ফিচার

আচরণই পরিচয় বহন করে

মো. আবু সালেহ মুসা

Advertisement

অফিস শেষে বাসে বাসায় ফিরছিলাম। ভাগ্যক্রমে একটি সিটও খালি পেয়েছিলাম, তাই সেখানেই বসে পড়ি। সিটটা ছিল সামনের দিকে, যেটাকে আমরা নারীদের জন্য নির্ধারিত সিট বলে থাকি। যাইহোক, এই অফিস ছুটির সময়টাতে বাসে সিট পাওয়া আর আকাশের চাঁদ পাওয়া কিছুটা একইরকম।

কিছুটা সামনে আগাতেই বাস পুরোটা ভরে গেল। পা রাখার অবশিষ্ট জায়গা নেই। এক আপুও ভীড় ঠেলে উঠেছেন বাসে। দাঁড়িয়েছেন ঠিক আমার সিটের পিছনে। দু'মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর একা একা বলতে শুরু করলেন-পুরুষদের কমন সেন্স বলতে কিছু নেই। একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে কারও খেয়াল নেই।

মূলত আমাকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলছিলেন। কারণ আমি তার সামনের সিটে বসে ছিলাম এবং তাও আবার কথিত নারীদের সিটেই। কিছুটা মনোযোগী হয়েই তার কথাগুলো শুনছিলাম। তার আগে বলে রাখি, আমি যে কোনো বয়সের মেয়ে, নারী এবং বৃদ্ধদের নিজ সিট ছেড়ে দিয়ে বসতে দেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: পারিবারিক শিক্ষা কি ক্ষয়িষ্ণুতার পথে? 

তবে গত কয়েকদিন একান্ত বৃদ্ধা ছাড়া কোনো মেয়ে ও নারীদের সিট ছেড়ে বসতে দিচ্ছি না। কারণ হলো-ভদ্রতা শুধু একজন পুরুষই কেন দেখাবে? ভদ্রতা সবার ক্ষেত্রে একইরকম।

আমি এমনও দেখেছি-এমন একজন বৃদ্ধালোক বাসে উঠেছেন। যিনি কি না ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছেন না। তাকে বসতে দেওয়া আমাদের কর্তব্য। পাশের সিটেই এক ভদ্রমহিলা বসে ছিলেন। তার পাশেই সেই চাচা টলতে টলতে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছেন। ভেবেছিলাম এটা দেখে ঐ আপা তাকে বসতে দিবেন।

কিন্তু না, সে তাকে বসতে তো দিলেন না, বরং তার পাশে এসে কেন দাঁড়িয়েছে এজন্য সে বেশ চড়াও হয়। রুষ্ট কণ্ঠে বারবার তাকে পেছনে যেতে বলছিলেন। ব্যাপারটা সবার কাছেই দৃষ্টি কটু লেগেছে। পরে পেছনের এক ভদ্রলোক এসে চাচাকে তার স্থানে বসায়।

Advertisement

অথচ কিছুক্ষণ আগেই সেই নারীকে ভদ্রতা দেখিয়ে এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্র বসতে দিয়েছিল। এখন আমার জানতে ইচ্ছে হয়, একজন পুরুষ যদি ভদ্রতা ও সম্মান দেখিয়ে একজন নারীকে বসতে দিতে পারেন তবে একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষের ক্ষেত্রে একজন নারী কেন ভদ্রতা দেখাতে পারবেন না?

সিটে বসে আরাম করে যেতে কে না চায়? তবুও আমরা বারবার সম্মান দেখিয়ে একজন নারীকে বসার জায়গা করে দেই। এখানে শুধু ভদ্রতাই লুকিয়ে নেই, তার নিরাপত্তার দিকও খেয়াল করা হয়। কেননা অনেক ভদ্রবেশী মানুষই বাসে দাঁড়িয়ে থাকা নারীদের যৌন হয়রানি করে থাকে।

কিন্তু এই ঘটনার পর তাদের উপর থেকে অনেকটা আস্থা উঠে যায়। তবে সব পুরুষ যেমন ভালো নয়, তেমন সব নারীও কিন্তু খারাপ নয়। ভালো-মন্দের মিশ্রণেই মানুষ। কিন্তু তার ঐ আচরণ আমাকে ব্যথিত করেছে। যার কারণে কিছুটা ক্ষোভ নিয়েই আজ সিটে বসেছিলাম।

যদিও বারবার ঐ আপুর বিষয়টি আমাকে নাড়া দিচ্ছিল। ইচ্ছে হচ্ছিল এখনই তাকে সিট ছেড়ে দিয়ে বসতে দেই। কিন্তু ঐ জেদটা আমাকে মানবিকতার কাছে হারিয়ে দিয়েছে। ঐদিন যদি ঐ আপা বৃদ্ধলোকটির উপর দয়া করতেন তবে আমাদের এই ভদ্রতা আরেকটু উৎসাহিত হত।

আরও পড়ুন: ৭০০ ফুট উচ্চতায় দড়ির উপর হেঁটে বিশ্বরেকর্ড 

আমরা ভাবতাম যে, একজন নারী হয়ে যদি এমন কাজ করতে পারেন তবে আমরা তরুণরা কেন নয়? আসলে দিন দিন আমরা আমাদের সভ্যতা থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। আমরা শুধু আমাদের নিয়েই ভাবি। পাশের মানুষটা কেমন আছে সে খবর রাখার চিন্তা করিনা।

কিন্তু এমন চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। আমরা দেশ বাঁচাতে যেমন সবসময় প্রস্তুত থাকি, তেমনি দেশের মানুষের কথাও ভাবতে হবে। আমাদের আচরণ ও ভদ্রতায় একটু পরিবর্তন আসলেই পরিবর্তন হবে সমাজটাও।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও ফ্রিল্যান্স ফিচার রাইটার

কেএসকে/জিকেএস