অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান
Advertisement
বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হওয়ার পথে এই পুণ্যবান নারী আজীবন পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করে গেছেন। তিনি ছিলেন শেখ মুজিবের বন্ধু, পরামর্শক, সমর্থক এবং সহায়ক। বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এমন বিরল ব্যক্তিত্ব যিনি বাঙালি জাতির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে তিনি অনুঘটক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাবন্দি থাকার সময়ে কিংবা জাতির সংকটময় মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এমনকি দলের নেতা না হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা যখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন তখন তিনি সাহসী ও বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে রাজনীতিতে স্মরণীয় সাফল্য অর্জন করা অসম্ভব হত, যদি বেগম মুজিব তার সঙ্গে না থাকতেন।
বেগম মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ বছর বয়সে পৌঁছার আগেই তিনি তার পিতা-মাতাকে হারান এবং তার দাদার ভাইয়ের সংসারে ভবিষ্যত শাশুড়ির কাছে পালিত হন। শেখ হাসিনা লিখেছেন, “আব্বার বয়স যখন দশ বছর তখন তার বিয়ে হয়। আমার মায়ের বয়স ছিল মাত্র তিন বছর (শেখ মুজিব আমার পিতা,পৃ:২৭) । বঙ্গবন্ধুর ভাষায় “...যদিও আমাদের বিবাহ হয়েছিল ছোট বেলায়। ১৯৪২ সালে আমাদের ফুলশয্যা হয়।” (‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, পৃ: ২১)। ৩৩ বছর বিবাহিত জীবনে প্রায় ১৩ বছর বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন। মুক্ত দাম্পত্য জীবন মাত্র ২০ বছরের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের সেই বন্ধন অটুট ছিল।
Advertisement
আরও পড়ুন: শেখ কামালের অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন হোক
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছার সঙ্গে উইনি ম্যান্ডেলার (১৯৩৬-২০১৮) রাজনৈতিক কার্যধারার তুলনা করলে কয়েকটি বিষয়ে মিল পরিলক্ষিত হবে। উভয়ই ছিলেন বিশ্বের কিংবদন্তি দুই রাজনৈতিক নেতার যোগ্য জীবনসঙ্গী। উইনি ম্যান্ডেলা ছিলেন সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ, ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট। দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ তাকে ‘জাতির মাতা’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। তৎকালীন শেতাঙ্গ শাসকদের বর্ণবিদ্বেষী আচরণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, জেল খাটা, একের পর এক প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় নেলসন ম্যান্ডেলার পাশে ছিলেন উইনি। নেলসন ম্যান্ডেলার দাম্পত্য জীবনের (১৯৫৭-১৯৯৬) ১৯৬২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছিল দুর্ভোগ ও দুর্দশাময়। বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামে নেতৃত্ব দানের কারণে ১৯৬২ সালে নাশকতার অভিযোগ তুলে নেলসন ম্যান্ডেলাকে পুরে দেওয়া হয় কারাগারে, একটানা ২৭ বছরের কারাবাস ছিল যন্ত্রণার। অর্থাৎ নেলসন ম্যান্ডেলাকে বিয়ের পর ৩৮ বছরব্যাপী বিবাহিত জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তাদের আলাদা থাকতে হয়েছে। দুঃসময়ে উইনি একাই তাদের দুই মেয়েকে মানুষ করেছেন। অন্যদিকে সরকারের অত্যাচার ও দমন-পীড়নের মধ্যে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে নেলসন ম্যান্ডেলার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছে। ১৯৯০ সালে নেলসন ম্যান্ডেলা কারাগার থেকে বের হন। স্বামী কারাবন্দি থাকার সময় স্পষ্টবাদী উইনি কঠোর পরিশ্রম করে রাজনীতিতে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘সব ধরনের পরিস্থিতিতেই আমি নিজেকে খুঁজে পেয়েছি।’
