নেই পানির লাইন, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। কোটি টাকায় নির্মিত ব্রিজও হয়ে আছে গলার কাঁটা। কেউ অসুস্থ হলে জরুরিভাবে হাসপাতালে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি এলাকায় কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ঢুকতে পারে না। এমনই অবস্থা কুড়িগ্রাম পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভেলাকোপা এলাকার।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার ভেলাকোপা গ্রামের এক কিলোমিটারজুড়ে রাস্তায় রয়েছে চারটি বাঁশের সাঁকো ও একটি ভাঙা ব্রিজ। ২০১৭ সাল থেকে সাঁকোগুলো স্থানীয়রা বাঁশ-কাঠ দিয়ে মেরামত করে আসছে। তবে সাঁকোগুলোর জায়গায় ব্রিজ বা কালভার্ট তৈরির কোনো ব্যবস্থা করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, কোটি টাকায় নির্মিত একটি ব্রিজেও কাঠের পাঠাতন বেয়ে উঠতে হয়।
এই পৌর ওয়ার্ডের আশপাশের প্রায় ২০ হাজার মানুষের একমাত্র চলার পথ হানাগড়ের রাস্তাটির বেহাল দশা। শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ নানা পেশার লোকজনের দৈনন্দিন যাতায়াতে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। ভাঙা ব্রিজ পার হতে না পারায় মালবাহী ট্রাক, অটোরিকশা, ভ্যান থামিয়ে বাড়তি খরচে মালামাল পার করে নিয়ে যেতে হয়।
রোগীদের কাঁধে-কোলে নিয়ে সাঁকো পার হতে হয়। সাঁকোগুলোর নড়বড়ে অবস্থায় প্রতিদিনই ঘটে দুর্ঘটনা। এ অবস্থায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে বাসিন্দাদের দাবি, দুর্ঘটনা আর ভোগান্তি নিড়সনে বাঁশের সাঁকোর জায়গায় ব্রিজ নির্মাণ এবং ভাঙা ব্রিজের মেরামত কাজ যেন দ্রুত করা হয়।
Advertisement
ভেলাকোপা এলাকার বাসিন্দা মো. আহম্মদ হোসেন বলেন, পৌর শহরের বাসিন্দা হয়েও আমাদের থাকতে হয় চরাঞ্চলের মানুষদের মতো। ট্যাক্স তো ঠিকই দিচ্ছি, কিন্তু আমাদের কোনো কাজ হচ্ছে না। এ জনপদের কোনো উন্নয়ন নেই। পৌরসভা এলাকা নয়, এটা ভাঙা ব্রিজের গ্রাম। পৌর চেয়ারম্যান, কমিশনাররা ভোটের সময় আসে, ভোট চায়, ভোট দিই। নির্বাচিত হলে আর আমাদের কথা মনে থাকে না।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, আমরা এখানকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ খুব দুর্ভোগে আছি। পৌর শহরের বাসিন্দা হয়েও কোনো সুযোগ-সুবিধা পাই না। আমাদের এলাকার রাস্তার চেয়ে চরাঞ্চলের রাস্তা অনেক ভালো। ভেলাকোপার মানুষের ভোগান্তি সারাবছর।
আরেক বাসিন্দা মতিয়ার রহমান বলেন, দীর্ঘ ছয়-সাত বছর ধরে রাস্তার এমন বেহাল দশায় মানুষ যাতায়াত করছে। পৌর মেয়রের এ রাস্তার সাঁকো নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। ভোট আসলে ভোট চায়। রাস্তাঘাট ঠিক করার কথা বলে কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর আর খোঁজ নেয় না।
গৃহবধূ আলেয়া বেগম বলেন, পৌরসভায় বসবাস করে শুধুমাত্র রাস্তাঘাটের জন্য পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে। যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় এখানকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। নড়বড়ে সাঁকো পার হতে ভয় লাগে। প্রতিদিন একটা না একটা দুর্ঘটনা ঘটে। সরকারের কাছে অনুরোধ পৌরসভার এই ৬ নম্বর ওয়ার্ডের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো করুক। আমাদের দুর্ভোগ-ভোগান্তি দূর হোক।
Advertisement
কুড়িগ্রাম পৌরমেয়র মো. কাজিউল ইসলাম বলেন, ভেলাকোপার ওই রাস্তাটির কয়েকটি অংশ বন্যায় ভেঙে যায়। সেইসঙ্গে সেখানকার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মিত একটি ব্রিজ মাটি ধসে সংযোগ সড়ক বিছিন্ন হয়। আমরা সাঁকোগুলো বাঁশ-কাঠ দিয়ে মেরামত করছি। আর ব্রিজটির বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব।
কুড়িগ্রাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ভেলাকোপা ব্রিজটি বন্যার কারণে মাটি ধসে সংযোগ বিছিন্ন হয়। পরে সাময়িক বাঁশ-কাঠ দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্রিজের কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।
ফজলুল করিম ফারাজী/এমআরআর/এমএস