দেশজুড়ে

ছোট্ট কথার জীবন বাঁচাতে প্রয়োজন ৩০ লাখ টাকা

মাত্র ১১ বছরের শিশু কথা। স্থানীয় একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। চার কিংবা পাঁচ বছর বয়স থেকেই তার আঁকাআঁকির শখ। বেশ ভালো ছবি আঁকে সে। স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকবার পুরস্কারও পেয়েছে। বড় হয়ে তার চিত্রশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন। স্বপ্নপূরণে সঙ্গী হওয়ার কথাও দিয়েছেন বাবা-মা। কিন্তু কথার স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরল এক রোগ।

Advertisement

অ্যাপলাস্টিক অ্যানিমিয়া নামে এক বিরল রোগ বাসা বেঁধেছে ছোট্ট কথার শরীরে। এই রোগের কারণে শিশু কথার রক্ত উৎপাদন হয় না। যা তাকে দাঁড় করিয়েছে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বিরল এই রোগের চিকিৎসার খরচ বহন করা তার বাবা-মায়ের সাধ্যের বাইরে।

কথাকে নিয়ে বাবা আব্দুর রহিম ও মা হনুফা বেগমের স্বপ্ন অনেক বড়। তাদের তিন মেয়ের মধ্যে কথা সবার ছোট। সে ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

টাকার অভাবে কথার সুচিকিৎসা করাতে পারছেন না বাবা-মা। বিরল এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েই দিনযাপন করতে হচ্ছে শিশু কথাকে। এই অবস্থায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা হলে তাকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হবে। অন্যথায় এই অল্প বয়সেই একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটবে।

Advertisement

জানা যায়, কথার বাবা মো. আব্দুর রহিম একটি বেসরকারি কোম্পানির অধীনে সয়েল টেস্টের কাজ করেন। এই কাজ করে যা পান সেটা দিয়েই তাদের কোনো রকমে সংসার চলে। কথার বোনেরা সবাই শিক্ষার্থী। কথার বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়া বাঁচার কোনো উপায় নেই। দিনকে দিন তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় অতি দ্রুতই বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করাতে বলছেন ডাক্তাররা। কিন্তু এত দ্রুত এই বিশাল পরিমাণ টাকা জোগাড় করা কথার পরিবারের দ্বারা সম্ভব না।

কথার বাবা আব্দুর রহিম বলেন, গত ২১ মে ডেঙ্গু সন্দেহে কথাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালের পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়েনি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পরীক্ষা করালে তার অ্যাপলাস্টিক অ্যানিমিয়া রোগ ধরা পড়ে। এরইমধ্যে তাকে সুস্থ করে তুলতে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। চিকিৎসা চলমান রাখতে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ডাক্তাররা বলছেন অ্যাপলাস্টিক অ্যানিমিয়ার শেষ পর্যায়ে রয়েছে আমার মেয়ে। এই মুহূর্তে তার চিকিৎসা না করাতে পারলে তাকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে যাবে। বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে এই অবস্থায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এই বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার প্রয়োজন। এই টাকা জোগাড় করতে হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগিতা ছাড়া আমার কাছে কোনো উপায় নেই।

কথার মা হনুফা বলেন, আমার তিন মেয়ের মধ্যে কথা সবার ছোটো। ছোট থেকেই সে ছবি আঁকতো। ভালো ভালো ছবি আঁকে। স্বপ্ন ছিল তাকে চিত্রশিল্পী বানাবো। কিন্তু সেই স্বপ্ন মনে হচ্ছে বাস্তবে রূপ নেবে না। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাতো দূরের কথা টাকার অভাবে আমার মেয়ের চিকিৎসা করানোটাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি সমাজের বিত্তবান লোকজন এগিয়ে আসেন তাহলে হয়তো আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হবে।

Advertisement

ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কথা যেহেতু আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে আলোচনা করবো। কথার জন্য কিছু করা যায় কিনা আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করবো।

ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. ছিদ্দিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলবো। আশা করি সকলে মিলে চেষ্টা করলে কথা সুস্থ হয়ে আবারো আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিফাত ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, আসলে আমাদের কাছে ওই রকম কোনো ফান্ড থাকে না। যার কারণে ইচ্ছা থাকলেও সহযোগিতা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারপরও আমরা চেষ্টা করে দেখবো কিছু করা যায় কিনা।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/এফএ/এএসএম