তবে বেগম মুজিব নিজের আত্মজীবনী লিখে যাননি। লিখলে সেটা হত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অনন্য দলিল। তবে জাতির জনকের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের শ্রেষ্ঠ ইতিহাস, তা পেয়েছি কিন্তু বেগম মুজিবের কারণেই। বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে লিখেছেন, “... আমার সহধর্মিনী একদিন জেলগেটে বসে বলল, বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবন কাহিনী। ... আমার স্ত্রী যার ডাক নাম রেণু। আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছিল। রেণু আরও একদিন জেল গেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে শুরু করলাম”।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পর নেলসন ম্যান্ডেলার মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে স্ত্রী উইনিকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং সরকারি বাহিনী উইনির ওপর নির্যাতন চালাত। তাকে আটক রাখত কিংবা নির্বাসনে পাঠানো হতো। স্বামীর সঙ্গে কদাচিৎ সাক্ষাতের সুযোগ পেতেন তিনি। মুষড়ে না পড়ে বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনে উইনি সবসময়ই সামনে থেকে লড়াই করে গেছেন। ১৯৭৬ সালে সোয়েতো অভ্যুত্থানের সময় তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লড়াইয়ে সম্পৃক্ত হন। এমনকি আশির দশকের শেষে শ্বেতাঙ্গ সরকার বিরোধী সহিংস আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। উইনি সম্পর্কে ডেসমন্ড টুটু তার সাক্ষ্যে বলেছিলেন, ‘তিনি আমাদের সংগ্রামের এক অসাধারণ সাহস এবং মুক্তিযুদ্ধের মূর্তি।’
Advertisement
উইনি ম্যান্ডেলা যেমন নেলসনের সাহচর্যে এসে জনগণের দাবিকে নিজের করে নিয়েছিলেন ভালোবেসে, তেমনি জাতির প্রতি বেগম মুজিবের ব্যক্তিগত অবদান এবং তার বঙ্গমাতা হয়ে ওঠা বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রতি ভালোবাসার কারণেই সম্ভব হয়েছিল। জাতির প্রতি তার জীবন উৎসর্গটি এত গৌরবময় ছিল যে, “বঙ্গমাতা” তার জন্য উপযুক্ত উপাধি। সরল-সাধারণ জীবনযাপন, ধৈর্য, রাজনীতির প্রতি কৌতূহল আর সাধারণ মানুষের প্রতি সহানুভূতি তা কেবল একজন গৃহিণী হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয় বরং জাতির জন্য তার ত্যাগের বিষয়টি বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান শেখ মুজিবের জীবনসঙ্গী হিসেবে ছিল তাৎপর্যময়। তিনি আদর্শ মাতা ছিলেন এবং একজন রাজনৈতিক নেতার পাশে ছিলেন সব সংকট মোকাবেলার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ফজিলাতুন নেছা মুজিব ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর লাখ লাখ সমর্থকের ‘ভাবী’ হয়ে উঠেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে ৩ হাজার ৫৩ দিন কারাগারে কাটাতে হয়েছিল, এই কারণে প্রতিদিনের রাজনৈতিক কর্মধারা পরিচালনার দায়িত্ব তার কাঁধে পড়েছিল এবং তিনি একজন যোগ্য কর্মী হিসেবে সবচেয়ে সফলতার সঙ্গে সেই কাজটি করেছিলেন। তিনি কখনো মিছিল করার জন্য বাসা থেকে বের হননি বা প্রকাশ্যস্থানে নিজেকে জনতার সামনে তুলে ধরেননি। বরং তিনি তার দেশের নিপীড়িত জনতার একজন হয়ে বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের সঙ্গে রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করার একটি অনানুষ্ঠানিক গোপন নেটওয়ার্ক তৈরি করে নিয়েছিলেন, এমনকি ব্যক্তিগত সমস্যা হলেও নেতা-কর্মীদের সমস্যাগুলো সমাধান করে দিতেন।
