আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বাড়ছেই

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনি ঝামেলা দিন দিন যত বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন তার জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে তিনি এখন সবচেয়ে জনপ্রিয়। অন্য সব মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চেয়ে তিনি অনেক এগিয়ে। বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হবার পর যেন তার অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে। জনপ্রিয়তা কমার বদলে তা আরও বাড়ছে। খবর বিবিসির। 

Advertisement

সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট গত চার মাসে তিনটি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন। নিউইয়র্কে একটি অর্থ সংক্রান্ত অপরাধ, ফেডারেল আদালতের গোপনীয় দলিলপত্র নিজের কাছে রাখা এবং এর তদন্তে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। এছাড়া মঙ্গলবার রাতে তিনি ফেডারেল কোর্টে অভিযুক্ত হয়েছেন আরেকটি মামলায়। এতে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তিনি ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

আরও পড়ুন: নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা, ফের অভিযুক্ত ট্রাম্প

ট্রাম্প আরও একটি মামলায় অভিযুক্ত হতে পারেন। সেটি হলো জর্জিয়ায়। এখানে অভিযাগ, ২০২০ সালের নির্বাচনে তার পরাজয়কে উল্টে দিতে তিনি রাজ্য কর্মকর্তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। এত কিছুর ভেতর দিয়েও কিন্তু ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযান থামেনি। বরং তাতে আরো গতিসঞ্চার হয়েছে।

Advertisement

গত ৩১ জুলাই একাধিক জনমত জরিপের এক গড় থেকে দেখা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব জরিপে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিসের চেয়ে ৩৭ পয়েন্টের বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবার জন্য ১৪ জন লড়াই করছেন। কিন্তু তাদের কারো পক্ষেই ৬ শতাংশ জনসমর্থনও নেই।

এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী এক শতাংশ সমর্থনও পাননি। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়েও এই চিত্রটা ছিল ভিন্ন। তখন ট্রাম্প ও ডেসান্টিসের মধ্যে জনসমর্থনের পার্থক্য ছিল মাত্র দুই শতাংশ (যথাক্রমে ৪১ শতাংশ এবং ৩৯ শতাংশ)।

কিন্তু তারপর থেকে ফ্লোরিডার গভর্নরের সমর্থন ক্রমাগত নিচের দিকে নেমেছে। ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন এখনো পাথরের মতো শক্ত। এতটুক আঁচড় লাগেনি তাতে। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে ট্রাম্প যখন প্রথমবারের মতো অভিযুক্ত হলেন, তারপর থেকে বস্তুত তার পক্ষে সমর্থন বেড়েছে। যদিও ট্রাম্পই হলেন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়া প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

প্রথমবার গ্রেফতার হওয়া ও আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর থেকে ট্রাম্পই পরিণত হয়েছেন রিপাবলিকান ভোটারদের প্রথম পছন্দে। তার বিরুদ্ধে এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা মনে করেন রিপাবলিকান ভোটাররা।

Advertisement

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের মধ্যে যে একাত্মতাবোধ তা ভাঙা কঠিন হবে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে ইপসসের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ক্লিফোর্ড ইয়ং। রিপাবলিকান ভোটারদের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশই ট্রাম্প সমর্থক এবং ইয়ং বলছেন, তারা ট্রাম্পের চোখ দিয়েই দুনিয়াকে দেখে।

আরও পড়ুন: অনুপ্রবেশ করা মার্কিন সেনার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে উত্তর কোরিয়া

তাদের বিশ্বাস ট্রাম্পের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গোপন দলিলপত্র নিজের কাছে রাখার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে মামলা তা নিয়ে বিবিসি কিছু রিপাবলিকান ভোটারের সাথে কথা বলেছে এবং একই রকম মতামত পেয়েছে।

আরিজোনার ৬১ বছর বয়সী ট্রাম্প সমর্থক রন সোলেন বলেন, এটা হচ্ছে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে না দেওয়ার এক নির্লজ্জ চেষ্টা। বাইডেনসহ অন্যরাও তাদের কাছে গোপন দলিলপত্র রেখেছেন বলে ধরা পড়েছে। সেদিক থেকে দেখলে এটা আমাদের দেশের জন্য একটা দুঃখের দিন।

এমনকি লুক গর্ডনের মত ট্রাম্প সমর্থক নন এমন রিপাবলিকানও এসব অভিযোগকে সন্দেহের চোখে দেখছেন।তিনি বলেন, এ ধরনের দাবির বৈধতা নিয়ে সন্দেহ করছেন না বা ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন না। কিন্তু এসব মামলা-তদন্তের পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে বলে তার ধারণা।

