দেশজুড়ে

এখনো খোঁজ মেলেনি ভাইবোনসহ নিখোঁজ ৩ শিশুর

মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মার শাখা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া ট্রলার উদ্ধার হলেও এখনো সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ তিন শিশুর। তারা হলো খিদিরপুর গ্রামের রুবেল হোসেনের ছেলে মাহির (৫) এবং কয়রাখোলা গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী আরিফ খানের ছেলে তোরান (৭) ও মেয়ে নাবা (৪)।

Advertisement

উদ্ধার অভিযানের দ্বিতীয় দিন রোববার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করেও তাদের খোঁজ মেলেনি বলে জানিয়েছে নৌপুলিশ।

সরজমিনে দুর্ঘটনাস্থল রসকাটি এলাকায় দেখা যায়, নদীতে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের সদস্যরা। তীরে স্থানীয় ও স্বজনদের ভিড়। বেলা ১১টার দিকে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী ক্রেন জাহাজের মাধ্যমে নদী থেকে টেনে তোলা হয় স্টিলের তৈরি ট্রলারটিকে। এসময় বেশ কয়েকটি মোবাইল, সোনার চেইন পাওয়া গেলও নিখোঁজ শিশুদের পাওয়া যায়নি।

উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ওবায়দুল করিম জানান, বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ডুবে যাওয়া ট্রলারটিকে উদ্ধার করা হয়। ট্রলারটি উদ্ধারের পর সেটিতে সার্চ করে ছয়টি মোবাইল, একটি সোনার চেইন ও দুটি ভ্যানিটি ব্যাগ পাওয়া গেছে। তবে ট্রলারটিতে কোনো মরদেহ ছিল না।

Advertisement

তারা আরও বলেন, নদীতে স্রোত রয়েছে। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে, যে তিন শিশু ডুবে গেছে তারা বেশি দূরে চলে গিয়েছে। এজন্য নদীর ভাটির কয়েক কিলোমিটার এলাকায় খুঁজে দেখা হবে।

শোকের মাতম, মামলা, তদন্ত কমিটি

এদিকে দুর্ঘটনার পর উদ্ধার নিহত সাতজনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তারা হলেন সিরাজদিখানের খিদিরপুর এলাকার জাহাঙ্গীরের স্ত্রী এপি বেগম (২৮) এবং তার দুই ছেলে সাকিবুল (১০) ও সাজিবুল (৭), একই এলাকার ফিরোজ সরকারের ছেলে ফারিয়ান (৮), শাহাদাত হোসেনের ৫ মাসের ছেলে হুমায়রা, শাহজাহানের স্ত্রী মোকসেদা বেগম (৩৮) ও আব্দুল হাকিমের মেয়ে পপি (৩০)। তাদের সবার বাড়ি সিরাজদিখান উপজেলার খিদিরপুর এলাকায়। মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের পর স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আবুজাফর রিপন জানিয়েছেন, এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আরাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে ঘাতক বাল্কহেড মালিক, চালকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে লৌহজং থানায়।

Advertisement

লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন জানান, শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে ট্রলারডুবির ঘটনায় লৌহজং থানায় মামলা করা হয়েছে। আটক বাল্কহেডের মালিক, চালক ও হেলপারকে আসামি করে নিহত এপি আক্তার ও পপি আক্তারের ভাই রুবেল বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার তদন্তভার মাওয়া নৌপুলিশকে দেওয়া হয়েছে।

নৌপুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পুলিশ সুপার মো. আহাদুজ্জামান মিঞা জাগো নিউজকে বলেন, বাল্কহেডটি আমাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এটি মামলার আলামত হিসেবে জব্দ থাকবে।

লৌহযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বলেন, গতকাল পর্যন্ত বলা হয়েছিল পাঁচজন নিখোঁজ আছেন। তবে আজ আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি তিনজন শিশু এখন নিখোঁজ আছে। তাদের না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে।

শনিবার জেলার সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপুর থেকে ট্রলারযোগে নৌভ্রমণে বের হন স্থানীয় ৪৬ জন। পদ্মা সেতু ও আশপাশের এলাকা ঘুরে ফেরার সময় রাত ৮টার দিকে পদ্মার শাখা নদীর লৌহজং উপজেলার রসকাটি এলাকায় পৌঁছালে বাল্কহেডের ধাক্কায় ডুবে যায় ট্রলারটি।

আরাফাত রায়হান সাকিব/এসআর