আরও পড়ুন: ঘুমন্ত নারীর পা ঘষা তার নেশা
১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ, রাজধানীর আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার অনুষ্ঠানে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কথা বলে নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু এভাবে “আমার জীবনেও আমি দেখেছি যে, গুলির সামনে আমি এগিয়ে গেলেও কোনো দিন আমার স্ত্রী আমাকে বাধা দেয় নাই। এমনও আমি দেখেছি যে, অনেকবারে আমার জীবনের ১০/১১ বছর আমি জেল খেটেছি। জীবনে কোনো দিন মুখ খুলে আমার ওপর প্রতিবাদ করে নাই। তাহলে বোধ হয় জীবনে অনেক বাধা আমার আসত। এমন সময়ও আমি দেখেছি যে আমি যখন জেলে চলে গেছি, আমি এক আনা পয়সা দিয়ে যেতে পারি নাই আমার ছেলেমেয়ের কাছে। আমার সংগ্রামে তার দান যথেষ্ট রয়েছে। পুরুষের নাম ইতিহাসে লেখা হয়। নারীর নাম বেশি ইতিহাসে লেখা হয় না। সেজন্য আজকে আপনাদের কাছে কিছু ব্যক্তিগত কথা বললাম। যাতে পুরুষ ভাইরা আমার, যখন কোনো রকমের সংগ্রাম করে নেতা হন বা দেশের কর্ণধার হন তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের নারীদেরও যথেষ্ট দান রয়েছে এবং তাদের স্থান তাদের দিতে হবে।”
স্ত্রী হিসেবে বেগম মুজিব বঞ্চিত ছিলেন। তা নিয়ে কখনো অভিযোগ করতে কেউ শোনেনি। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন তার স্বামী দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করছে। বেগম মুজিবের নামে প্রচুর পৈতৃক সম্পত্তি ছিল। সম্পত্তি থেকে যা আয় আসত তার অংশটুকু নিজের হাতে আসলেও পুরোটাই স্বামীর হাতে তুলে দিতেন। এখানে আমেরিকার প্রথম ফার্ষ্ট লেডি (১৭৮৯-১৭৯৭) মার্থা ওয়াশিংটন (১৭৩১-১৮০২),-এর কথা উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক। চার সন্তানের জন্ম দিলেও জীবিত দুই সন্তান নিয়ে পঁচিশ বছর বয়সে বিধবা হন মার্থা। প্রচুর সম্পত্তি এবং ৮৪ জন কৃতদাস নিয়েই জর্জ ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নতুন সংসারে তাদের কোনো সন্তান হয়নি। তার আগের সংসারের দুই সন্তান এবং দুই বর্ধিত পরিবারের সবাকেই উভয়ে দেখাশুনা করেছেন। বিয়ের সময় মার্থার বয়স ছিল ২৭ আর ওয়াশিংটনের বয়স ছিল ২৬। বিপ্লবের পূর্বে ঘরকুণে থাকলেও বিল্পবের সময় স্বামীর সঙ্গে হাজার হাজার মাইল সঙ্গ দিয়েছিলেন। বিল্পবের সময় টানা দশ দিন পথ চলে ফিলাডেলফিয়ায় পৌঁছেছিলেন জেনারেল ওয়াশিংটনকে অনুপ্রেরণা জোগাতে। এভাবেই দেশের কাজে সহযোগিতা শুরু করেন।
রাজনীতির কারণে পারিবারিক জীবনে একটার পর একটা আঘাত এসেছে। কিন্তু বেগম মুজিব কখনো ভেঙে পড়েননি বা মুজিবকে বলেননি “তুমি রাজনীতি ছেড়ে দাও।” সংসারটা বেগম মুজিব একাই চালাতেন। টাকা, শাড়ি, গয়না, বাড়ি, গাড়ি কোনো কিছুর জন্যই কখনো বঙ্গবন্ধুকে বিরক্ত করেননি। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রীত্ব ছেড়ে যখন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলেন তখন মন্ত্রীত্বের সব সুযোগ-সুবিধা ছাড়তে হয়েছিল। পরিবারের এই সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার ঘটনাটাও বেগম মুজিব হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন। এখনকার দিনে কোনো মন্ত্রীর পক্ষে মন্ত্রীত্ব ছেড়ে কেবল দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ নিলে নিশ্চিত করে বলা যায়, ভাবিরা হালকা হলেও ঝগড়াঝাটি করবেন। কিন্তু বেগম মুজিব এ নিয়ে একটি কথাও বলেননি।
