চলে এসেছে বর্ষাকাল। এ সময় প্রকৃতি সুন্দরভাবে সেজে উঠলেও, শারীরিক অসুস্থতায় কাবু হন কমবেশি সবাই। বর্ষা মৌসুমে বেড়ে যায় অনেক রোগের প্রকোপ। যখন-তখন বৃষ্টির হওয়ার কারণে বর্ষাকালে আবহাওয়া সব সময় আর্দ্র থাকে।
Advertisement
এ কারণে বর্ষাকালে বায়ুবাহিত, জলবাহিত ও মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই বর্ষা মৌসুমে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সবারই যত্নবান হতে হবে। জেনে নিন বর্ষায় কোন রোগগুলো থেকে সাবধান থাকবেন-
আরও পড়ুন: মশা তাড়ানোর ওষুধ তৈরি করুন ঘরেই
মশাবাহিত রোগ
Advertisement
মশার প্রজনন মৌসুম হলো বর্ষাকাল। বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুতে ৩৪ শতাংশ ও ম্যালেরিয়ায় ১১ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয় বর্ষা মৌসুমে। আরও যেসব মশাবাহিত রোগ হয় এ সময়-
ম্যালেরিয়া
প্লাজমোডিয়াম নামে এককোষী পরজীবীর কারণে ম্যালেরিয়া হয়। বর্ষায় ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ম্যালেরিয়ার কারণে বেশ কয়েক দিন ধরে উচ্চতর জ্বর থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়া মারাত্মক হতে পারে।
ডেঙ্গু
Advertisement
এডিস ইজিপ্টি মশার কারণে ডেঙ্গু হয়। যা বর্ষাকালে- বালতি, ড্রামস, কূপ, গাছের গর্তও ফুলের মধ্যে প্রজনন ঘটায়। এই মশা কামড়ানোর ৪-৭ দিন পরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন রোগী। এর প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর ও অবসাদ অন্তর্ভুক্ত।
আরও পড়ুন: ধূমপান না করলেও হতে পারে ফুসফুসের ক্যানসার, জানুন লক্ষণ
চিকুনগুনিয়া
বিগত কয়েক বছরে বর্ষায় চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। এইডস অ্যালবপিকটাস মশা দ্বারা সৃষ্ট এই রোগ। বর্ষার ভাইরাল রোগ হলো চিকুনগুনিয়া। এই মশার প্রজাতি স্থির পানিতে বংশবৃদ্ধি করে এবং কেবল রাতে নয়, দিনেও আপনাকে কামড়াতে পারে।
মশাজনিত রোগ থেকে নিরাপদ থাকবেন যেভাবে-
>> আপনার বাড়িতে মশারি বা জাল ব্যবহার করুন।>> বাড়ির আশপাশে বা বাড়ির কোথাও পানি জমে থাকতে দেবেন না।>> সঠিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন ও নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করুন।>> বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ও ভেতরে থাকাকালীন মশার রেপেলেন্ট/ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুন: বুক ধড়ফড় করা প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ নয় তো?
পানিবাহিত রোগ
বর্ষা মৌসুমে জলবাহিত রোগের প্রকোপও অন্য সময়ের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশুরা পানিবাহিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
টাইফয়েড
এস টাইফি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট টাইফয়েড একটি জলবাহিত রোগ। যা দূষিত স্যানিটেশনের কারণে ছড়িয়ে পড়ে। খোলা বা নষ্ট হওয়া খাবার খাওয়া বা দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে টাইফয়েডের প্রধান দু’টি কারণ। টাইফয়েডের লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে- মাথা ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, জ্বর ও গলা ব্যথা।
আরও পড়ুন: ক্যানসারে আক্রান্ত কি না বুঝে নিন মুখ দেখেই
কলেরা
দুর্বল স্যানিটেশন এবং দূষিত খাবারের কারণে কলেরা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
জন্ডিস
খারাপ স্যানিটেশন, দূষিত পানি এবং খাবারের কারণে জন্ডিস হতে পারে। এটি লিভারের কর্মহীনতার কারণ হয়ে থাকে। জন্ডিস হলে দুর্বলতা, অবসন্নতা, হলুদ প্রস্রাব, বমি বমি ভাব এবং চোখের মতো লক্ষণ থাকতে পারে।
হেপাটাইটিস এ
এটি একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা দূষিত খাবার এবং পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ফুলে উঠতে পারে। হেপাটাইটিসের লক্ষণগুলোর মধ্যে ক্লান্তি, জ্বর, হলুদ চোখ, পেটে ব্যথা, গাঢ় রঙের প্রস্রাব ও হঠাৎ ক্ষুধা কমে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু সম্পর্কিত যে ভুল তথ্য এড়িয়ে যাবে
পানিজনিত রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায়-
>> খাওয়ার আগে ফল ও সবজি ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।>> খাবার ঢেকে রাখুন।>> বাইরের খাবার গ্রহণ করবেন না।>> ব্যক্তিগত ও পরিবেশগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন। আপনার হাত প্রায়শই ধুয়ে স্যানিটাইজ করুন।>> আশেপাশের খালি ড্রেন ও গর্ত বন্ধ করুন।>> আপনার বাচ্চাদের সময়মতো টিকা দিন
বায়ুজনিত রোগ
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে, বর্ষায় শিশুদের এবং বয়স্কদের বায়ু-বাহিত সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। দু’টি সাধারণ ধরণের বায়ুবাহিত রোগ হলো-
আরও পড়ুন: শরীরের যে স্থানে জমে থাকে ৬৭ ধরনের ব্যাকটেরিয়া
ঠান্ডা ও সর্দি
বর্ষায় সর্বাধিক সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণ হলো সর্দি-কাশি। বর্ষাকালে তাপমাত্রায় হঠাৎ করে ওঠা-নামার কারণে এটি ঘটে। দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে ফ্লুতে বেশিরভাগ মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
এর ফলে নাক দিয়ে সর্দি পড়া, গলা ব্যথা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, জ্বর, কাশিসহ নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
জেএমএস/জেআইএম