দেশজুড়ে

বাসচালকের মুক্তির দাবিতে শ্রমিক ধর্মঘট, যাত্রী ভোগান্তি চরমে

নওগাঁয় সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় কারাগারে থাকা এক চালকের মুক্তির দাবিতে জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিয়ে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট শুরু করেন তারা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ রুটে চলাচলকারী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

Advertisement

জানা যায়, গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় শহরের মশরপুর বাইপাস এলাকায় আব্দুল জলিল শিশুপার্কের সামনে হানিফ পরিবহনের একটি দ্রুতগামী বাস কয়েকটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয়। এতে পার্কে ঘুরতে আসা বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীসহ প্রায় ৩০ জন গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনার পর সেখানে বাস রেখে সটকে পড়েন চালক ইমরান হোসেন।

এ ঘটনার পরদিন সদর মডেল থানায় শহরের রজাকপুর এলাকার বাসিন্দা আহতের স্বজন জোবায়ের হোসেন বাদী হয়ে বাস চালকের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করেন। এ মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ১৬ জুলাই আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করেন চালক ইমরান। বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।

এরপর একাধিকবার চেষ্টা করেও তার জামিন হয়নি। সর্বশেষ সোমবার (৭ আগস্ট) তার জামিনের আবেদন তৃতীয়বারের মতো নাকচ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পরিবহন শ্রমিকরা। এরপর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Advertisement

পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, সড়কে অসংখ্য ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করছে। বাস চালকদের থেকে সড়কের লাঠিয়াল বাহিনী চাঁদা নিচ্ছে। এসব প্রতিরোধে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেই। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা হলে পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান কড়াকড়ি। বিচারকরাও জামিন দিতে চান না। বাস বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। এতে যাত্রীদের পাশাপাশি আমাদেরও অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে। তবে নিজেদের সুরক্ষা ও স্বার্থ রক্ষায় পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই। কারাগার থেকে যতদিন ইমরান বের না হচ্ছে ততদিন এই ধর্মঘট চলবে।

শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটে নওগাঁ শহরের সঙ্গে জেলার ১১টি উপজেলাসহ পাশের, রাজশাহী, জয়পুরহাট ও বগুড়ার বাস যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে করে এ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের পড়তে হয়েছে চরম বিপাকে। অনেকে বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে সিএনজি ও ব্যটারিচালিত অটোরিকশায় যাতায়াত করছেন। তবে বাড়তি ভাড়া দিয়েও সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

মহাদেবপুর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন শিক্ষক আমিনুল ইসলাম। সড়কের দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলের একটা কাজে শিক্ষা অফিসে শহরে এসেছি। গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাসস্ট্যান্ডে এসে জেনেছি বাস বন্ধ। তখন বাধ্য হয়ে ৬০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে আসতে হলো। বাস বন্ধ থাকার সুযোগে সিএনজিচালকরা অতিরিক্ত ২০ টাকা ভাড়া আদায় করছেন। সময়মতো পৌঁছাতেও পারলাম না।

সড়কে এমন দুর্ভোগের কথা বলছিলেন নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সাকিব, মিনহাজ, রাকিবসহ আরও অনেকেই। শহরের একটি ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করেন তারা। বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে প্রত্যেকেই এসেছিলেন রাজশাহী যাওয়ার জন্য। তারা বলেন, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। তাই বৃষ্টির মধ্যে রাজশাহী ঘুরে দেখবার জন্য বেরিয়েছিলাম। এসে শুনছি বাস রাজশাহীতে যাবে না। এখন সিএনজিতে থেমে থেমে গেলে যাওয়া-আসাতেই অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা সময় লেগে যাবে। আবার ভাড়াও অনেক বেশি। তাই মেসে ফিরে যেতে হচ্ছে।

Advertisement

জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে এক চালককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওই চালকসহ গ্রেফতার অন্য পরিবহন শ্রমিকদের মুক্তির দাবিতে শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকেছে। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরেও ওই চালকের জামিন হয়নি। তাই ঠিক কতদিন পর এই বাস চলাচল শুরু হবে, এটা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর নির্ভর করছে।

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) গাজিউর রহমান বলেন, আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের কিছু করণীয় নেই। বিষয়টি বোঝাতে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ডাকা হয়েছিল। তাদের দাবি-দাওয়া থাকলে সেটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের কাছে উপস্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শিগগির বাস চলাচল স্বাভাবিক করার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।

এমআরআর/এএসএম