আজকাল প্রায়ই দেখা যায় রাজনৈতিক নেতারা (এমনকি আওয়ামী লীগেও) তাদের স্ত্রীদের জন্য রাজনৈতিক পদপদবী হাতিয়ে নেন। মূল দলের মহিলা ফ্রন্টের উচ্চ পদ অথবা সংরক্ষিত আসনে এমপি অথবা দলের কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় পদে স্ত্রীকে বসাচ্ছেন অথবা স্ত্রীর পদের জন্য বাহানা ধরছেন। এমনটি বেগম মুজিব কখনো চিন্তাই করেননি। এটা যে কেবল ইদানিং হচ্ছে বা কেবল আমাদের দেশে হচ্ছে এমনটি নয়। বার্মার জাতীয়তাবাদী নেতা অং সান এর স্ত্রী কিং কিয়ি (মিয়ানমারের বর্তমান নেত্রী অং সান সুচি’র মা, যিনি পেশায় একজন নার্স ছিলেন এবং ১৯৪২ সালে অং সান বার্মা ক্যাম্পেইনের সময় আহত হয়ে রেঙ্গুন জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে যার সঙ্গে পরিচয় হয়) বার্মার স্বাধীনতা উত্তর পার্লামেন্টে (১৯৪৭-১৯৪৮) স্বামীর ছেড়ে দেওয়া রেঙ্গুনের লানমাডাও এলাকার এম পি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ১৯৫৩ সালে বার্মার প্রথম সমাজ কল্যাণ মন্ত্রীও হয়েছিলেন। ১৯৬০ সালে তাকে নয়া দিল্লিতে বার্মার রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
১৯৭৩ সালে নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া যে কোনো একটি আসনে বেগম মুজিব অনায়াশেই এমপি হতে পারতেন। কিন্তু বেগম মুজিব এমন পদ পদবীর কথা কখনো চিন্তাই করেননি। স্বাধীনতা উত্তরকালে বঙ্গভবন বা গণভবনের বিশাল পরিসরে থাকার সুযোগ সত্ত্বেও ৩২ নং বাড়ির ছোট্ট পরিসরেই থেকে গিয়েছিলেন, নিজের পরিবারে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন চিন্তাও তার মাথায় আসেনি। সাড়ে তিন বছরের ক্ষমতাকালে এ বাড়িতে কোনো জমকালো পার্টিও আয়োজন করেননি। যেমনটি করতেন আধুনিক তুরস্কের জনক কামাল আতাতুর্ক-এর স্ত্রী লতিফে উশাকলেগিল। কামাল আতাতুর্ক ৪২ বছর বয়সে ২৪ বছর বয়সী লতিফেকে বিয়ে করলেও মাত্র দুই বছর (১৯২৩-১৯২৫) স্থায়ী হয়েছিল তাদের বিবাহিত জীবন। এই অল্পসময়ের মধ্যেই আঙ্কারার ‘চানকায়া ম্যানশন’-এ ব্যাপক সাজসজ্জা করেন লতিফে, অসংখ্য জমকালো সংবর্ধনা ও পার্টির আয়োজন করেন। এসময়ে তিনি আতাতুর্কের সব সফরে সঙ্গী হতেন এবং বক্তৃতা দিতেন। যা বেগম মুজিব কখনো চিন্তাও করেননি। এমনকি তৎকালীন পাকিস্তানের বড় একটি দলের নেতার বা মন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে তিনি কোনোদিন পাকিস্তানেও যাননি।
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’য় ঘুরে ফিরে এসেছে বেগম মুজিবের কথা। শেখ মুজিবুর রহমানের লেখক হওয়ার অন্যতম অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন তিনি। বেগম মুজিব প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করতে পারেননি। স্থানীয় মিশনারী স্কুলে (জিটি স্কুল) কিছু প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তবে সত্যিকার অর্থে আলোকিত ছিলেন। দলীয় কর্মীদের পরামর্শ দেওয়ার ক্ষমতা এবং তাদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি এতটাই সঠিক ছিল যে কারাগারের বাইরে এসেও বঙ্গবন্ধু তার প্রজ্ঞামণ্ডিত সিদ্ধান্তসমূহ স্বীকার করে নিতেন। তিনি স্বশিক্ষিত ছিলেন, ছিলেন অস্বাভাবিক প্রত্যুৎপন্নমতি এবং বুদ্ধিমান নারী। কখনো কখনো তিনি এমনভাবে কথা বলতেন যা সহজেই একজনকে হতাশার মধ্যে আনন্দিত করে তুলত। তিনি ধীরে ধীরে কথা বলতেন এবং খুব ধৈর্য সহকারে অন্যের কথা শুনতেন। পরিবারে সন্তানদের প্রতিও তিনি অত্যন্ত দায়িত্বশীল ছিলেন। তিনি সত্যিই অনেকের মা এবং শেষ পর্যন্ত জাতির মা হয়ে উঠেছিলেন। গরিবের