দেশজুড়ে

দুইদিনে বৈকালিক সেবা নিয়েছেন মাত্র দুই রোগী

রাজশাহীতে চালু হওয়া বৈকালিক চিকিৎসাসেবার সুফল মিলছে না। প্রথমদিকে কিছু রোগী হলেও এখন রোগীশূন্য বসে থাকছেন চিকিৎসকরা। আবার রোগী না থাকায় কোনো কোনো চিকিৎসক সময়মতো আসেনও না।

Advertisement

এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, একই সেবা সকালে কম টাকায় মেলায় বিকেলে রোগীরা বেশি টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখাতে চান না। তাই বৈকালিক সেবায় রোগী মিলছে না।

রাজশাহীর পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যমতে, এই হাসপাতালে প্রতিদিন সকালে আউটডোরে দুই টাকার টিকিট কেটে রোগী দেখান অন্তত ৭০০ জন। সেখানে বৈকালিক সেবায় রোগী নেই বললেই চলে। এপ্রিল মাসে এখানে প্রথম বৈকালিক সেবা চালু করা হয়। সেই মাসে রোগী হয়েছে মাত্র ৭২ জন। মে মাসে রোগী হয় ৯৪ জন। জুন মাসে চিকিৎসা নেন ৮৮ জন। জুলাই মাসে বৈকালিক সেবা দেওয়া হয় ৭৬ জনকে। কিন্তু আগস্ট মাসের গত দুইদিনে চিকিৎসা নিয়েছেন মাত্র দুইজন।

আরও পড়ুন: বৈকালিক সেবা শুরুর এক ঘণ্টা পরও দেখা মেলে না চিকিৎসকদের

Advertisement

বুধবার (২ আগস্ট) সরেজমিন গিয়ে কথা বলে জানা গেলো, জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর মধ্যে পবায় সর্বপ্রথম বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়। প্রথমদিকে এখানে রোগীদের কিছুটা চাপ থাকলেও বর্তমানে তা শূন্যের কোটায়। নামমাত্র এক-দুইজন রোগী জোটে বৈকালিক চিকিৎসকদের।

বুধবার এই হাসপাতালে চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন মেডিকেল অফিসার ডা. খাদিজা খাতুন ও জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আনারুল হক। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আনারুল হককে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। তিনি চলে গেছেন বাড়িতে। টিভি ছেড়ে একটি চেয়ারে শুয়ে আছেন কম্পাউন্ডার। তিনি জানেনই না আনারুল হক হাসপাতালে নেই।

ফোনে যোগাযোগ করা হলে আনারুল হক বলেন, আমার তো কোনো রোগীই নেই। তাই চলে এসেছি। রোগী আসলে হাসপাতালে যাবো।

মেডিকেল অফিসার ডা. খাদিজা খাতুন বলেন, সারাদিন রোগী দেখছি। সকালে বেশি রোগী হচ্ছে কিন্তু বিকেলে রোগী নেই। আজ বিকেলে মাত্র একজন রোগী দেখেছি। আমরা বসে থেকে নির্ধারিত ডিউটি শেষ করে চলে যাচ্ছি।

Advertisement

আরও পড়ুন: বৈকালিক সেবায় রোগী নেই, দেখা গেলো মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ

তিনি বলেন, মূলত মানুষ এইটার বিষয়ে আগ্রহী নয়। কারণ, একই চিকিৎসক সকালে দুই টাকায় দেখছে, বিকেলে দেখছে ২০০ টাকায়। এছাড়া সকালে দুই টাকায় ওষুধও পাচ্ছে কিন্তু বিকেলে বেশি ফি দিয়ে দেখিয়েও ওষুধ মিলছে না। মূলত এই কারণেই বৈকালিক রোগী হচ্ছে না।

পবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাবেয়া বসরী বলেন, আমরা আমাদের মতো চেষ্টা ও কষ্ট করে যাচ্ছি। কিন্তু মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা চলে আসছে। অনেকেই সকালে কম খরচে রোগী দেখাতে চাচ্ছে, বিকেলে আর আসছে না। বেশি টাকার জন্য মানুষ সরে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমার চিকিৎসকদের একজন একটু কাজে আজকে বাইরে যেতে পারেন। আমাকে বলে গেছেন। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। রোগীই আসে না। মূলত সকালেই রোগীর চাপ হচ্ছে, বিকেলে রোগী পাওয়া যাচ্ছে না। এক-দুইজন রোগী হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মো. ফারুক বলেন, আমাদের প্রচার-প্রচারণা আরও একটু ভালোভাবে চালাতে হবে। শুরুতে এটি ভালোই ছিল। আমার রাজশাহীর তিনটি উপজেলায় বৈকালিক সেবা চালু করেছি। আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে এটি আরও বাড়ানো যায়।

আরও পড়ুন: সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক সেবা: প্রচারণার অভাবে সাড়া নেই

তিনি বলেন, আগামী মাসে আমরা সব হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে বসবো। তখন বুঝতে পারবো কেন রোগী কমছে। তবে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার যা যা সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় এখানেও সেগুলো দেওয়া হবে। ওষুধের বিষয়ে নির্দেশনা এখনো দেওয়া হয়নি। তাই এটির ব্যবস্থা করতে পারছি না। বৈকালিক সেবা জনপ্রিয় করতে আমরা চেষ্টা করছি।

এমআরআর/জেআইএম