মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার বাবা মৌলভী দলিল আহমেদ, মা শামসুন্নাহার। তিনি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে এমএসএস পাস করেন।
Advertisement
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে তার বিসিএস জয়, ক্যারিয়ার পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মমিন উদ্দিন—
জাগো নিউজ: বিসিএসে ক্যাডার পাওয়ার অনুভূতি কেমন?মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ: আম্মাকে অনেক দিন ধরে বলে আসছিলাম, আরেকটু অপেক্ষা করেন। রেজাল্ট পেয়ে ফোনে যখন বললাম, আম্মা রেজাল্ট এসেছে শিক্ষা ক্যাডারে। আম্মা কী যেন বলছিলেন দোয়া পড়ার মতো কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে। বুঝতে পারছিলাম, অনেক বেশি এক্সাইটমেন্টে আম্মার কণ্ঠ কাঁপছে। এটা যে আমার জন্য কী রকম ভালো লাগা, বোঝাতে পারবো না।
আরও পড়ুন: বাবার অনুপ্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার মানস
Advertisement
জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল?মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ: এসএসসিতে এলাকায় প্রথম এ প্লাস পাই ২০১১ সালে। এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে রেজাল্ট তার তুলনায় একেবারে আশানুরূপ হয়নি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার স্বপ্নপাখির ডানা তখনই ভেঙে পড়ে। এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে, আমার এক বন্ধুকে নিয়ে পুনরায় এক স্কুলে ক্লাস নাইনে ভর্তির জন্য গিয়েছিলাম। এই মানসিক বাধা আমার জীবনের অন্যতম শিক্ষা।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ: দেশের বাইরে পড়তে যাবো ভেবে ব্রিটিশ কাউন্সিলে যাওয়া-আসা করেছি বছরখানেক। ২০২০ সালের মার্চের শেষদিকে করোনায় দেশ অবরুদ্ধ হয়। হঠাৎ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারে চলে যাওয়া। তারপর সব কিছু ওলটপালট হয়ে যায়। মাসখানেক পর কয়েকজন বন্ধু মিলে অনলাইনে বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করি। চলে বই সংগ্রহ। তখনই প্ল্যান বি হিসেবে বিসিএস যাত্রা।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই—মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ: প্রথমবার হিসেবে লিখিতর জন্য খুব একটা সময় পাইনি। আম্মাসহ পরিবারের প্রায় সবাই করোনায় আক্রান্ত হন। রিটেনের সময়টুকুও তাই ভালো ব্যবহার করতে পারিনি। চলনসই একটা পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ভাইভা বোর্ড আমার জন্য একটু অস্বস্তির ছিল। কোনো উত্তরই নিচ্ছিল না প্রথমদিকে। এতদিন জানতাম বোর্ডে সম্মানিত সদস্যদের সঙ্গে কিছুতেই তর্ক করা যাবে না। তবে যুক্তি দিয়ে আমি আমার মতের ওপর স্থির ছিলাম শেষপর্যন্ত। সম্মানিত বোর্ড সদস্য আমাকে প্রশ্ন করে মতের মিল না হওয়ায় একপর্যায়ে বেঞ্চ থেকে চলে গিয়েছিলেন। তাই ভাইভা নিয়ে ভয়েই ছিলাম। রেজাল্টে দেখলাম আমার সাবজেক্টে আমার সিরিয়াল সপ্তম। রেজাল্ট শিটে রোল দেখে মনে হলো ভাইভা বোর্ডে ভিন্ন মত প্রকাশ করা যায়। তবে শক্তিশালী যুক্তি থাকতে হবে তার পেছনে।
আরও পড়ুন: বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই বিসিএস ক্যাডার মুন্নী
Advertisement
জাগো নিউজ: কারো কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কি?মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ: আমাদের এলাকায় আমিই প্রথম বিসিএস প্রিলিমিনারি পাস করেছিলাম। দীর্ঘ যাত্রা হওয়ায় এ পথে ধৈর্য নিয়ে লেগে থাকা কঠিন ব্যাপার। কারো সঙ্গে দেখা হলে কেমন আছি জিজ্ঞেস করার আগে জিজ্ঞেস করতেন ‘কোথায় আছি’। যা আমার জন্য পীড়াদায়ক ছিল। ৪১তম বিসিএস আমার প্রথম বিসিএস ছিল। তবে আমার রুমমেট বড় ভাই মাহফুজুর রহমান (৩৮তম বিসিএস পুলিশ) আমাকে যথেষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এ যাত্রায়। বলে রাখি, মাহফুজ ভাইকে দেখেই আমার বিসিএসের স্বপ্ন দেখা।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ: অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ, সাম্য, অসাম্প্রদায়িক এক মানবিক সমাজ বিনির্মাণে রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করার ইচ্ছা আছে।
এসইউ/এএসএম