প্রতি তার বিশেষ সহানুভূতি ছিল। তিনি প্রয়োজনে তাদের সহায়তা করতেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত কর্মীদের অর্থ সহায়তা করতেন। এছাড়াও তিনি নানান উৎসবে দরিদ্রদের মাঝে দান এবং তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য অর্থ প্রদান করতেন। নেতাকর্মীদের অসুখ হলে তাদের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করতেন। কারাবন্দি নেতাকর্মীদের পরিবারের জন্য সাহায্য পাঠাতেন। বাসার একমাত্র ফ্রিজটি বিক্রি করে অসহায় কর্মীদের সাহায্য করেছেন। নিজের বাসায় বাজার না করে সন্তানদের খিচুড়ি রান্না করে আচার দিয়ে খেতে দিয়েছেন। এমন অবস্থাতেও কর্মীরা বিপদে পড়লে তাদের সাহায্য করেছেন।
আরও পড়ুন: ঘুমাতে না দিলে মামলা হয় যে দেশে
দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থেকেও দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থাকা রাজনৈতিক কর্মীদের পরিবারকে দেখাশোনা করতে হয়েছিল বেগম মুজিবকে। তিনি দুঃসময়ে কর্মীদের নিজের অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ দিতেন। কর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং তাদের পরিচালনা করতেন। এমনকি তিনি গয়না বিক্রি করে সংগ্রহ করা তহবিল দলের কাজে সরবরাহ করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে সংকটের সময়ে তিনি জনতা ও নেতাদের নির্দেশনা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার লেখায় আরও স্পষ্ট হয়েছে বিষয়টি ‘জেলখানায় দেখা করতে গেলে আব্বা তার মাধ্যমেই দলীয় নেতা-কর্মীদের খোঁজ-খবর পেতেন। আব্বার দিক-নির্দেশনা আম্মা নেতা-কর্মীদের পৌঁছে দিতেন। আব্বা কারাবন্দি থাকলে সংসারের পাশাপাশি সংগঠন চালানোর অর্থও আমার মা যোগাড় করতেন। তিনি কখনো ব্যক্তিগত-পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে তাকাননি। একদিকে যেমন সংসারের দায়িত্ব পালন অন্যদিকে মামলা পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দলকে সংগঠিত করা, আন্দোলন পরিচালনাসহ প্রতিটি কাজে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।’
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে সেসময় বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে খুব সক্রিয় দেখা গিয়েছে। তিনি রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং প্রতিটি স্তরের আন্দোলনের সময় তাদের কার্য-কলাপ অনুসন্ধান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। বেগম মুজিবের পরামর্শে ছাত্র আন্দোলনের অনেক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এমনকি তিনি কীভাবে আন্দোলন পরিচালনা করবেন তা তাদের পরামর্শ দিতেন। প্রায় সব ছাত্রনেতার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনি ছিলেন কাণ্ডারি। এভাবে তিনি কার্যত ছায়া নেতা হয়ে ওঠেন। এক্ষেত্রে কমলা নেহেরুর (১৮৭৭-১৯৩৬) সাদৃশ্য টানা যৌক্তিক হবে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কমলা এবং নেহেরুর সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। স্বামীর অবর্তমানে (জেলে থাকা অবস্থায়) অথবা রাজবৈরী বক্তৃতা দেয়া যখন নিষিদ্ধ হত কমলা তখন জনসভায় সেটা পড়ে শোনাতেন। এভাবে কমলা ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন এবং দুই বার কারাবরণ করেন। তিনি গান্ধী আশ্রমেও কিছুদিন কাটান এবং সরোজিনী নাইডু এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী জয় প্রকাশ নারায়নের স্ত্রী প্রভাভতী দেবীর সংস্পর্শে আসেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক