টানা চার যুগ ধরে গুণেমানে সেরা অবস্থান ধরে রেখেছে হবিগঞ্জের আদি গোপালের মিষ্টি। জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে এর সুখ্যাতি ছড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এখানকার সাগরভোগ, ছানার আমিত্তি ও মালাইকিরীর জুড়ি নেই।
Advertisement
শুধু স্বাদ-মানই নয়, দামেও অন্যান্য স্থানের চেয়ে এখানকার মিষ্টি অনেক সস্তা। জেলার বাইরে থেকে কেউ এলেই খেতে চান আদি গোপালের মিষ্টি। নিয়েও যান সঙ্গে করে। একবার খেলে কেউই এর স্বাদ ভুলতে পারেন না।
৪৪ বছর আগে আদি গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডারটি প্রতিষ্ঠা করেন শহরের পুরানমুন্সেফী এলাকার বাসিন্দা নেপাল চন্দ্র দাশ। পুরানমুন্সেফী রোড (বাণিজ্যিক এলাকা) এলাকায় এর অবস্থান। প্রথমে মিষ্টির পাশাপাশি সকালের নাস্তাও বিক্রি হতো এখানে। কিন্তু গত ১৫-১৬ বছর ধরে সেটি আর বিক্রি হচ্ছে না। অক্লান্ত পরিশ্রম, সততা আর নিষ্ঠার কারণে তিলে তিলে গড়ে তোলা এ প্রতিষ্ঠানটি এখন মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। জেলার যেকোনো অনুষ্ঠানে আদি গোপালের মিষ্টি না হলে যেন অপূর্ণতাই থেকে যায়। শুরু থেকেই এর গুণমানের কোনো জুড়ি নেই।
বয়সের ভারে এখন কিছু রোগবালাইও ভর করেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার নেপাল চন্দ্র দাশের ওপর। তাই ব্যবসার হাল ধরেছেন তার দুই ছেলে অ্যাডভোকেট বিকাশ দাশ রুপন ও রুপক দাশ। নবীন হিসেবে যখন আইন পেশায় বিকাশ দাশ রুপনের সুখ্যাতির শুরু তখনই এসে তিনি হাল ধরেন বাবার গড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের। দুই ভাই মিলে এখন ব্যবসা পরিচালনা করছেন। জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ মূল্য সংযোজন করদাতা হিসেবে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারও পেয়েছেন দুইবার। মূল্য তালিকা সাঁটানো আছে। একাধিক স্থানে লেখা আছে মূল্য তালিকা দেখে মিষ্টি ক্রয়ের জন্য।
Advertisement
প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে জনপ্রিয় মিষ্টির মধ্যে সাগরভোগ, ছানার আমিত্তি, মালাইকারী, রসগোল্লা অন্যতম। এর বাইরেও সাধারণ মিষ্টি, স্পেশাল ক্ষিরদধি, স্পেশাল রাজভোগ, রসমালাই, সাগরভোগ (জাফরান), ছানার সন্দেশ, লাল মালাইকারী, মাতৃভোগ, নিমকী, মিহিদানা, নরমাল লাড্ডু, স্পন্স, স্পেশাল মিষ্টি, টক দধি, জিলাপী, জর্দার মিষ্টি ও কাপ দধি অত্যন্ত সুস্বাদু।
চট্টগ্রামের হাসানুজ্জামান চাকরি করেন দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে। জেলা শহরে পাসপোর্ট অফিসে কাজে এসেছেন। মিষ্টির দোকানে জাগো নিউজকে বলেন, আমি শহরে আসছি শুনে আমার স্ত্রী বলে দিয়েছেন আদি গোপাল থেকে মিষ্টি নিয়ে যেতে। এই মিষ্টি অত্যন্ত সুস্বাদু। সবার কাছে পরিচিত। আমাদের প্যালেস রিসোর্ট থেকে যে কেউ এলেই এখান থেকে মিষ্টি কিনে নেয়। এটি আমাদের অত্যন্ত পছন্দের মিষ্টি।
টাঙ্গাইলের বোরহান উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমি ৯ বছর ধরে হবিগঞ্জে চাকরি করছি। এ সুবাদে শুরু থেকেই জানি আদি গোপাল সম্পর্কে। মিষ্টি কোনটি ভালো কোনটি মন্দ সেটি আমার জানা হয়ে গেছে। আদি গোপালের মিষ্টি আসলে অতুলনীয়।
লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের বাসিন্দা রুমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সব সময়ই এখান থেকে মিষ্টি নিই। কারণ এ মিষ্টির মান অন্যান্য দোকান থেকে অনেক ভালো। মূল্যও সহনীয়।
Advertisement
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার পার্থ বিশ্বাস জাগো নিউজকে জানান, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গরুর খাঁটি দুধ সংগ্রহ করেন তারা। তা থেকে ছানা তৈরি করেন। এরপর অত্যন্ত যত্নসহকারে মিষ্টি তৈরি করা হয়। এতে কোনো খাদ নেই। তাই এ মিষ্টি খেতে সুস্বাদু হয়।
মিষ্টির কারিগর অর্জুন দাশ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা খাঁটি দুধ এনে মিষ্টি তৈরি করি। এজন্যই আমাদের মিষ্টির গুণগত মান ভালো হয়। আমাদের এ প্রতিষ্ঠানটি অনেক পুরোনো। তাই প্রতিষ্ঠানের সুনাম যেন অক্ষুণ্ন থাকে সেই চেষ্টা করি।
প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নেপাল চন্দ্র দাশের বড় ছেলে অ্যাডভোকেট বিকাশ দাশ রুপন জাগো নিউজকে বলেন, আইন পেশায় আমার অনেক সুযোগ ছিল। কিন্তু বাবার তিলে তিলে গড়ে তোলা ব্যবসা আমার কাছে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি ব্যবসাতেই মনোযোগী হয়েছি। ছোটভাই রুপক দাশকে নিয়ে এখন ব্যবসাটি পরিচালনা করি।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যবসার সুনাম। এখানে ভালো মান এবং দামও যেন নাগালের মধ্যে থাকে সেটি চান ক্রেতারা। আমরা দু’টি বিষয়ই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ব্যবসা পরিচালনা করছি। মানের বিষয়ে আমাদের কোনো ছাড় নেই।
এফএ/এমএস