‘নুরবানু গর্ভবতী ছিলেন না৷ তার বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত খোঁজ খবর নিতেন ইউনিয়ন মাঠকর্মী বৃষ্টি রাণী।’
অপরদিকে অভিযুক্ত আব্দুল জব্বারের স্ত্রী রেহেনা আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এখন তিনি কারাগারে। আমার বাড়িতে আমি একা থাকি। প্রতিপক্ষ আমার একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় হুমকি ও হেনস্তা করছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফরিদ শেখ বলেন, এ মামলায় আমি ওই পরিবারকে আইনি সহায়তা করছি। মামলার কাগজপত্র যাচাই করে মনে হচ্ছে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট একটি মামলা। আগামী ১০ তারিখ মামলার শুনানি আছে। আমরা যাবতীয় নথি আদালতে পেশ করবো।
এ বিষয়ে জানতে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গুলফামুল ইসলাম মন্ডলের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নূর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, পরিবার পরিকল্পনার দেওয়া জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি কেউ নিয়মিত খেলে তার গর্ভবতী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, কোনো সরকারি হাসপাতালের বেসরকারি ক্লিনিক বা ডায়গনস্টিক সেন্টারে রেফার্ড করার কোনো নিয়ম নেই।
তানভীর হাসান তানু/এফএ/এএসএম