জান্তার গৃহ বন্দিত্ব বরণ করে বেগম মুজিব তার মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো উৎসর্গ করেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে মুক্তির লক্ষ্যে বাঙালিদের আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য। বেগম মুজিব পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকলকে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি তার উদ্বেগ বা হতাশা প্রকাশ না করে বরং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দলীয় সমস্যার সময়ে ধৈর্য ধারনের পরামর্শ দিতেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে তিনি যেভাবে বন্দি জীবন কাটিয়েছিলেন তার মধ্যেও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা দিতে সচেষ্ট ছিলেন।
স্বাধীনতার পর শেখ ফজিলাতুন নেছা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। এতদ্ব্যতীত, বিভিন্ন বিশ্বনেতারা যখন বাংলাদেশ সফর করতেন তখন তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গমাতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনঃনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে দেশের কাজ করে গেছেন। তিনি পাকিস্তানি দখলদার সেনার দ্বারা নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদেরকে সমাজে পুনর্বাসিত করেছিলেন এবং দরিদ্র মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। সবসময় সবকাজে বঙ্গবন্ধুর সমর্থক ছিলেন। কখনো ভিন্ন কিছু ভাবেননি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কোনো বিষয়ে মতবিরোধের কথা কখনো শোনা যায়নি। এক্ষেত্রে মহাত্বা গান্ধীর স্ত্রী কস্তরবা গান্ধীর (১৮৬৯-১৯৪৫) বিপরীতমুখী অবস্থানে দেখা যায় বেগম মুজিবকে। কস্তরবা স্বামীর সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বিট্রিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন বটে, কিন্তু বহু বিষয়েই স্বামী মোহেদাস করমচাঁদ গান্ধীর সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করতেন। ১৮৮৩ সালে ১৪ বছর বয়সী কস্তরবার সঙ্গে ১৩ বছর বয়সী গান্ধীর বিয়ে হয়। ১৯০৬ সালে গান্ধী ব্রহ্মচারী বনে যান। সন্তানদের চিকিৎসার ব্যাপারেও মতবিরোধ দেখা দেয় গান্ধী এবং কস্তরবার মধ্যে। গান্ধী চাইতেন আশ্রমেই সন্তানদের চিকিৎসা করাতে, কস্তরবা এটাকে সন্তানদের প্রতি গান্ধীর অবহেলা হিসেবে দেখতেন। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেই রাজনৈতিক কারণে জেলখাটা কস্তরবা গান্ধীর সঙ্গে সত্যাগ্রহ আন্দোলন পর্যন্ত একমত পোষণ করলেও ১৯৩০ সালে গান্ধীর বিখ্যাত ‘সল্ট মার্চে‘ অংশগ্রহণ করেননি বরং আইন অমান্য আন্দোলন করে জেলে গেছেন।
কয়েকটি ঘটনা স্মরণ করলে বেগম মুজিবের অবদান আরও স্পষ্ট হবে। বেগম মুজিবের স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ তিনি সবই মনে রাখতে পারতেন। একারণে বঙ্গবন্ধু তাকে ‘সারাজীবনের জীবন্ত ডায়েরি’ বলেছেন। ১৯৪৬ সালে দাঙ্গার সময় বেগম মুজিব নিজে অসুস্থ থাকা অবস্থায়ও স্বামীকে দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকায় যেতে বারণ করেননি। সেই সময় বেগম মুজিব স্বামীকে চিঠিতে লিখেছেন ‘আপনি শুধু আমার স্বামী হবার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্য জন্ম নিয়েছেন। দেশের কাজই আপনার সবচাইতে বড় কাজ। আপনি নিশ্চিন্তমনে সেই কাজে যান। আমার জন্য চিন্তা করবেন না। আল্লাহর উপর আমার ভার ছেড়ে দিন।’