সিবিএস নিউজের জুন মাসের এক জনমত জরিপে দেখা যায়- রিপাবলিকানদের ভোট দিতে পারেন এমন ৭৬ শতাংশ ভোটার বলছেন, গোপন দলিলপত্রের মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই ভোটারদের ৩৮ শতাংশ মনে করেন ট্রাম্প মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পারমাণবিক বা সামরিক দলিলপত্র রেখে দিলে তা জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হতে পারে। আর দলীয় বৃত্তের বাইরে মার্কিন জনগণের মধ্যে এমন ধারণা পোষণ করেন ৮০ শতাংশ লোক।

রিপাবলিকান ভোটারদের ৬১ শতাংশ বলছেন, ট্রাম্প অভিযুক্ত হওয়ার পরও তার ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলায়নি। ১৪ শতাংশ বলেছেন, তারা এখন ট্রাম্পকে আরো বেশি ইতিবাচকভাবে দেখছেন।

আসলে এটা হচ্ছে যেন দুটি আমেরিকা বা দুটি জগৎ। একদল ট্রাম্পের আচরণকে আইনবহির্ভূত মনে করছেন, আরেক দল ট্রাম্পকে তাদেরই প্রতিনিধি মনে করেন এবং তাদের মতে ঠিক এ কারণেই তার ওপর এত আক্রমণ হচ্ছে।

ট্রাম্প তৃতীয় বা চতুর্থ মামলায় অভিযুক্ত হলেও রিপাবলিকান প্রার্থিতার প্রতিযোগিতায় তেমন কোন প্রভাব পড়বে বলে এখনো মনে হচ্ছে না। মার্চ মাসে সিএনএনএর এক জরিপে দেখা যায়, রিপাবলিকানদের মধ্যে ৮৪ শতাংশই মনে করেন যে, জো বাইডেন আইনসিদ্ধভাবে ২০২০ সালের নির্বাচন জেতেননি। তাই ওই নির্বাচনের ফল চ্যালেঞ্জ করার অভিযোগ রিপাবলিকানদের মধ্যে তেমন কোন আলোড়ন সৃষ্টি করবে না।

এটা ট্রাম্পের রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য গুরুতর সমস্যার কারণ। ওই প্রার্থীরা এসব মামলার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করতেও চাইছেন না। তারা সচেতন যে, এতে তাদের নিজেদের সমর্থকরা বিগড়ে যেতে পারে। আবার একারণেই কেন ভোটাররা ট্রাম্পের পরিবর্তে অন্যদের বেছে নেবেন সে যুক্তি তুলে ধরতেও সমস্যায় পড়ছেন তারা।

আগামী বছর হয়তো এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে যে, এসব মামলার বিচার ও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনার ফলে রিপাবলিকান পার্টির ভেতরে ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থনে কোনো পরিবর্তন হয় কি না। ২০১৪ সালের প্রথমার্ধে ট্রাম্পকে একদিকে প্রচারাভিযানের সময়সূচি এবং আরেকদিকে আদালতে হাজিরা দেওয়া এই দুটি দিকই সামাল দিতে হবে।

আরও পড়ুন: মুক্তির ৪ মাস আগে জেল পলায়ন, ফের মিললো ৪০ বছরের সাজা

এদিকে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দোষী সাব্যস্ত হলেও বা দণ্ডিত হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে সরে দাঁড়াবেন না। এমনটা হলে মার্কিন রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হবে। ইয়ংএর মতে, তখন এটাই হবে দেখার বিষয় যে ট্রাম্পের জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা আর ইলেক্টাবিলিটি অর্থাৎ ভোট পাবার উপযুক্ত হওয়া এই দুই সূচকে কোন পরিবর্তন হয় কি না।

আপাতত যা দেখা যাচ্ছে তা হলো ট্রাম্প জনসমর্থনের দিক থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছাকাছিই আছেন। সম্প্রতি ইকোনমিস্ট-ইউগভের জরিপে দেখা যায়, বাইডেন ৪৪ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যবধানে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। আর মর্নিং কনসাল্টের আরেক জরিপে বাইডেন এগিয়ে আছেন ৪৩ শতাংশ থেকে ৪১ শতাংশ অর্থাৎ মাত্র দুই পয়েন্ট ব্যবধানে। এতে আভাস পাওয়া যায় যে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে আগের দুবারের মতোই জয়পরাজয় নির্ধারিত হবে খুব সামান্য ব্যবধানে।

টিটিএন