দেশজুড়ে

চতুর্দেশীয় বন্দরে সুনসান নীরবতা, শঙ্কায় ১০ হাজার শ্রমিক

সপ্তাহজুড়ে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় অচল হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের কার্যক্রম। গত ৩১ জুলাই বাংলাদেশ স্থলবন্দর শুল্ক বিভাগ আমদানি করা পাথরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু বা ধার্য মূল্য বৃদ্ধির ফলে ভারত ও ভুটান থেকে ব্যবসায়ীরা পাথর আনা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বন্দরের ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ হারিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। পাশাপাশি কমে গেছে দেশের অন্যতম এই শুল্ক স্টেশন থেকে রাজস্ব আদায়।

Advertisement

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্দরজুড়ে সুনসান নীরবতা। দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় শুল্ক স্টেশনটি যেন অচল হয়ে পড়েছে। এই স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল এবং ভুটানের মধ্যে পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়। তবে অন্য পণ্যের আমদানি-রপ্তানি সীমিত আকারে চললেও ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এর আগে প্রতিদিন বন্দর দিয়ে গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক পর্যন্ত পাথর আমদানি হতো।

জানা গেছে, এই বন্দর দিয়ে আমদানি করা প্রতিটন পাথরের ধার্য মূল্য ছিল ভারতের বোল্ডার পাথরে ১২ ডলার এবং ভুটানের পাথরে ২১ ডলার। কিন্তু গত ৩১ জুলাই এক চিঠিতে স্থলবন্দর শুল্ক বিভাগ ভারত থেকে আমদানি করা প্রতিটন পাথরের ধার্য মূল্য ১২ ডলার থেকে ১৩ ডলারে এবং ভুটান থেকে আনা পাথরে প্রতিটনে ২১ ডলারের পরিবর্তে ২৪ ডলার নির্ধারণ করে। নতুন এ ধার্য মূল্যে পাথর আমদানির ফলে অতিরিক্ত শুল্ক গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের। এজন্য ১ আগস্ট থেকে বাংলাবান্ধা দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। এতে অচল হয়ে পড়ে বন্দরের কার্যক্রম।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, কেবল পাথর দিয়েই এই স্থলবন্দর সচল থাকে। পাথর না আসলে বন্দর ফাঁকা হয়ে যায়। আমাদের কোনো কাস্টমার থাকে না। কর্মচারীদের বেতন দিতে আমাদের ব্যবসাতেও লোকসান গুনতে হয়। এই পাথর আসা হঠাৎ করেই কেন বন্ধ হয় আমরা বুঝতে পারি না।

Advertisement

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের লোড-আনলোড শ্রমিক নেতা ইউসূফ আলী বলেন, আমাদের এই বন্দর দিয়ে অন্য পণ্যের আমদানি-রপ্তানি কম। পাথরই বেশি আসে। এজন্য এই স্থলবন্দরটি পাথরনির্ভর হয়ে পড়েছে। কয়েকদিন আগেও ভারতে আন্দোলনের ফলে পাথর আমদানি বন্ধ ছিল। এরপর পাথর আসা শুরু হলেও এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। পাথর আমদানি বন্ধের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের শ্রমিক আবুল হোসেন বলেন, আমরা আমদানি করা পাথর ভাঙার কাজ করেই সংসার চালাই। কিন্তু আজ ৬/৭ দিন ধরে বসে আছি। এই স্থলবন্দরে সাতদিন ধরে কোনো পাথরের গাড়ি ঢোকেনি। এভাবে চললে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।

স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন মুছা বলেন, রাজস্ব বিভাগ হুট করে ভারতের পাথরে এক ডলার এবং নেপালের পাথরে তিন ডলার অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু বৃদ্ধি করে। এতে আমাদের অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে। এভাবে পাথর আমদানি করা হলে আমাদের লোকসান হবে। এজন্য আমরা আপাতত পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছি। আলোচনা চলছে, আগের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালুতে আমদানির অনুমতি পেলে আবারও পাথর আমদানি করা হবে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইমরুল হোসেন পাটোয়ারি বলেন, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) এই শুল্ক স্টেশন দিয়ে ৬৪ কোটি সাত লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা বিগত অর্থবছরের চেয়ে ১৫৪ শতাংশ বেশি। আর চলতি অর্থবছরের এক মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা। তবে গত কয়েকদিন ধরে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এটা কেন বন্ধ রয়েছে আমরা জানি না। তবে এ নিয়ে যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে আশা করি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।

Advertisement

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বেশ কয়েকদিন ধরে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে স্থলবন্দরে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। গত মাসে ভারত ও ভুটানের মধ্যে স্লট বুকিংয়ের নামে অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে সেখানকার পরিবহন মালিকদের আন্দোলনে পাথর আমদানি বন্ধ ছিল। এরপর প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৪০ ট্রাক করে পাথর আমদানি হচ্ছিল। কিন্তু গত ১ আগস্ট থেকে শুল্ক বিভাগের পক্ষ থেকে পাথরের অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু কিছুটা বৃদ্ধি করেছে। এতে ব্যবসায়ীদের রাজস্ব বেশি দিতে হবে এমন অজুহাতে তারা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। এ নিয়ে আলোচনা চলছে, আশা করি শিগগির সমস্যা কেটে যাবে।

সফিকুল আলম/এমআরআর/এএসএম