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় বেগম মুজিব পুলিশ ও গোয়েন্দা চক্ষুর আড়ালে সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। সংগঠনের অবস্থা অবহিত করা এবং বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়ে এসে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে তা হুবহু পৌঁছানোর অসাধারণ স্মরণ শক্তির অধিকারী ছিলেন বেগম মুজিব। বেগম মুজিবের দুইটি সিদ্ধান্ত বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছিল, প্রথমটি হচ্ছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে পাক সামরিক সরকার আটকে রেখেছিল। বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে, তখন বেগম মুজিব মামলার আরও ৩৩ জন আসামিকে রেখে বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে রাজি না হতে বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দেন। কারাবন্দিদের মুক্তির জন্য ৭ জুনের হরতালও সফল হয়েছিল বেগম মুজিবের প্রচেষ্টায়।
আরও পড়ুন: ঘুমাতে না দিলে মামলা হয় যে দেশে
বেগম মুজিবের আরেকটি সিদ্ধান্তকে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আগে বঙ্গবন্ধু তার দলের সদস্যদেরও কাছ থেকে কী বলবেন এবং কী বলবেন না সে সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ ও মতামত পেয়েছিলেন। এগুলো তার মনে একধরনের বিভ্রান্তি ও চাপ সৃষ্টি করেছিল। তবে বেগম মুজিব তাকে অন্য কারও চেয়ে বেশি বুঝতেন, তাই স্বামীকে স্নেহ দিয়ে বলেছিলেন: ‘আপনার মনে যা আছে তাই বলুন। আপনার কথা হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। আপনি যা বলতে চান, নিজের মন থেকে বলুন।’ যা কার্যত ইড ডি আই বা বিচ্ছিন্নতাবাদের অভিযোগকে এড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার জন্য একটি জাদু হিসেবে কাজ করেছিল। এমনটি না করলে অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশকে সাম্প্রতিক কালের কাতালোনিয়ার ভাগ্য বরণ করার সম্ভাবনা ছিল।
স্বামী-সংসার ভালোভাবে আগলে রেখেও এই বাঙালি নারী শোষিত-নিপীড়িত জনসাধারণকে মুক্তির চেতনায় জাগিয়ে তোলার সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পাশে থাকা সহযোদ্ধা হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন বেগম মুজিব। বঙ্গমাতা তার বুদ্ধি, দূরদর্শিতা এবং রাজনীতি সম্পর্কে বাস্তবচিত মূল্যায়ন এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের কারণে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ রেহানা স্মৃতিচারণ করেছেন, “তিনি বাবাকে শত দুঃখ-কষ্টেব মধ্যে অনুপ্রাণিত করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়ে মার ইতিবাচক সমর্থন ছিল।” (“আমার মা ফজিলাতুন্নেছা”, শেখ রেহানা, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মারক গ্রন্থ, সম্পাদনায় ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, বৈশাখী প্রকাশনী, ১৯৯৮,পৃ-২৪”)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষায় “জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাশে ছিলেন। যখন ঘাতকরা আমার বাবাকে হত্যা করল, তিনি তো বাঁচার আকুতি করেননি। তিনি বলেছেন, “ওনাকে যখন মেরে ফেলেছ আমাকেও মেরে ফেল।” এভাবে নিজের জীবনটা উনি দিয়ে গেছেন। সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন” (“আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব”, শেখ হাসিনা, ৮ আগস্ট, ২০১৬, ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মা‘কে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ )
লেখক: অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
কেএসকে/জেআইএম