বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চিরভাস্বর যে নাম, সেটি শেখ কামাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠপুত্র শহীদ শেখ কামালের ৭৪তম জন্মদিন আজ। জাতির পিতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় এবং জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল ১৯৪৯ সালের এই দিনে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
Advertisement
শেখ কামালের জন্মের সময় বাংলার মানুষের মুক্তির আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য পরিবারের কাছে থাকতে পারেনি বঙ্গবন্ধু। ছোটবেলা থেকেই পিতার সান্নিধ্য পেয়েছেন খুবই কম। তারপরও পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে নিজেকে নিয়োগ করেছেন দেশের মানুষের জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুত্র হয়েও বেছে নিয়েছিলেন সাধারণ জীবন-যাপন।
১৯৫৬ সালে সেগুনবাগিচার ডান্স কিন্ডারগার্টেন স্কুলে কেজি ওয়ানে ভর্তির মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের। এরপর পঞ্চম শ্রেণিতে চলে আসেন বিএএফ শাহীন স্কুলে। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাস করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ঢাকা কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানে বিএ অনার্সে ভর্তি হন এবং মাস্টার্সের পরীক্ষার্থী থাকাবস্থায় ১৫ আগস্ট রাতে ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে নিহত হন।
শহীদ শেখ কামাল ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১১দফা আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর থেকে চৌকস ও মেধাবী হিসেবে ৬১জন জেন্টলম্যান ক্যাডেট নির্বাচিত করা হয়। শেখ কামাল ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
Advertisement
দেশ স্বাধীনের পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে অসাম্প্রদায়িক বার্তা ছড়িয়ে দিতে দেশব্যাপী শুরু করেন সাংস্কৃতিক যুদ্ধ। সমাজে সাংস্কৃতিক আবহ গড়ে তোলার জন্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও সংগঠন গড়ে তোলেন। মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামাল স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মঞ্চনাটকের পাশাপাশি শিল্পী বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘স্পন্দন’ শিল্পীগোষ্ঠী। এছাড়া তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
এছাড়া যুব সমাজকে সুস্থ-সবল মনের পাশাপাশি শারীরিক গঠন ও অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ‘আবাহনী ক্রীড়াচক্র’ তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অন্যতম ফুটবল ক্লাব। মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম ক্রীড়া সংগঠক এবং বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক। জাতির এই সূর্যসন্তান আমৃত্যু দেশের নান্দনিক ফুটবলসহ অন্যান্য খেলার মান্নোয়নে যে অবদান রেখেছেন তা লাল-সবুজের এই স্বাধীন বাংলাদেশ যতদিন রয়েছে ততদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে দেশবাসী। তিনি ফুটবলের প্রশিক্ষণের জন্য প্রথম বিদেশী কোচ এনেছিলেন।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলার একজন দক্ষ সংগঠকের বাইরেও ছিলেন একজন দক্ষ রাজনৈতিক কর্মী ও সংগঠক। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শেখ কামাল ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’ খ্যাতিপ্রাপ্ত দেশসেরা অ্যাথলেট সুলতানা খুকুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে শাহাদতবরণ করেন শেখ কামাল। মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালকে হত্যা করে শুধু একটি পরিবারকে ধ্বংস করা হয়নি, ধ্বংস করা হয়েছে স্বাধীন বাংলার সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনকে। দেশের ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এমন একজন শেখ কামালের প্রয়োজনীয়তা আজও অনুভূত হয়। জাতির এ অপূরণীয় ক্ষত এখনও শুকায়নি, যা হয়তো কখনও সম্ভব নয়। স্বপ্নচারী শহীদ শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকীতে রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।
Advertisement
লেখক: প্রতিবেদক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)।
এইচআর/এমএস